পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Siro রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী শীতের পত্ৰহীন তরুশাখায় বসিয়া সন্ধ্যাকালে বিহঙ্গম বিষগ্ন-সংগীত গাহিতেছিল, কবির হৃদয়ের স্বরে তাহার স্বর মিলিয়া গেল, তিনি গাহিয়া উঠিলেন হা রে হতভাগ্য বিহঙ্গম সঙ্গীহীন। ১ সুখ-ঋতু অবসানে গাঁহিছিস গীত! ফুরাইছে গ্ৰীষ্ম ঋতু ফুরাইছে দিন আসিছে। রজনী ঘোর আসিতেছে শীত! ওরে বিহঙ্গম, তুই দুখ-গান গ্যাস যদি জানিতিস কী যে দহিছে এ প্ৰাণ তা হলে এ বক্ষে আসি করিতিস বাস, এর সাথে মিশান্তিস বিষাদের গান! কিন্তু হা- জানি না তোর কিসের বিষাদ, ভ্ৰমিস রে যার লাগি গাহিয়া গাহিয়া, হয়তো সে বেঁচে আছে। বিহঙ্গিনী প্ৰিয়া, কিন্তু মৃত্যু এ কপালে সাধিয়াছে বাদ! সুখ দুঃখ চিন্তা আশা যা-কিছু অতীত, তাই নিয়ে আমি শুধু গাহিতেছি গীত! যখন তাহার লরার বর্তমানে প্রকৃতির মুখশ্ৰী আরও উজ্জ্বলতর হইয়া উঠিত, তখন তিনি গাহিতেন কী সৌন্দৰ্য-স্রোত হােথা পড়িছে ঝরিয়া! স্বাগ দিতেছেন ঢালি কী আলোক-রাশি ! চরণে হরিত-তৃণ উঠে অঙ্কুরিয়া শত বৰ্ণময় ফুল উঠিছে বিকাশি! সমুদয় দীপ তার করেছে জুলিত, প্ৰচরিতে দিশে দিশে তার যশোগান পাইয়া যাহার শোভা হয়েছে শোভিত! আবার কখনো বা সন্ধ্যাকালে একাকী বিজনে বসিয়া ভগ্নহৃদয়ে নিরাশার গীতি গাহিতেছেন। — স্তব্ধ সন্ধ্যাকালে যাবে পশ্চিম আকাশে বৃদ্ধ যাত্রী কোন এক অজ্ঞাত প্রবাসে শ্ৰান্ত-পদক্ষেপে একা যেতেছে চলিয়া। তবু যাবে ফুরাইয়া যাবে শ্রম তার, তখন গভীর ঘুমে মজিয়া বিজনে যত ক্লেশ সহিয়াছি সুদূর-ভ্ৰমণে! কিন্তু হায় প্ৰভাতের কিরণের সনে যে জ্বালা জাগিয়া উঠে হািদয়ে আমার, রবি যবে ঢলি পড়ে পশ্চিম গগনে, দ্বিগুণ সে জ্বালা হৃদি করে ছারখার!