পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য । ՀՀԳ মিষ্ট গান আছে, কিন্তু সেইগুলি লইয়াই কি বাঙালি জাতি অন্যান্য জাতির মুখের কাছে হাত নাড়িয়া বলিতে পারে যে, বাঙালি কবি ? उठाली @i? > &bra বাঙালি কবি নয় কেন ? “বাঙালি কবি নয় কেন?” এ প্রশ্ন লইয়া গভীর ভাবে আলোচনা করিতে বসিলে চিন্তাশীল ব্যক্তিদের হয়তো ঈষৎ হাস্যরসের উদ্রেক হয়। র্তাহারা বলিবেন, প্রথম প্রশ্ন হউক, “বাঙালি কী” পরে দ্বিতীয় প্রশ্ন হইবে, “বাঙালি কী নয়”! যদি জিজ্ঞাসাই করিতে হইল, তবে অনেক কথা জিজ্ঞাসা করা যায় “বাঙালি দার্শনিক নয় কেন”, “বাঙালি বৈজ্ঞানিক নয় কেন”, “বাঙালি শিল্পী নয়। কেন”, “বাঙালি বণিক নয় কেন” ইত্যাদি ইত্যাদি। বাঙালি জাতির মতো এমন একটা অভাবাত্মক গুণসমষ্টির সম্বন্ধে যদি প্রশ্ন করা যায় যে বাঙালিতে অমুক বিশেষ গুণের অভাব দেখা যায় কেন, তাহা হইলে শ্রোতারা সকলে সমস্বরে হাসিয়া উঠিয়া কহিবেন বাঙালিতে, কী গুণের ভাব দেখিতে পাইতেছ? এরূপ ঘটনায় আমাদের মনে আঘাত লাগিতে পারে। কিন্তু ইহার বিরুদ্ধে কি আমাদের একটি কথা কহিবার আছে? “বাঙালি কী” ইহা অপেক্ষা দুরূহ সমস্যা কি আর কিছু হইতে পারে? ও বাঙালি কী নয়। ইহা অপেক্ষা সহজ প্রশ্ন কি আর আছে? তবে আজ, বাঙালি কবি নয় কেন, এ প্রশ্ন লইয়া আলোচনা করিতে বসিবার তাৎপর্যকী ? তাহার তাৎপর্য এই যে, আজকাল শত সহস্ৰ বঙ্গীয় বালক আধা পয়সা মূলধন লইয়া (বিদেশী মহাজনাদিগের নিকট হইতে ধার করা) দিন রাত প্রাণপণপূর্বক বাংলা সাহিত্য-ক্ষেত্রে কবিত্ব চাষ করিতেছেন; আজ যখন দেখিলেন বাংলা সাহিত্য-ক্ষেত্র তাহদের যত্নে কাটা গাছ ও গুলেম পরিপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে, তখন তাহারা কপালের ঘাম মুছিয়া হৰ্ষ-বিস্ফারিত নেত্ৰে দশ জন প্রতিবাসীকে ডাকিয়া কহিতেছেন, “আহা, জমি কী উর্বর!” বঙ্গবাসীগণ স্বপ্নেও স্বজাতি দার্শনিক বা বৈজ্ঞানিক বলিয়া অহংকার করিয়া বেড়ান না, অতএব সে বিষয়ে তাহাদের আত্মবিস্মৃতি লক্ষিত হয় না; কিন্তু সম্প্রতি দেখিতেছি তাহারা রাশীকৃত অসার কবিত্বের খড় তঁহাদের কাক-পুচ্ছে গুজিয়া দিন রাত্রি প্রাণপণে পেখম তুলিয়া থাকিতে চেষ্টা করেন, এমন-কি, ভালো ভালো কুলীন ময়ূরদের মুখের কাছে অম্লান বদনে পেখম নাড়িয়া আসেন; অতএব স্পষ্টই দেখা যাইতেছে ময়ুর বলিয়া তাঁহাদের মনে মনে অত্যন্ত অভিমান হইয়াছে। কিন্তু র্তাহাদিগকে দশ জন লোক নিযুক্ত রাখিতে হইয়াছে, যাহারা অগ্ৰে অগ্ৰে যাইয়া উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করিতে থাকে, “আমাদের পশ্চাতে যাঁহাদের দেখিতেছি, তাহারা কাক নন, তাহারা ময়ূর!” আজকাল তো এইরূপ দেখিতেছি। বহুদিন হইতে ভাবিতেছি, বাঙালি কেন আপনাকে কবি বলিয়া এত অহংকার করে, জিজ্ঞাসা করিলে অনেকে বলে, “দেখিতেছি না, আজকাল বাংলার সকলেই কবিতা লেখে।” সকলেই মিত্ৰাক্ষর ও অমিত্ৰাক্ষর ছন্দে বাংলা বর্ণমালা কাগজে গাঁথিতেছে, তাহা দেখিয়াই যদি বাঙালি জাতিকে বিশেষ রূপে কবি জাতি আখ্যা দেও, হে চাষা, ক্ষেত্রে অগণ্য কঁটা গাছ দেখিয়া সে ভ্ৰম ভাঙা আবশ্যক। যদি এমন একটা কথা উঠে যে, ইংরাজ কবি কেন, তবে তাহা লইয়া দুই দণ্ড আলোচনা করিতে ইচ্ছা করে। ভাবিয়া দেখিলে কি আশ্চর্য বোধ হয় না যে, যে ইংরাজেরা এমন কাজের লোক, যাহাদের ব্যবসায়, সময়কে যাহারা কান ধরিয়া খাটাইয়া লয়, একটি মিনিটকেও ফাঁকি দিতে দেয় না, জীবিকার জন্য যাহাদিগকে সংগ্রাম করিতে হয়, বাহ্য সুখসম্পাদই