পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য ՀՏԳ বজ্ৰ-দগ্ধ, শুষ্ক দুই পাদপ যেমন উভয়ের ‘পরে রহে উভয়ে কুঁকিয়া। কিংবা জনশূন্য যথা ভগ্ন নাট্যশালা হৃদয়ে পুষিয়া রাখে বিভীষিকা শত, অমঙ্গল কাক যেথা ডাকে অবিরাম। কাদিয়া কঁাদিয়া পেচা জাগায় নিশিরে। বংশীরবে উষা আর উঠিবে না জাগি নৃত্যগীত বাদ্য আদি হবে নাকো আর। এলিনোর ঘোটকের পদশব্দ শৃঙ্গের গর্জনে অরণ্যে প্রাণীরা আর উঠিবে না। কঁাপি! সারা দীর্ঘ দিন আমি ভ্ৰমিব গহনে সারা রাত্ৰি গোরস্থানে করিব যাপন প্ৰেতাত্মারে কবি যত দুখের কাহিনী। যদিও চ্যাটার্টনের অহংকার অতি অল্পই প্রশ্রয় পাইয়াছিল ও তাঁহার যশ-লালসা তৃপ্ত হয় নাই তথাপি তাহার অহংকার ও যশোর ইচ্ছা অতি বাল্যকাল হইতে অত্যন্ত বলবান ছিল। তাহার বাল্যকালে তঁহার মাতার এক কুম্ভকার বন্ধু চ্যাটার্টনকে একটি মৃৎপাত্ৰ উপহার দিবার মানস করিয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, সে পাত্রের উপর কী চিত্ৰ আঁকিবে। চ্যাটার্টন কহিলেন, “একটি দেবতা (angel) আঁকো, তাহার মুখে একটি শৃঙ্গা দেও, যেন সমস্ত পৃথিবীময় সে আমার যশঃকীর্তন করিতেছে।” তাহার এমন প্রশংসা-তৃষ্ণা ছিল যে, যতদিন তিনি ব্রিস্টলে ছিলেন, তিনি এমন একটি সামান্য কবিতা লিখেন নাই যাহা তাহার সহপাঠীদের শোনান নাই; অনেক সময়ে সে বেচারীরা বিরক্ত হইয়া উঠিত। সন্দিগ্ধ লোকের কাহিত, যাহার যশ-লালসা এত প্ৰবল, তিনি কোন প্ৰাণে নিজে কবিতা লিখিয়া ছন্মনামে প্রকাশ করিলেন? রাউলি-রচিত কবিতাগুলি চ্যাটার্টনের রচিত নয় বলিয়া সন্দেহ করিবার এই একটি প্রধান কারণ! মানুষের চরিত্রে এত প্রকার বিরোধী ভাব মিশ্রিত আছে যে, ওরূপ একদিক মাত্ৰ দেখিয়া কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে গেলে ভ্ৰমে পড়িতে হয়। র্তাহার সহস্র অহংকার থােক, তথাপি কত কারণবশত যে তিনি তাহার নিজের নাম প্ৰকাশ করেন নাই তাহা কে বলিতে পারে ? তাহার চালিত ভাষায় লিখিত ছোটোখাটো কবিতাগুলিতে র্তাহার নিজের নাম প্রকাশ করিতেন ও তাহা লইয়া যথেষ্ট গর্ব অনুভব করিতেন, আর র্তাহার প্রাচীন ভাষায় রচিত কবিতাগুলি যদিও খুব গর্বের সহিত সকলকে শুনাইতেন, তথাপি তাহাতে নিজের নাম ব্যবহার করিতেন না, ইহার কারণ খুজিতে গেলে যে একেবারে নিরুপায় হইয়া পড়িতে হয় তাহা নহে। যতদূর জানা যায়, তাহাতে দেখিতে পাওয়া যায়, তিনি তাহার নিজের লিখিত প্ৰাচীন ভাষার কবিতাগুলিকে অতিশয় ভক্তির চক্ষে দেখিতেন, যেরূপ তাহার ভক্তি যে তদপেক্ষা নূ্যন ছিল, তাহা নহে; কল্পনার মোহিনী-মায়ায় মানুষ নিজহস্তগঠিত প্রতিমাকে দেবতার মতো পূজা করে ও সেই কল্পনার ইন্দ্ৰজালে চ্যাটার্টন সাধারণ লোকের অনধিগম্য পবিত্ৰ মৃত ভাষায় যে কবিতা লিখিতেন তাহা এক প্রকার সম্রামের সহিত নিরীক্ষণ করিতেন। যেন সেগুলি তাহার নিজের সাধ্যায়ত্ত কবিতা নহে, যেন প্রাচীন যুগের কোনো মৃত কবির আত্মা তাঁহাতে আবির্ভূত হইয়া তাহার মুখ দিয়া সেই কবিতা বলাইয়াছেন মাত্র। সামান্য