পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

»० রবীন্দ্র-রচনাবলী (যেন জ্বালা অতি ধীরে যেতেছে লইয়া ক্রমশ এ দেহ মোর কবরের পানে) তবে তাহা মৃত্যু, কিংবা প্রকাশি এ ব্যথা।। যখন মহিলা মোর আছিল। এখানে । আর কারে বলি নাই এ মর্মের কথা, হে রামণি তোমাদের কোমল হৃদয়ে মরমের কথা মোর ঢেলেছি কেবল । যখন গেছেন তিনি স্বরগ আলয়েরাখিয়া আমার তরে শোক-অশ্রুজােলতখন যা-কিছু মোর বলিবার আছে হে রামণি বলিব গো তোমাদেরি কাছে। তিনি তাহাদিগকে কহিলেন- বিয়াত্রিচে উচ্চতম স্বৰ্গে গিয়াছেন, সেখানে যাইতে র্তাহার কিছুমাত্র কষ্ট পাইতে হয় নাই! ঈশ্বর তাহাকে আপনি ডাকিয়া লইলেন- ঈশ্বর দেখিলেনএই যন্ত্রণাময় পৃথিবী এমন সুন্দর প্রাণীর বাসযোগ্য নহে। সংগীতটি এই বলিয়া সমাপ্ত যাও তুমি, হে করুণ সংগীত আমার, যাও সেথা যেইখানে রমণীরা আছে, আগে তুমি যেতে সেথা বহি সুখভার, কত সুখ পেতে, রহি তাহাদের কাছে! এখনো তাদেরি কাছে করো গো প্ৰয়াণ, বিষন্ন ও শূন্য তুমি শোকের সন্তান! এইরূপে প্রথম বৎসর কাটিয়া গেলে পর একবার একটি স্থান দেখিয়া সহসা তঁহার পূর্বস্মৃতি জাগ্রত হইয়া উঠিল। সেইখানে দাঁড়াইয়া তিনি অতি বিষন্ন বদনে পুরাতন কথা ভাবিতে লাগিলেন। তাহার সেই বিষাদ আর কেহ দেখিতে পাইতেছে কিনা, তাহাই দেখিবার জন্য চারি দিকে নেত্রপাত করিলেন। সহসা দেখিতে পাইলেন— একটি বাতায়ন হইতে অতি সুন্দরী এক যুবতী তাঁহাকে এমন মমতার সহিত নিরীক্ষণ করিতেছেন যে, দয়া যেন তাহার নেত্ৰে স্পষ্ট প্রতিভাত হইয়াছে। এই মমতা পাইয়া দাস্তের হৃদয় গলিয়া গেল, অশ্রু উচ্ছসিত হইয়া উঠিল। এই মমতা পাইয়া কেবল কৃতজ্ঞতা নহে, ঈষৎ প্রেমের ছায়াও র্তাহার তরুণ হৃদয়ে পতিত হইল! সেদিন চলিয়া গেলেন- কিন্তু আবার তাহাকে দেখিতে কেমন বাসনা হইল, আর-একদিন সেইখানে গেলেন- আবার তাহাকে দেখিতে পাইলেন- দেখিলেন তাহার বিয়াত্ৰিচের ন্যায় তাহার মুখ পাণ্ডুবর্ণ। পাণ্ডুবৰ্ণকে দান্তে ‘প্রেমের বর্ণ” নাম দিয়াছেন। দাস্তে কহিলেন, “আমার চক্ষু কহিলেন, ‘চক্ষু! তোর অশ্রুজল দেখিয়া কত লোকে অশ্রু ফেলিয়াছে, তুই আজ কি ভুলিয়া গেলি যে মহিলার (বিয়াত্ৰিচের) জন্য তুই রোদন করিতেছিস, সেই মহিলার কথা স্মরণ করিয়াই ওই রমণী তোর দিকে চাহিতেছেন?” কিন্তু ওই তিরস্কার বৃথা! আপনাকে ভৎসনা করিলেন। কিন্তু শোধন করিতে পারিলেন না। যেদিকে মন ধাবিত হয়, তাহার অনুকূলে কখনো যুক্তির অভাব হয় না।-- অবশেষে স্থির করিলেন- প্রেম তীহাকে শাস্তি দিবার জন্যই উক্ত মহিলাকে তঁহার চক্ষের সম্মুখে স্থাপিত করিয়াছেন— অতএব তাহার হৃদয়ের অভাব এই মমতাময়ী মহিলাই পূর্ণ করবেন। এইরূপে নূতন-প্রেম যখন তাহার হৃদয়ে বদ্ধমূল হইবার উপক্ৰম করিতেছিল, এমন সময়ে কল্পনার স্বপ্নে একদিন যেন প্রত্যক্ষ সেই লোহিত-বসনা বিয়াত্ৰিচেকে দেখিতে পাইলেনভস্মাচ্ছন্ন পুরাতন প্রেমের বহ্নি আবার জুলিয়া উঠিল ও নূতন প্রেম অন্ধুরেই শুকাইল!