পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

माश्ठिा SSRC? ভালো কি না যে, বাঙালি জাতিকে বিশেষরূপে কবি জাতি বলা যাইতে পারে। তুমি জান যে, অতিরিক্ত মোটা মানুষেরা সহজে নড়িতে চড়িতে পারে না ও অল্প পরিশ্রমে হাঁপাইয়া পড়ে। দৃশ্যমান ব্যক্তি-বিশেষ মােটা কি না, জানিতে হইলে, তুমি কি প্রথমে দেখিবে সে ব্যক্তি সহজে নড়িতে চড়িতে পারে কি না ও অল্প পরিশ্রমে হাঁপাইয়া পড়ে কি না, ও তাহা হইতে মীমাংসা করিয়া লইবে সে ব্যক্তি মোটা? আমাকে যদি জিজ্ঞাসা কর তো আমি বলি, তাহা অপেক্ষা সহজ উপায় হইতেছে, তাহার প্রকাশমান শরীরের আয়তন দেখিয়া তাহাকে মোটা স্থির করা। : বাংলা ভাষায় কয়টিই বা কবিতা আছে? এমন কবিতাই বা কয়টি আছে, যাহা প্রথম শ্রেণীর কবিতা বলিয়া গণ্য হইতে পারে? কয়টি বাংলা কাব্যে এমন কল্পনা প্ৰকাশিত হইয়াছে, সমস্ত জগৎ যে কল্পনার ক্রীড়াস্থল। যে কল্পনা দুর্বল-পদ শিশুর মতো গৃহের প্রাঙ্গণ পার হইলেই টলিয়া পড়ে না? যে কল্পনা সূক্ষ্ম দ্রব্যেও যেমন অনুপ্রবিষ্ট, তেমনি অতি বিশাল দ্রব্যকেও মুষ্টির মধ্যে রাখে। যে কল্পনা বসন্ত বায়ুর অতি মৃদু স্পর্শে অচেতনের মতাে এলাইয়া পড়ে, এবং শত ঝটিকার বলে হিমালয়ের মতো অটল শিখরকেও বিচলিত করিয়া তোলে। যে কল্পনা, যখন মৃদু। তখন, জ্যোৎস্নার মতো, যখন প্রচণ্ড তখন ধূমকেতুর ন্যায়। কোনো বাংলা কাব্যে কি মনুষ্য চরিত্রের আদর্শ চিত্রিত দেখিয়াছ? নানাপ্রকার বিরোধী মনোবৃত্তির ঘোরতর সংগ্রাম বৰ্ণিত দেখিয়াছ ? এমন মহান ঘটনা জীবস্তের মতো দেখিয়াছ যাহাতে তোমার নেত্ৰ বিস্ফারিত ও সর্বাঙ্গ পুলকিত হইয়া উঠিয়াছে? কোনাে বাংলা কাব্য পড়িতে পড়িতে তোমার হৃদয়ে এমন ঝটিকা বহিয়া গিয়াছে, যাহাতে তোমার হৃদয়ে পর্বতপ্রমাণ তরঙ্গ উঠিয়াছে, অথবা পুষ্প-বাস-স্নিগ্ধ এমন মৃদু বায়ু সেবন করিয়াছ যাহাতে তোমার হৃদয়ের সমস্ত তরঙ্গ শাস্ত হইয়া গিয়াছে, নেত্ৰ মুদিয়া । আসিয়াছে ও হৃদয়কে জীবন্ত জোৎস্নার মতো অশরীরী ও অতি প্রশান্ত আনন্দে মগ্ন মনে । প্রাচীন বঙ্গসাহিত্যে মহাকাব্যই নাই। কবিকঙ্কণচণ্ডীকে কি মহাকাব্য বল? তাহাকে উপাখ্যান । বলা যাইতে পারে। কিন্তু তাহা কি মহাকাব্য ? কালকেতু নামে এক দুঃখী ব্যাধ কোনোদিন বা খাইতে পায় কোনোদিন বা খাইতে পায় না। যেদিন খাইতে পায়, সেদিন সে চারি হাঁড়ি ক্ষুদ, ছয় হাঁড়ি দাল ও বুড়ি দুই-তিন আলু-ওল পোড়া খায়। “ছোটাে গ্রাস তোলে যেন তেআটিয়া তাল।” “ভোজন করিতে গলা ডাকে হাড় হড়।” এই ব্যক্তি চণ্ডীর প্রসাদে রাজত্ব পায়। কিন্তু । তাহার রাজসভায় ও একটি ছোটােখাটাে জমিদারি কাছারিতে প্ৰভেদ কিছুই নাই। তাহার রাজত্বে “হানিফ গোপ” ক্ষেতে শস্য উৎপন্ন করে; ভঁড় দত্ত বলিয়া এক মোড়ল আসিয়াছে, তাহার। “ফেঁটা কাটা মহা দম্ভ, ছেড়া যোড়া কেঁচালম্ব শ্রবণে কলম খরশাণ ।।’’ ধনপতি নামে এক সদাগর আছে; সোনার পিঞ্জর গড়াইতে সে ব্যক্তি গীেড় দেশে যায়, তাহার দুই পত্নী ঘরে বসিয়া চুলচুলি করে। দুর্বলা বলিয়া তাহাদের এক দাসী আছে, সে উভয়ের কাছে উভয়ের নিন্দা করে, ও দুই পক্ষেই আদর পায়। সমস্ত কাব্যই এইরূপ। গ্রন্থারম্ভে দেবদেবীদের কথা উত্থাপন করা হইয়াছে। কিন্তু কবিকঙ্কণের দেবদেবীরাও নিতান্ত মানুষ, কেবলমাত্র মানুষ নহে, কবিকঙ্কণের সময়কার বাঙালি। হরগীেরীর বিবাহ, মেনকার খেদ, নারীগণের পতিনিন্দা, হরগীেরীর কলহ পড়িয়া দেখো দেখি। কবিকঙ্কণ মহাকাব্য নহে। আয়তন বৃহৎ হইলেই কিছু তাহাকে মহাকাব্য বলা যায় না। ভারতচন্দ্রর কথা উল্লেখ করাই বাহুল্য। তাহার মালিনী মাসি, তাহার বিদ্যা, তাহার সুন্দর, তাহার রাজা ও কোটালকে মহাকাব্যের বা প্রথম শ্রেণীর কাব্যের পাত্ৰ বলিয়া কাহারও ভ্রম হইবে না। বিদ্যাসুন্দর পড়িয়া কাহারও মনে কখনো মহানভােব বা যথার্থ সুন্দর ভাবের উদয় হয় নাই। কিন্তু এ গ্রন্থটি বাঙালি পাঠকদের রুচির | এমন উপযোগী করিয়া রচিত হইয়াছে, যে, বঙ্গীয় আবালবৃদ্ধ বনিতার ইহা অতি উপাদেয় እ % | $ (ሉ