পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RGV) রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী (mystery) ধরিতে গেলে স্ত্রী-পুরুষের প্রেমের অপেক্ষা সস্তান-বাৎসল্য পৃথিবীতে অধিক বৈ কম নহে। কিন্তু কবিতায় তাহার নিতান্ত অল্পতা কেন দেখা যায় ? মানব-হৃদয়ের এমন একটা প্রবল প্রবৃত্তি কবিতায় আপনাকে ব্যক্ত করে নাই কেন ? তাহার কারণ আমার বোধহয় রহস্য সৌন্দর্যের আশ্রয়স্থল; স্ত্রীপুরুষের প্রেমের মধ্যে সেই রহস্য আছে, কিন্তু সস্তান-বাৎসল্যের মধ্যে সেই রহস্য নাই। খাদ্যের প্রতি ক্ষুধার আকর্ষণের রহস্য নাই, তেমনি সস্তানের প্রতি জননীর আসক্তির মধ্যে রহস্য নাই। অবশ্য রহস্য আছে, কিন্তু লোকের সহজেই মনে হয় আপনার পেটের ছেলেকে ভালোবাসিবে না তো কী! কিন্তু স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে আকর্ষণ সে এক অপূর্ব রহস্যময়। কাহাকে দেখিয়া কাহার প্রাণে যে কী সংগীত বাজিয়া উঠে, তাহার রহস্যের কেহ অন্ত পায় না। সৌন্দর্য সর্বাপেক্ষা রহস্যময় তাহার নিয়ম কেহ জানে না। ধর্মের মধ্যে দুই জায়গায় কবিতা আছে। এক, ঈশ্বরকে অতি মহান কল্পনা করিয়া; মেঘের মধ্যে, বজ্ৰনিৰ্ঘোষের মধ্যে, অগ্নি, বিদ্যুৎ সূর্যের রুদ্র তেজের মধ্যে র্তাহার ভীষণ রহস্যের আভাস উপলব্ধি করিয়া। আর-এক, তাহাকে প্রকৃতির সৌন্দর্যের মধ্যে আপন হৃদয়ের প্রেমের মধ্যে সুন্দর বলিয়া জানিয়া। Old Testament-এ এবং বেদে অনেক গাথা আছে যাহা ঈশ্বরের সেই রুদ্র রহস্য উদ্দেশ করিয়া গীত। এবং ঈশ্বরের সৌন্দর্য রহস্যের বৈষ্ণব কবিদের গান উঠিয়াছে। ঈশ্বর আমাদিগকে লালনপালন পোষণ করিতেছেন, সংসার বিধিবদ্ধ করিয়া আমাদিগকে রক্ষা করিতেছেন- এ ভাব হইতে কবিতা উঠে নাই। পরিবারিক স্মৃতিলিপি পুস্তক So/SS/Sbrtrb. সৌন্দর্য ৫।৩-সংখ্যক প্ৰস্তাবে বড়দাদা সৌন্দৰ্য সম্বন্ধে যে প্রশ্ন উত্থাপন করিয়াছেন তাহার রীতিমতো উত্তর দেওয়া দুঃসাধ্য। সে সম্বন্ধে দু-একটা কথা যাহা বলিবার আছে বলি। “নিজে না মাতিলে অন্যকে মাতানো যায় না।” এ কথাটা অতি অল্প জায়গায় খাটে। অধিকাংশ স্থলেই যে মাতাইবে তাহাকে মাতিলে চলিবে না। ‘মাতা” বলিতে বুঝায় প্রবৃত্তির তরঙ্গে বুদ্ধির হাল ছাড়িয়া দেওয়া। নিজের উপরে নিজের প্রভুত্ব চলিয়া যাওয়া। বাগ্মী, যিনি বক্তৃতা করিয়া দেশ মাতাইতে চান, তাহার এমনি ঠিক থাকা আবশ্যক যে, মাতা’ না মাতা তাহার সম্পূর্ণ ইচ্ছাধীন হয়। বাষ্পকে অধিকারায়ত্ত করিয়া যেমন কল চলে তেমনি নিজের মনোবৃত্তিকে সম্পূর্ণ দখলে রাখিয়া তবে দশজনের মনোবৃত্তি নিজের অভিপ্ৰায়মতো উদ্রেক করা যাইতে পারে। তবে এই কথা বলা যায় বটে যাহার হৃদয় নাই। সে অন্যের] হৃদয় বিচলিত করিতে পারে না- কিন্তু প্রবৃত্তির প্রাবল্যবশত নিজের উপর যাহার অধিকার নাই সে আপনি যতই চঞ্চল হীেক অন্যকে ... অতএব “নিজে না মাতিলে অন্যকে মাতানো যায় না।” এ কথা ঠিক] নহে। ] সে যাহাঁই হীেক, নিজের মনের ভাব অন্যের মনে উদ্রেক করিতে হইলে প্রথমেই নিজের মনের ভাব থাকা আবশ্যক এ কথা বলাই বাহুল্য। কিন্তু সৌন্দর্য তো মনের ভাব নহে- সুতরাং এক হৃদয়বৃত্তি অন্য হৃদয়ে যে সমবেদনার নিয়মে সঞ্চারিত হয় সে নিয়ম এখানে খাটে না। আমার তো মনে হয় সৌন্দর্য স্বভাবতই অপ্ৰমত্ত কারণ পৃথিবীতে সৌন্দর্যই পরিপূর্ণতার আদর্শ। পরিপূর্ণতার সহিত মত্ততা শোভা পায় না। সৌন্দর্যের আপনার মধ্যে আপনার একটি