পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য . منعم Տ ՏԳ প্রেমের অবসানে কিছুকাল যন্ত্রণা পাইয়াছিলাম, এমন-কি, তাহা অসহনীয় হইয়া উঠিয়াছিল। দুষ্মণে তাে বাঁচিয়া থাকিতে হবে, কাজে কাজেই অন্য লােকের উপরে মনােনিবেশ করিতে হইল।” এখন গেটে শারলোটুনামক এক রমণীর প্রতি মনোনিবেশ করিলেন। কেজনার নামক যুবার সহিত শারলেটের বিবাহ স্থির হইয়া গিয়াছে। উভয়ই উভয়ের প্রেমে আসক্ত। কেজনারের প্ৰণয়ে অসূয়া বা সন্দেহ কিছুমাত্র ছিল না; যাহাকে সে ভালো মনে করিত তাহারই সহিত শারলেটের আলাপ করাইয়া দিত। এইরূপে গেটের সহিত শারলেটের প্রথম আলাপ হয়। প্রেমিক-যুগলের সহিত গেটের প্রণয়-সম্বন্ধ ক্ৰমেই পাকিয়া উঠিতে লাগিল। শারলেট ব্যতীত তিনি আর থাকিতে পারেন না। তাহারা উভয়ে মিলিয়া ওয়েটুমারের উর্বর ক্ষেত্রে ভ্ৰমণ করিয়া বেড়াইতেন। যদি কাজকর্ম হইতে অবসর পাইতেন তবে কেজনােরও তঁহাদের সহিত যোগ দিতেন। এইরূপ ধীরে ধীরে তাহারা পরস্পরের সহিত এমন মিলিত হইয়া গেল যে, একজনকে নহিলে যেন আর-একজনের চলিত না। যতখানি উপযুক্ত, অলক্ষিতভাবে গেটের তদপেক্ষা প্ৰেম জন্মিয়া গিয়াছিল। কিন্তু শারলেটের মন কেজনার হইতে গেটের প্রতি ধাবিত হয় নাই। ক্ৰমে ক্ৰমে তাহদের বিবাহের সময় হইয়া আসিতেছে- গেটে দেখিলেন, তাহার হািদয়েও প্ৰেম দিন দিন বদ্ধমূল হইয়া আসিতেছে- গেটে দেখিলেন এইবেলা হইতেই দূরে পলায়ন করা সৎপরামর্শ। দূরে প্রস্থান করিলেন ও এই বিষয় লইয়া তাহার বিখ্যাত উপাখ্যান “যুব ওরার্থরের যন্ত্রণা” লিখিয়া ফেলিলেন। লেখাও শেষ হইল আর তাহার প্রেমও শেষ হইল। এখন তিনি আবার নূতন পথে যাইবার বল পাইলেন। নূতন পথে যাইতে র্তাহার বড়ো বিলম্ব হয় নাই। লিলি নামক এক ষোড়শবষীয়া বালিকার (আমাদের দেশে যুবতী) সহিত তাহার প্রণয় জন্মিল। সে বালিকার অনেকগুলি অনুরাগী বা বিবাহাকাঙক্ষী ছিল। তাহদের সকলকেই তাহার প্ৰেমে বন্দী করিবার দিকে লিলির বিশেষ যত্ন ছিল, কিন্তু দৈবক্রমে আপনি গেটের প্রেমে জড়াইয়া পড়িল- এ কথা সে নিজেই গেটের কাছে স্বীকার করিল। দেখিতে দেখিতে তাহাদের প্ৰেম বাড়িয়া উঠিল। ইহা বলা বাহুল্য। অবশেষে র্তাহাদের অবস্থা এমন হইয়া উঠিল যে, সুদূর বিচ্ছেদের কথা মনে করিতেও কষ্ট হইত; উভয়ের উভয়ের উপর এমন বিশ্বাস জন্মিয়া গেল যে, অবশেষে তাহারা বিবাহের বিষয়ে চিন্তা করিতে লাগিলেন। কিন্তু উভয়েরই কর্তৃপক্ষের তাঁহাতে অমত হইল। অবশেষে একজন রমণী মধ্যস্থা হইয়া উভয় পক্ষকেই সম্মত করাইল।। যতদিন কর্তৃপক্ষীয়েরা সম্মত হন নাই। ততদিন গেটে বড়োই যন্ত্রণা পাইয়াছিলেন। কিন্তু সম্মত হইলে পর তাহার মনের নূতন প্রকার পরিবর্তন হইল। তখন সমস্ত নূতনত্ব চলিয়া গেল। যখন লিলিকে হস্তপ্রাপ্য মনে করিলেন তখন লিলির উপর আর টান থাকিবে কেন ? লিলির নিকট হইতে বিদায় না লইয়া তিনি আস্তে আস্তে ফ্র্যাঙ্কফোর্ট ত্যাগ করিয়া চলিলেন। তিনি বলেন, তিনি লিলিকে ভুলিতে পারেন। কিনা— এবং লিলির উপর বাস্তবিক তাহার কতখানি প্ৰেম আছে, তাহাই পরীক্ষা করিবার জন্য তিনি বিদেশে যাইতেছেন। কিন্তু এই পরীক্ষার কথা যখনি তঁহার মনে আসিয়াছে, তখনি বুঝা গিয়াছে বাস্তবিক তঁহার প্রেম নাই। যদি তাহার প্রেমের তেমন গভীরতা থাকিত তবে কি পরীক্ষার কথা মনেই আসিত ? কিছুদিন বিদেশে থাকিয়া আবার তিনি ফ্র্যাঙ্কফোর্টে ফিরিয়া আসিলেন। ইতিমধ্যে লিলির আত্মীয়বর্গ লিলির প্রেম বিনষ্ট করিবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করিতেছিল- কিন্তু লিলি কহিল, সে গেটের জন্য সমস্ত ত্যাগ করিতে পারে- এমন-কি, গেটে যদি সম্মত হন, তবে সে তাহার সঙ্গে আমেরিকায় যাইতে পারে। কী সর্বনাশ- গেটে তাহার বাড়ি ঘর ছাড়িয়া কোথা এক সাত । সমুদ্র পার আমেরিকা- সেইখানে যাইবেন। তাও কি হয় ? লিলি গেটের জন্য সমস্ত করিতে পারে, কিন্তু গেটে তাহার জন্য বড়ো একটা ত্যাগাস্বীকার করিতে সম্মত নহেন। ত্যাগাস্বীকার করা দূরে থাকুক, কোনো ত্যাগাস্বীকার করিতে না হইলেও তিনি লিলিকে বিবাহ করেন। কিনা সন্দেহ।