পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Soo • রবীন্দ্র-রচনাবলী স্বামীর ইচ্ছা তঁহার সীমা বাড়াইয়া লন- বাহিরের শক্ৰ আক্রমণ করিলে জাতীয়ভাবে সকলে একত্রে মিলিত হইয়া তাহাকে বাধা দেওয়া দূরে থাকুক, সকলেই ভয় করিতে থাকে, পাছে তাহাদের মধ্যে আর কেহ শত্রুর সাহায্য লইয়া তাহার অধিকারে হস্তক্ষেপ করে, অতএব তাহা সুয়ািমন হইতে পারে যে, আগে হইতে আমিই যে কেন শক্ত সাহায্যের সুবিধা ভােগ না তখন যুরোপের অবস্থা অতি শোচনীয় ছিল। চারি দিক হইতে মুমূর্ষ অথবা মৃত রোমীয় প্রভাবের উপর শকুনি ও গৃধিনীদল বাকিয়া পড়িতেছিল। তখন দারুণ অরাজকতার কাল। স্যারাসীনগণ সার্ডিনিয়া ও সিসিলি অধিকার করিয়া গ্ৰীস,ইটালি ও নিকটবতী দেশসমূহে উপদ্ৰব করিতেছিল। দুর্দান্ত সক্ল্যাভোনীয়গণ (Sclavonians) জার্মানির অধিকার হইতে বোহেমিয়া, পোল্যান্ড এবং প্যানোনিয়া (আধুনিক অস্ট্রিয়া)৷ কড়িয়া লইয়াছিলেন। তাতার জাতীয় দাসুন্দল নিদারুণ উপপ্লবে সমস্ত ইটালি, জর্মানি ও দক্ষিণ ফ্রান্স কম্পিত করিয়া তুলিয়াছিল, কিন্তু সর্বাপেক্ষা এই উত্তর দেশীয় সামুদ্রিক দাসুদৃগণ এই নর্থম্যান নরশোণিত-পিপাসুগণ প্রচণ্ড ছিল। উপযুপরি ইংলন্ড এবং ফ্রান্স তাহারা বিপর্যস্ত করিয়া তুলিয়াছিল। তাহারা যখন ইংলন্ড আক্রমণ করিত, তখন ফ্রান্স বিশ্রাম করিত, যখন ফ্রান্স আক্রমণ করিত তখন ইংলন্ড বিশ্রাম করিত। Charles the Bald-এর রাজত্বকালে ইহারা ফ্রান্সের অন্তঃপ্রদেশে প্রবেশ করিতে পারিয়াছিল। তখন চার্লস ও তাহার পরিবারের মধ্যে গৃহ-বিবাদ ঘটিয়া রক্তপাতে ফ্রান্স দুর্বল হইয়া পড়িয়াছিল। ক্ষুদ্র প্রাদেশিক রাজগণ অবাধ্য হইয়া উঠিয়াছিল। নর্থম্যান দসু্যদল ফ্রান্সে এবং ইংলন্ডে নূতন প্রকার যুদ্ধের প্রথা অবলম্বন করিয়াছিল। নদী বাহিয়া তাহারা যে দ্বীপ পাইত, সেইখানেই দুর্গ নির্মাণ করিত। এই দুৰ্গসকল তাহাদের লোপত্ৰ দ্রব্যের ভাণ্ডার ছিল, তৎসমুদায় তাহাদের রমণী ও শিশুদিগের নিবাস-ভূমি ছিল ও পরাজয়কালে আশ্রয়স্থান ছিল। দুর্বল ফ্রান্স-অধিপতি আস্ত্রের বলে তাঁহাদের বাধা দিতে অক্ষম ছিলেন, সুতরাং অর্থ দিয়া তাহাদের অত্যাচার নিবারণ করিতে হইত মাত্র। অবশেষে Charles the Simple নর্ম্যান্ডি দেশ দান করিয়া তাহাদের নিকট শান্তি ক্ৰয় করিলেন। তাহাতে হানি হইল না, নম্যান্ডি ফ্রান্স হইতে বিচ্ছিন্ন হইল না। নম্যানদের ভাষা ফরাসি হইল, নম্যানদের আচার-ব্যবহার ফরাসি হইল, নর্মান জাতি ফরাসিস হইয়া দাঁড়াইল, নর্ম্যানদিগের অধিপতি রলফ (Hiroli), নর্ম্যান্ডির রাজা হইলেন। ইহার এক শতাব্দী পরে নর্ম্যান্ডির রাজা উইলিয়ম ইংলন্ড আক্রমণ করিলেন। এক শতাব্দী পূর্বে যে জাতি অকারণে ও অন্যায়রাপে ফ্রান্সে পদার্পণ করিয়াছিল। আজ তাহারাই পররাষ্ট্র ইংলন্ড আক্রমণ করিতে চলিল। কিন্তু ইতিমধ্যে সেই ডেনিস দসু্যদলের অনেক পরিবর্তন হইয়াছে। অন্যায় কার্যের উপর একটা ন্যায়ের আবরণ না পরাইতে পারিলে তাঁহাদের লজ্জা বোধ হয়। ন্যায্যরাপে ইংলন্ডের সিংহাসন তাহার প্রাপ্য বলিয়া উইলিয়ম ইংলন্ডের দ্বারে গিয়া আঘাত দিলেন। ন্যায়কে বল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করাই যেন তাহার উদ্দেশ্য, এমনি একটা ভান করিলেন। ইংলন্ড-জয়ের কাহিনী আজ আর নূতন করিয়া উল্লেখ করিতে হইবে না, সকলেই তাহা জানেন। শতাব্দী-পূর্বে নর্মানরা যখন ফ্রান্সে দসুতা করিত তখন লোকে তাহাদের দসু্যু বলিত, শতাব্দী-পরে যখন তাহারা ইংলন্ডে দ্যসূতা করিল, তখন লোকে তাহাদের বিজয়ী কহিল। কিন্তু এই এক শতাব্দীর মধ্যে নর্মান জাতির কী পরিবর্তন হইয়াছে আলোচনা করিয়া দেখো, দেখিবে, । তাহারা সেই দুৰ্দান্ত, বিপদ-অন্বেষী দাসুয়ই রহিয়াছে, কেবল ফরাসি কথা কহিতে ও ফরাসি জাতির আচার-ব্যবহার অনুকরণ করিতে শিখিয়াছে। যদিও তাহারা ফরাসিদের অন্তর্ভুত হইয়া গিয়াছিল, তথাপি নর্মান জাতি বলিয়া তাহদের একটি স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ছিল। সভ্য জাতির উপযোগী শিল্পে তাহাদের সুরুচি জন্মিয়াছে; নর্ম্যান অধিকারের পর হইতে শিল্প-সমাগম-শূন্য ইংলন্ডে শত শত সুশোভন গির্জা ও প্রাসাদ নির্মিত হইল। এক শতাব্দীর মধ্যে এই অসভ্য দসু্যদিগের হৃদয়ে