পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য । SSW পুস্তক রচিত হইত, তাহার ভােব ফরাসি, তাহার রচনা-প্ৰণালী ফরাসি, শুদ্ধ তাঁহাই নহে, তাহা ফরাসি পুস্তকের অনুবাদ ও অনুকরণ। অবশেষে যখন স্যাক্সন ও নর্মান জাতিদ্বয় সম্পূর্ণরূপে বা অনেক পরিমাণে মিশিয়া গেল, যখন জেতা ও জিত জাতির মধ্যে বিভিন্নতা রহিল না, তখন দেশে নুতন জাতীয় ভাবের সঞ্চার হইল। তখন সকলের ভাষাই অনেক পরিমাণে সমান হইল, তখনকার সাহিত্য সাধারণের সম্পত্তি হইল; তখন শ্রেণীবিশেষের জন্যই গ্ৰন্থ রচিত হইত না। তখন জাতির চক্ষুর সম্মুখ হইতে ফরাসি আদর্শ অনেক পরিমাণে দূরীভূত হইল, লেখকেরা নিজের বুদ্ধি হইতে ও নিজের হৃদয় হইতে অনেক পরিমাণে লিখিতে লাগিল। এমনকি, একদল লেখক প্রাচীন অ্যাংলো-স্যাক্সন আদর্শে লিখিতে চেষ্টা করিতে লাগিলেন। কবি ল্যাংল্যান্ড (Langland) পিয়ার্স প্লোম্যান’ (Piers Pilloughman) নামে এক কাব্য লিখিলেন, তাহাতে ছন্দ নাই, মিল নাই, কবি প্রাচীন স্যাক্সন-প্ৰণালী অনুযায়ী যমক-পদ্ধতি অনুসরণ করিয়াছেন। নূতন জাতীয় ভাবের সঞ্চার হইলে লোকের পুরাতন সাহিত্যের প্রতি টান পড়ে। পিয়ার্স প্লোম্যান”- লেখক প্রাচীন অ্যাংলো-স্যাক্সন রচনা-প্ৰণালীর অনুকরণ করিতে লাগিলেন ও একদল লেখক উখিত হইল, তাহারা ‘পিয়ার্স প্লোম্যান’-লেখকের অনুকরণ করিতে লাগিল। কিন্তু ফরাসি অনুকরণে কাব্যরচনার মিল ও ছন্দের নিয়ম তখনকার সাহিত্যে এমন বদ্ধমূল হইয়া গিয়াছিল যে, তাহার মধ্য হইতে বিজাতীয়ত্ব দূর হইয়া গিয়া তাঁহাই স্বাভাবিক হইয়া দাঁড়াইয়াছিল, এমন অবস্থায় পিছু হঠিয়া অসভ্য অ্যাংলো-স্যাক্সন রীতির অনুসরণ করিতে যাওয়া অনর্থক। ল্যাংল্যান্ডের অনুবতী একদল উত্থিত হইল, কিন্তু তাহাদের চেষ্টা সফল হইল না, প্রচলিত রীতি যদিও বিদেশীয় আদর্শ হইতে গৃহীত হইয়াছিল। তথাপি তাঁহারই জয় হইল। ল্যাংল্যান্ডের কাব্য হইতে উদাহরণস্বরূপ দুই-এক শ্লোক উদধূত করিতেছি— Hire robe was ful riche, Of rud searlit engrenyned, With ribanes of rud gold And of riche Stones ইহাতে ছন্দ নাই, মিল নাই, কেবল robe, riche, rud, ribanes প্রভৃতি কথায় R অক্ষরের যমক আছে মাত্র। যুরোপ হইতে বিচ্ছিন্ন হওয়াতে ইংলন্ড দ্বীপের একটা বিশেষ উপকার হইয়াছিল। যখন রোমে পোপের আসন অধিকারের জন্য বিবাদ বিদ্বেষ চলিতেছিল, যখন পোপেরা অধৰ্মাচরণে রত ছিল, তখন ইংলন্ড অমিশ্রভাবে থাকিয়া দূর হইতে অপক্ষপাতের সহিত বিচার করিতে পরিত, পোপের নর-দেবত্ব ভাব তাহাদের হৃদয়ে বদ্ধমূল হইয়া যায় নাই। রোমীয় চার্চের চরণে তাহাদের রাশি রাশি মুদ্রা ঢালিতে হইত, তাহাতে তাহারা মনে মনে অসন্তুষ্ট ছিল। ধর্মচার্যগণের অনেক পরিমাণে স্বাধীনতা থাকায় তাহারা অধৰ্মাচরণে দারুণ রত ছিল, এই সকল কারণে তখনকার চর্চের প্রতি ইংরাজদের অভক্তি জন্মিয়াছিল এবং সাধারণ লোকের মুখপাত্ৰ হইয়া ল্যাংল্যান্ড তাহার পিয়ার্স প্লোম্যান’ কাব্যে তখনকার চর্চ, ধর্মচার্য ও তখনকার নানা প্রকার কুনীতির প্রতি বিদ্রুপ বর্ষণ করিতে লাগিলেন। মহাত্মা উইক্লিক ইহার পরে যে ধর্মসংস্কার করেন, রোমীয় চার্চের শৃঙ্খল হইতে ইংলন্ডকে মুক্ত করেন, এইপ্ৰকার কবিতা তাহার পথ পরিষ্কায় করিয়া রাখিয়াছিল। এইপ্ৰকার কবিতা যখন লিখিত হইয়াছিল তখন স্পষ্টই বুঝা যাইতেছে, তখনকার লোকের মনের ভাব এইরূপ ছিল, ল্যাংল্যান্ড তাহাই কেবল লিখিয়া প্রকাশ করিয়াছেন মাত্র। এই কারণেই এই কাব্য তখন এমন সমাদৃত হইয়াছিল। পিয়ার্স ষ্ট্রেীম্যান’ কাব্যই সেমি-স্যাক্সন সাহিত্যের শেষ সীমা চিহ্নস্বরূপ করা গেল। তাহার। পরেই গাউয়ার (Gower) ও চসারের (Chaucer) কাল। তখন হইতে প্রকৃতপক্ষে ইংরাজি