পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

总心这 রবীন্দ্র-রচনাবলী করিতে হয়— মনকে কর্তৃত্বভার গ্রহণ করিতে হয়। কিন্তু সৌন্দর্যের নিকট মন নিশ্চেষ্টভােব ধারণ করিয়া উপভোগ করে। মনের চেষ্টা শান্ত করিতে না পারিলে সেই সৌন্দর্য উপভোগের ব্যাঘাত হয়। অপরিচিত সাহিত্যে বিশেষত অপরিচিত সংগীতে সেই চেষ্টা অবিশ্রাম জাগ্ৰত থাকে। মুম্বািড়" শব্দ ও স্বরবিন্যাসে মুহুর্তে মুহুর্তে মনের বিষয় উল্লেক কািরয়া তাহাকে উদভ্ৰান্ত SR (Asia | পারিবারিক স্মৃতিলিপি পুস্তক N2 Ş O rS সৌন্দর্য সম্বন্ধে গুটিকতক ভাব সৃষ্টিকার্যের মধ্যে সৌন্দৰ্য সর্বাপেক্ষা আশ্চর্য রহস্যময়। কারণ, জগৎরক্ষায় তাহার একান্ত উপযোগিতা দেখা যায় না। সৌন্দৰ্য অন্ন নহে, বস্ত্ৰ নহে, তাহা কাহারও পক্ষে প্ৰত্যক্ষরাপে আবশ্যক নহে। তাহা আবশ্যকের অতিরিক্ত দান, তাহা ঈশ্বরের প্ৰেম। যাহা কেবলমাত্র আবশ্যক- যাহা নাহিলে নয় বলিয়া চাই, তাহাতে আমাদের দারিদ্র্য স্মরণ করাইয়া দেয়। এইজন্য তাহার প্রতি আমরা অনেক সময় অবজ্ঞা প্ৰকাশ করিয়া আপনার মর্যাদা উপলব্ধি করিবার চেষ্টা করি। উদরপূর্তিকে আমরা হাতে কলমে অবহেলা করিতে পারি না, কিন্তু মুখে তাহার প্রতি যথেষ্ট দূরছাই প্রয়োগ করি। বুদ্ধি-চৰ্চাের আনন্দকে আমরা উচ্চতর আসন দিই। তাহার একটা কারণ, উদীরচর্চা অপেক্ষা বুদ্ধিচর্চা অধিকতর পরিমাণে আমাদের স্বাধীন ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। বিদ্যালোচনা না করিলে তুমি মুর্থ হইবে কিন্তু মারা পড়িবে না। সংসারে যদি কেবল নির্জল আবশ্যকটুকুমাত্র থাকিত তবে আমরা জগদীশ্বরের দ্বারে ভিক্ষুকররূপে থাকিতাম। তাহা হইলে আমাদিগকে নিতান্তই কেবল দায়ে ফেলিয়া রাখা হইত। সঙ্গে সঙ্গে প্ৰেম থাকিলে ভিক্ষা আর ভিক্ষাই থাকে না, যেমন জননীর নিকট হইতে অভাব Ceben | সৌন্দর্য সেই প্রেমের লক্ষণ, আমাদের মন ভুলাইবার চেষ্টা। যদি সংসারের কাজ লওয়াই উদ্দেশ্য হয় তবে আমাদের মনােহরণের চেষ্টা বাহুল্য। জগতের বড়ো বড়ো দানব-শক্তির মাঝখানে ক্ষুদ্র প্রাণীদের নিকট হইতে অনায়াসে কান ধরিয়া কাজ আদায় করিয়া লওয়া যাইতে পারিত। জগতের সৌন্দৰ্য বাপুবাছা বলিয়া আমাদের গায়ে হাত বুলাইতেছে কেন? ওইখানেই যন্ত্রনিয়মের উপরে প্রেমের নিয়ম দেখা দিতেছে। খাদ্যের সহিত রস, শব্দের সহিত সংগীত, দৃশ্যের সহিত আকার ও বর্ণসুষমা, ইহাতেই প্রেমের হাত দেখা যায়। আমরা টিকিয়া থাকিব প্রকৃতির আত্মরক্ষার পক্ষে ইহাই যথেষ্ট, কিন্তু আনন্দে থাকিব। ইহা বাড়ার ভাগ- বিশেষত তাহার জন্য আয়োজন তো কম করিতে হয় নাই! গ্ৰহতারা তো বেশ চলিতেছে, গাছপালা তো বেশ স্বাদহীন আহার করিয়া অন্ধ ও বধির ভাবে বংশবৃদ্ধি করিতেছে! কিন্তু যেখানেই চেতনার সঞ্চার করা হইয়াছে সেইখানেই কেবলমাত্র শক্তি নহে, তদন্তিরিক্ত প্ৰেম অনুভব করানো হইতেছে। শক্তিকে মধুর করিয়া তুলিবার চেষ্টা দেখা যাইতেছে। শক্তির মধ্যে কার্যকরণশঙ্খলা দেখা যায়- এইজন্য তাঁহা কিয়ৎ-পরিমাণে বিজ্ঞানের আয়ত্ত। কিন্তু সৌন্দর্যের মধ্যে ইচ্ছা দেখা যায়, এইজন্য বিজ্ঞান সেখানে প্রতিহত। এইজন্য সৌন্দর্য অতীব । এইজন্য সৌন্দর্য অনাবশ্যক হইয়াও আমাদের আত্মার মধ্যে আলোড়ন উপস্থিত করে। যেন ওইখানে অনন্তের সহিত আমাদের নাড়ির টান উপলব্ধি করা যায়।