পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

आश्एिछ S SEG চিঠি লেখালেখি শুরু করিলেন- লিখিলেন- “আমাকে মনে রাখিবার জন্য অনুরোধ করিবার বোধ হয় আবশ্যক নাই। যে ব্যক্তি সার্ধ দুই বৎসর প্রায় তোমাদের পরিবার মধ্যে ভুক্ত হইয়া বাস করিয়াছিল, যে ব্যক্তি অনেক সময় তোমার অসন্তোষের কারণ হইয়াছিল সত্য কিন্তু তথাপি তোমার প্রতি সর্বদাই অনুরক্ত ছিল, সহস্র ঘটনা বোধ হয় তাহাকে তোমার স্মৃতিপথে উদিত করিয়া দিবে- অন্তত তুমি তাহার অভাব অনুভব করিবে- তুমি না কর আমি অনেক সময় করিয়া থাকি।” দিন কতক, গোটে তাহার সহিত চিঠি লেখালেখি করিয়াছিলেন- কিন্তু তাহার ৭ মন আর বিচলিত করিতে পারেন নাই। অবশেষে তাহার বিবাহবার্তা শুনিয়া কহিলেন “আমি তোমার লেখা আর দেখিতে চাহি না- তোমার কণ্ঠস্বর আর শুনিতে চাহি নাআমি যে স্বপ্নে মগ্ন রহিয়াছি তাহাই আমার পক্ষে যথেষ্ট। তুমি আমার আর-একটি মাত্ৰ পত্ৰ পাইবে, এ অঙ্গীকার আমি নিশ্চয় পালন করিব এবং এইরূপে আমার ঋণের এক অংশ মাত্র পরিশোধ দিব, অবশিষ্টটুকু আমাকে মার্জনা করিয়ো।” আর-একটি পত্র লিখিয়াছিলেন-- তাহাতে কহিয়াছিলেন, “আমার নিজের বিষয়ে বিশেষ কিছুই বক্তব্য নাই— আমি সবল সুস্থ শরীরে পরিশ্রম করিয়া অতি সুখশাস্তিতে কাল যাপন করিতেছি- তাহার প্রধান কারণ- এখন আর আমাকে কোনো স্ত্রীলোকে পায় নি!” এইরূপে গেটে তাহার হৃদয়-জ্বালা শাস্তি করিতে অ্যানসেনের দ্বারে নিরাশ হইয়া কল্পনার দ্বারে আশ্রয় লইলেন— একটা নাটক লিখিয়া ফেলিলেন। এই নাটকের নাম ‘প্রেমিকের খেয়াল’। এরিডনকে (গ্রন্থের নায়ককে) তাহার প্ৰণয়িনীর সখী কহিলেন- ‘অ্যামীন (নায়িকা) তোমাকে এত ভালোবাসে যে, কোনো স্ত্রীলোক তেমন ভালোবাসে নাই।” নায়িকাকে তাহার সখী কহিল, “যে পর্যন্ত র্তাহার অসুখের সত্য কোনো কারণ না থাকিবে সে পর্যন্ত তিনি একটা-না-একটা কারণ কল্পনা করিয়া লইবেন; তিনি জানেন যে, তুমি তাহা অপেক্ষা আর অধিক কিছুই ভালোবাস না— তুমি তাঁহাকে সন্দেহের কোনাে কারণ দাও না বলিয়াই তিনি তোমাকে সন্দেহ করেন, একবার তাহাকে দেখাও যে তাহাকে না । হইলেও তোমার চলে। তাহা হইলে এখনকার একটি চুম্বন অপেক্ষা তখনকার একটি দৃষ্টিতে অধিকতর সন্তুষ্ট হইবেন।” এইখানে গেটের দ্বিতীয় প্ৰেমাভিনয়ের যবনিকা পড়িয়া গেল। এক সময়ে গেটে গোল্ডস্মিথের ‘বাইকার’ নামক উপন্যাস পাঠে নিযুক্ত ছিলেন। এমন সময়ে তিনি শুনিলেন, স্ট্রাসবর্গের নিকটে অবিকল প্রিমরোস পরিবারের ন্যায় এক পাস্ত্রী পরিবার বাস করেন। তিনি কৌতুহলবশত তাঁহাদের সহিত সাক্ষাৎ ও আলাপ করিলেন। দেখিলেন— পাদ্রীর কনিষ্ঠা কন্যা ফ্রেডুরিকার সহিত সোফিয়ার অনেক সাদৃশ্য আছে। সে পরিবারের মধ্যে গেটে দুই দিন বাস করিলেন— এবং সেখানে তাঁহার অতুল্য মোহিনী শক্তি প্রয়োগ করিতে লাগিলেন। ফিরিয়া আসিবার সময় ফ্রেডুরিকার জন্য নিশ্বাস ফেলিয়া আসিলেন- বােধ হয় ফ্রেডুরিকাও র্তাহার জন্য নিশ্বাস ফেলিয়াছিল। কিছু দিন পরে আবার সহসা এক সন্ধ্যাকালে । তাহাদের সেখানে গিয়া উপস্থিত হইলেন। অলিভিয়া ও ফ্রেডুরিকা দুই বোনে দ্বারের কাছে বসিয়াছিল। আদরের সহিত তিনি সেখানে আহূত হইলেন। আলোতে আসিবামাত্র অলিভিয়া তীহাকে দেখিয়া হাসিয়া উঠিল— সে গেটের অদ্ভুত পরিচ্ছদ দেখিয়া হাস্য সংবরণ করিতে পারিল না। ফ্রেডুরিকা কহিল, “কই– আমি তো হাসিবার মতো কিছুই দেখিতে পাই নাই'- কিন্তু ফ্রেডুরিকা দেখিতে পাইবে কেন? এই কাহিনী শেষ করিবার পূর্বে ইহার অন্তর্ভুক্ত আর-একটি উপাখ্যান বলিয়া লই। গেটে ইতিপূর্বে এক ফরাসি শিক্ষকের নিকট নৃত্য শিখিতেন। তাহার শিক্ষকের দুই কন্যা ছিল, দুইজনই যুবতী ও রূপবতী— ইহাদের মধ্যে কনিষ্ঠাটি আর-এক জনের প্রেমাসক্তা। জ্যেষ্ঠা লুশিন্দা তাঁহার প্রেমে পড়িল, কিন্তু তিনি কনিষ্ঠা এমিলিয়ার প্রেমে পড়লেন। এক সময়ে লুশিন্দা রোগশয্যায় শয়ান ছিল— তাহার ঘরের পার্শ্বে এমিলিয়া ও গেটে বসিয়াছিলেন। এমিলিয়া গেটের নিম্ফল