পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հ Գ Տ রবীন্দ্র-রচনাবলী পৃথিবীর কোনো উপকার প্রত্যাশা করি, এবং বিরুদ্ধ মতের দ্বারা সমাজের অনিষ্ট আশঙ্কা করা যায়। তবে যতক্ষণ প্রমাণ দেখাইতে পারিব ততক্ষণ নিজের মত প্রচার করিব ও বিরুদ্ধ মত খণ্ডন করিব ইহা আমার সর্বপ্রধান কর্তব্য। এ কার্য যদি বারংবার করার আবশ্যক হয় তবে বারংবারই করিতে হইবে। কবে পৃথিবীতে এক কথায় সমস্ত কার্য হইয়া গিয়াছে? কোন বদ্ধমূল ভ্রমের মূলে সহস্রাবার কুঠারাঘাত করিতে হয় নাই ? আমি যাহা সত্য বলিয়া জানি তাহা বারংবার প্রচার করিতে চেষ্টা করিয়াও অবশেষে কৃতকাৰ্য না হইতে পারি, আত্মক্ষমতার প্রতি এ সংশয় আমার যথেষ্ট আছে, তবু কর্তব্য যাহা তাহা পালন করিতে হইবে এবং যদি চন্দ্রনাথবাবুর সহিত আমার পুনর্বার মতের অনৈক্য হয় এবং তঁহার কথার যদি কোনো গীেরব থাকে। তবে আপনারা যিনি যেরূপ অৰ্থ বাহির করুন আমাকে পুনর্বার প্রতিবাদ করিতে হইবে। পুঃ— অনুগ্রহপূর্বক নিম্নলিখিত পত্ৰখানি প্রকাশ করবেন। —শ্ৰীরঃ সাহিতা বৈশাখ ১৩০০ সাহিত্যের গৌরব । মীেরস য়োকাই হঙ্গ্যেরি দেশের একজন প্রধান লেখক। র্তাহার সাহিত্যচর্চায় প্রবৃত্ত হইবার পর পঞ্চাশৎবার্ষিক উৎসব সম্প্রতি সম্পন্ন হইয়া গিয়াছে। দেশের আপামর সাধারণ কীরূপ মহােৎসাহের সহিত এই উৎসবে যোগদান করিয়াছিল তাহা সংবাদপত্রপাঠকগণ অবগত আছেন। সেই উৎসব-বিবরণ পাঠ করিলে তাহার সহিত আমাদের দেশে বঙ্কিমচন্দ্রের বিয়োগজনিত শোকপ্রকাশের তুলনা স্বতই মনে উদয় হয়। ভিক্টর হুগোর মৃত্যুর পর সমস্ত ফ্রান্স কীরূপ শোকাকুল হইয়া উঠিয়ছিল বর্তমান প্রসঙ্গে সে কথা উত্থাপন করিতে লজ্জা বোধ হয়, কারণ, ফ্রান্স য়ুরোপের শীর্ষস্থানীয়। বীরপ্ৰসবিনী হঙ্গ্যোরির সহিতও নিজীব বঙ্গদেশের তুলনা হইতে পারে না, তথাপি অপেক্ষাকৃত অসংকোচে তাহার নামোল্লেখ করিতে পারি। }- আমরা যে বহু চেষ্টাতেও আমাদের দেশের মহাত্মাগণকে সম্মান এবং শ্ৰীতি উপহার দিতে পারি না, আর যুরোপের একটি ক্ষুদ্র দুর্বল রাজ্যে রাজায়-প্রজায় মিলিয়া সামান্যবংশজাত সুজন সাহিত্যব্যবসায়ীকে এমন অপর্যাপ্ত হৃদয়ােক্সাসে অভিষিক্ত করিয়া তুলি ইহার কারণ ইহার প্রধান কারণ এই যে, সেখানে লেখক এবং পাঠক এক প্ৰাণের দ্বারা সঞ্জীবিত, পরস্পরের মধ্যে বিচ্ছেদ নাই। সেখানে সমস্ত দেশের লোক মিলিয়া একজাতি। তাহারা এর উদ্দেশ্যে এক জাতীয় উন্নতির অভিমুখে ধাবিত হইতেছে, তাহাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সরলপথ নির্দেশ করিতেছে, সে সর্বসাধারণের কৃতজ্ঞতাভাজন হইতেছে। আমাদের দেশে পথিক নাই। সুতরাং পথ খনন করিয়া কেহ যশস্বী হইতে পারে না। বঙ্কিম বঙ্গসাহিত্যের রাজপথ খনন করিয়া দিয়া গিয়াছেন, কিন্তু হায়, বঙ্গসাহিত্য কোথায়, বাঙালি জাতি কোথায়! যাহারা বাংলা লেখে তাহারাই বা কয়জন, যাহারা বাংলা পড়ে তাহদেরই বা ? সংখ্যা কত! বঙ্গসাহিত্য যে জাতীয়-হৃদয় অধিকার করিবার আশা করিতে পারে সে হৃদয় কোনখানে! পূর্বকালে যখন আমাদের দেশে সাধারণজাতি নামক কোনো পদার্থ ছিল না। তখন অন্তত রাজসভা ছিল। সেই সভা তখন সৰ্বসাধারণের প্রতিনিধি ছিল। সেই সভার মন হরণ করিতে পারিলে, সেই