পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য SROS সৌন্দর্য জ্ঞান উদবােধিত হইল। নর্মান্ডির সমাজে বিদ্যা যথোচিত সমাদর প্রাপ্ত হইল। ল্যানফ্র্যোঙ্কের (Lanfrenc) প্রতিষ্ঠিত বেকের বিদ্যালয় (School of Bec) তখনকার প্রধানতম র মধ্যে গণ্য হইল। বিজেতা উইলিয়মের পুত্ৰ হেনরির বিদ্বান বলিয়া খ্যাতি ছিল, উপাধি ছিল সুপণ্ডিত, Beanchirk অল্প দিনের মধ্যেই ইহাদের ফরাসি ভাষায় অমন বুৎপত্তি জন্মিয়াছিল যে, এই হঠাৎ-সভ্য দসু্যরা ফরাসিদের মতোই কবিতা ও গদ্য লিখিতে পারিত। কিন্তু তথাপি তাহাদের অস্তরে অস্তরে সেই টিউটনিক ভাব জাজ্বল্যমান ছিল। সভ্যতার মূল তাঁহাদের হৃদয়ে গাঢ়ভাবে নিহিত হইতে পারে নাই। তাহাদের নিষ্ঠুরতার কাহিনী যদি পাঠ কর, তবে শরীর রোমাঞ্চিত হইয়া উঠিবে। বিজিত ইংলন্ডে তাহারা লোকদের পা বঁধিয়া ঝুলাইয়া রাখিত, ও সেই নিম্নশির ব্যক্তিদের ধূম সেবন করাইয়া যন্ত্রণা দিত। কখনো বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ, কখনো বা মুণ্ড বঁধিয়া হতভাগ্যদের ঝুলাইয়া দিত ও তাঁহাদের পায়ে জ্বলন্ত বস্ত্ৰ বঁধিয়া দেওয়া হইত। মাথায় দড়ি বঁধিয়া যতক্ষণ না তাহা মস্তিষ্ক ভেদ করিত, ততক্ষণ আকর্ষণ করিত। ভেক ও সরীসৃপসংকুল কারাগারে লোকদের কারাবদ্ধ করিত। ক্ষুদ্র, সংকীর্ণ, অগভীর ও তীক্ষ-প্রস্তর-পূর্ণ সিন্দুকে জোর করিয়া মানুষ পুরিত এবং এইরূপে তাঁহাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ চূর্ণ করিত। অনেক ব্যারনদিগের দুর্গে rachetege নামে অতি ঘূণ্য ও ভয়ংকর দ্রব্য থাকিত, সেই যন্ত্রণার যন্ত্র কড়িকাঠ হইতে ঝুলানো থাকিত, উহা কারারুদ্ধ ব্যক্তির স্কন্ধের উপর স্থাপিত হইত, তাহার চারি দিকে তীক্ষুধার লৌহ, সুতরাং সেই হতভাগ্য ব্যক্তি বসিতে, শুইতে, ঘুমাইতে পারিত না, সর্বক্ষণ তাহাকে লীেহ-ভার বহন করিতে হইত। শত শত লোককে তাহারা অনাহারে যন্ত্রণা দিত। কেবলমাত্ৰ মৃগয়া করিবার সুবিধার জন্য বিজেতা উইলিয়ম সমস্ত হ্যাম্পশিয়ার অরণ্য করিয়া দিলেন, প্ৰতিহিংসা তুলিবার আশয়ে সমস্ত নর্দাম্বারল্যান্ড জনশূন্য করিয়া দিলেন। টাইন ও হাম্বারের মধ্যবতী ভূভাগে নয় বৎসর ধরিয়া একটি গ্রাম বা একটি জনপ্ৰাণী মাত্র ছিল না। নম্যান অত্যাচারে দেশ। কতখানি জনশূন্য হইয়া পড়িয়াছিল, তাহা নৰ্মান অধিকারের পূর্ব ও পরের অধিবাসী সংখ্যা তুলনা করিয়া দেখিলে বুঝা যাইবে। পূর্ব ইয়র্কে ১৬০৭ গৃহ ছিল, উইলিয়মের রাজত্বকালে ৯৬৭ অবশিষ্ট থাকে, অক্সফোর্ডে ৭২১ গৃহ ছিল, তাহার ২৪৩ মাত্র অবশিষ্ট থাকে, ডচেস্টরে ১৭২ গৃহের ৭২ মাত্র অবশিষ্ট থাকে, ডবিতে ২৪৩ গৃহের ১৪০ ধ্বংস হইয়া যায়, এমন আর কত কহিব? ইংলন্ডের নর্ম্যান রাজগণ, নিজে পাত্র নির্বাচিত করিয়া লইয়া তাহাদের অধীনস্থ। ব্যক্তিদিগের দুহিতাদের বলপূর্বক বিবাহ দিয়া দিতেন। মনোমতো বিবাহ করিতে হইলে অর্থদণ্ড দিতে হইত। কাউন্টেস অফ অ্যালবেমালকে (Countess of Albimarie) একটি কোমরবন্ধ দিবার কথা মনে করাইয়া না দেওয়াতে রাজা জন উইঞ্চেস্টটরের বিশপকে ১ টন মন্দিরা দণ্ড দিতে বাধ্য করান। এমন কত সামান্য সামান্য বিষয়ে দণ্ড দিতে হইত। বিশেষ ব্যক্তির নামে নালিশ করিতে বা বিশেষ আদালতে মকদ্দমা উত্থাপন করিতে বা বিচারে ন্যায্য ভূমিখণ্ড পাইলে তাহা দখল করিতে, টাকা দিতে হইত। পরাজয়ের সম্ভাবনা দেখিলে প্ৰত্যার্থী বিচারের বিলম্ব করাইতে, কখনো বা অন্যায় বিচারের সাহায্য করিতে রাজাকে টাকা দিত। সুবিচার ও শীঘ্ৰ বিচার পাইবার জন্য ন্যায্য বিচারাকাঙক্ষী অর্থীকে আবার অর্থ দিতে হইত। স্যাক্সন ক্ৰনিকল-লেখক বিলাপ করিয়া বলিতেছেন, ঈশ্বর জানেন, এই হতভাগ্য ব্যক্তিগণ কী অন্যায়রাপে পীড়িত হইতেছে। প্রথমে তাহাদের ধন-সম্পত্তি কড়িয়া লওয়া হয়, পরে তাহাদিগকে মৃত্যুমুখে নিক্ষেপ করে। এ বৎসরে (১১২৪) অতি দুষ্কাল পড়িয়াছে। গুরুভার করে ও অন্যায় ডিক্রিতে সকলেই আপনার আপনার সম্পত্তি খোয়াইতেছে।” তাহারা (নর্মানরা) করে করে গ্রামের সমস্ত ধন-সম্পত্তি শোষণ করিয়া লইয়া অগ্নি লাগাইয়া দেয়। ভ্ৰমণ করিতে বাহির হইলে দেখিতে পাইবে গ্রামে একটি লোক নাই, ভূমি আকৃষ্ট পড়িয়া রহিয়াছে। যদি দেখা যায় দুই-তিনটি মাত্র ব্যক্তি অশ্বারোহণে একত্রে চলিতেছে, আমনি গ্রামসুদ্ধ লোক তাহাদিগকে লুণ্ঠনকারী মনে করিয়া গ্রাম ছাড়িয়া চলিয়া যায়। লোকে প্রকাশ্যভাবে বলিত যে, ক্রাইস্ট ও তাহার Saintাগণ। ঘুমাইয়া