পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য SS মদ্যপানে ভ্রংশ-বুদ্ধি, মাগিলা ভূপতি, বিধমী সে রমণীরে বিবাহের তরে। r স্যাক্সনদের কঠোর লেখনী হইতে এরূপ মৃদু বিলাসময়ী কবিতা বাহির হইতে পারিত না। কুমারী মেরীই মধ্যযুগের দেবতা ছিলেন। মহিলা-পূজার উৎকর্ষ তাঁহাতে গিয়াই পৌঁছিয়ছিল। প্রথমত তিনি খৃস্টের জননী ছিলেন, দ্বিতীয়ত সাধারণ মহিলাদের তিনিই পূর্ণ প্রতিমাস্বরূপ ছিলেন। তখনকার লোকের রমণী-ভক্তি হইতেই তাহার স্তব উখিত হইত। একটি মেরীর স্তব উদধূত করিতেছি— দেবী, তব হােক জয়, স্বগীয় আনন্দময়, স্বর্গের মধুর পুষ্প তুমি! মৃদুতার তুমি জন্ম-ভূমি! দেবী, তব হােক জয়, উজ্জ্বল সৌন্দর্যময়! সব মম আশা তোমা-’পরি, কিবা দিবা কিবা বিভােবরী ! দেখাও গো পথ মোরে দাও গো কিরণ, দেবি, এই বসুন্ধরা মিথ্যা কপটতা ভরা তুমিই আমারে হেথা করো গো চালন! রমণী-ভক্তির চর্চা করিয়া করিয়া সে ভাব লোকের মনে সত্য সত্যই এমন বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছিল যে, এরূপ স্তব হৃদয় হইতে না বাহির হইয়া থাকিতে পারে না। সেমি-স্যাক্সন সাহিত্যের উপদেশ অংশ হইতে উদাহরণস্বরূপ দুই-একটা উদ্ধৃত করিতেছি। মৃতদেহের প্রতি দেহমুক্ত আত্মার উক্তি একদা শীতের রাত্ৰে আছিনু নিদ্রিত; দেখিানু আশ্চর্য দৃশ্য; ভূমির উপরে গর্বিত ধনীর এক দেহ আছে পড়ি। ফিরিয়া দেখিল চাহি মৃত দেহ পানে। কহিল সে, “ধিক রক্ত মাংস কলুষিত! হতভাগ্য দেহ, কেন এমন অসাড়, . আগে যে বড়োই ছিলি উন্মত্ত, অধীর! অশ্বে চড়ি হেথা হােথা বেড়াতিস ছুটি; ছিলি সুগঠন, যশ ছিল দেশব্যাপী! কোথা গেল গর্ব তোর স্বৰ্গভেদী স্বর ? কেন পড়ি ভূমিতলে, বস্ত্ৰ আচ্ছাদিত? কোথা তোর দুর্গ, তোর গৃহ সুসজ্জিত ?” ইত্যাদি— পুরানো কথা লইয়া অনেক বকবকি করা হইয়াছে। আনক্রেন রিউল নামক গদ্যগ্রন্থ : হইতে কতকটা উপদেশ-দায়ক বিভীষিকা অনুবাদ করিয়া দিতেছি। ইহাতে পাঠকেরা সেমিস্যাক্সন গদ্য রচনা ও তখনকার লোকের অজ্ঞান কু-সংস্কারের ভাব কতকটা বুঝিতে পরিবেন— অলস ব্যক্তিরা ডেভিলের (devil) বুকে তাহার প্রিয় শিশুটির ন্যায় ঘুমাইতে থাকে এবং ডেভিল তাহার কানে মুখ দিয়া কথা কয় ও তাহার মনের বাসনা ব্যক্ত করে। যাহারা কোনো সৎকর্মে ব্যাপৃত না থাকে তাহাদের এইরূপ ঘটিয়া থাকে, ডেভিল ক্ৰমাগত কথা কহিতে থাকে,