পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Str8 রবীন্দ্র-রচনাবলী এইরূপে আরম্ভ করিয়া কাব্যের প্রথম খণ্ড, অর্থাৎ ইনফর্নো, অর্থাৎ নরক- ক্রমাগত নরকের বর্ণনা; পরে পর্গেটরি — অর্থাৎ যাহাদের পরিত্রাণ পাইবার আশা আছে তাহাদের বাসভূমি— পরে স্বর্গ। ক্রমাগত একই পদার্থের বর্ণনার বিবরণ পাঠকদিগের নিদ্ৰাকর্ষক হইবে, এই নিমিত্ত তাহা হইতে বিরত হইলাম, পর্গেটরি কাব্যের শেষভাগে বিয়াত্ৰিচের সহিত কবির সাক্ষাৎ হইল - বর্জিল ও দাস্তে উভয়েই বিস্ময়ে দেখিলেন একটি আশ্চর্য রথে বিয়াত্ৰিচে আসিতেছেন। সুরবালারা তাঁহার চারি দিকে এমন পুষ্প-বৃষ্টি করিতেছেন যে, তাহার আকার অতি অস্ফুটভাবে দেখা যাইতেছে, দান্তে সে পুষ্পরাশির মধ্যে তাঁহাকে ভালো করিয়া দেখিতে পান নাই, চিনিতেও পারেন নাই- তিনি কহিতেছেন, আঁখি মোর দেখে তীরে পারে নি চিনিতে, . তবু তার দেহ হতে এমন একটি - বিকীরিত হতেছিল শুভ্ৰ-পুণ্য-জ্যোতি, তাহার পরশে যেন পুরাতন প্রেম হৃদয়ে আমার পুন উঠিল জাগিয়া। সেই পুরাতন স্বপ্ন কত শত দিন যে স্বপ্নে হৃদয় মোর আছিল মগনযখনি উঠিল জাগি স্বগীয় কিরণে, অমনি আকুল হয়ে ফিরিয়া ধাইনু। কবি বর্জিলের পানে, শিশু সে যেমন ভয় কিংবা শোক-ভারে হলে বিচলিত, অমনি মায়ের বুকে যায় লুকাবারে! ভাবিনু কাতর স্বরে কহিব তাহারে— ‘প্রতি রক্তবিন্দু মোর কঁপিছে শিরায়, পুরানো সে অগ্নি পুন উঠিছে জুলিয়া।’ । হা- বর্জিল কোথা- হয়েছেন অন্তর্ধান! প্রিয়তম পিতা তুমি বর্জিল আমার! দান্তেকে বৰ্জিলের এই সহসা অন্তর্ধানে ব্যথিত হইয়া কঁদিতে দেখিয়া বিয়াত্ৰিচে কহিলেন যে দান্তে, কঁদিয়ে না, ইহা অপেক্ষা তীক্ষ্ণতর ছুরিকা তোমার হৃদয়ে বিদ্ধ হইবে ও তাহার যন্ত্রণায় তোমাকে কঁদিতে হইবে।” সুরবালারা পুষ্পবৃষ্টি স্থগিত করিলেন ও পুষ্প-মেঘ-মুক্ত সূৰ্য প্রকাশ পাইলেন। বিয়াত্ৰিচে সেই উচ্চ রথের উপরি হইতে কহিলেন, চাহিয়া দেখো, আমি বিয়াত্ৰিচে ।” বিয়াত্ৰিচের সেই অটল মহিমায়’ দান্তে জননীর সম্মুখে ভীত সন্তানের’ ন্যায় অভিভূত হইয়া পড়িলেন। বিয়াত্রিচে তখন তাঁহাকে ভৎসনা করিয়া কহিলেন, অল্পবয়সে দাস্তের হৃদয় ধর্মে ভূষিত ছিল, বিয়াত্রিচে তাহার যৌবনময় চক্ষের আলোকে তঁহাকে সর্বদাই সৎপথে লইয়া যাইতেন। কিন্তু তিনি যখন তাঁহার মর্ত্যদেহ পরিত্যাগ করিয়া অমর দেহ ধারণ করিলেন, যখন ধূলি-আবরণ হইতে মুক্ত হইয়া পুণ্য ও সৌন্দর্যে অধিকতর ভূষিত হইলেন, তখন তাহার প্রতি দান্তের সে ভালোবাসা কমিয়া গেল। বিয়াত্ৰিচের তীব্র ভৎসনায় তিনি অতিশয় যন্ত্রণা পাইলেন। পরে অনুতাপ-অশ্রু বর্ষণ করিয়া ও স্বর্গের নদীতে স্নান করিয়া তিনি পাপ-বিমুক্ত হইলেন। তখন তিনি তাহার প্রিয়তমা সঙ্গিনীর সহিত স্বৰ্গ দর্শনে চলিলেন। যখন স্বৰ্গনারক পরিভ্রমণ করা শেষ হইল, তখন কবি কহিলেন-- | জাগি উঠি স্বপ্ন যদি ভুলে যাই সব,