পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Rbro . । ब्रशैक्ष-शष्नावनी আদিত্য। তাহা হইলে দেখিতে হইবে, কিসে ব্যক্তিত্ব প্ৰকাশ করে। কেবলমাত্র তথ্য নিতান্ত সাদা ভাষায় বলা যায়, কিন্তু তাহার সহিত হািদয়ের ভাব ব্যক্ত করিতে গেলেই ভাষা নানাপ্রকার আকার-ইঙ্গিতের সাহায্যে নিজের মতো করিয়া গড়িয়া তুলিতে হয়। তাহাকেই কি ইংরাজিতে ম্যানার এবং বাংলায় রচনাভঙ্গি বলা যায় না? মন্মথ। কেবল রচনার ভঙ্গি নহে, দেখিবার সামগ্ৰীটাও বিচাৰ্য। এমন-কি, কেবলমাত্র হৃদয়ের ভাবও নহে, কে কোন জিনিসটাকে বিশেষ করিয়া দেখিতেছে তাহার উপরেও তাহার ব্যক্তিত্ববিকাশ নির্ভর করে। কেমন করিয়া দেখিতেছে এবং কী দেখিতেছে এই দুটা লইয়াই – সাহিত্য। কেমন করিয়া দেখিতেছে সেটা হইল হািদয়ের এলাকা এবং কী দেখিতেছে সেটা হইল VGS(GRS "p আদিত্য। তুমি কি বলিতে চাও, সাহিত্যের উপযোগী কতকগুলি বিশেষ দেখিবার বিষয় আছে? অর্থাৎ, কতকগুলি বিষয় বিশেষরূপে সাহিত্যের এবং কতকগুলি তাহার বহির্ভূত ? মন্মথ। আমি যাহা বলিতে চাই তাহা এই- জ্ঞানস্পাহা সৌন্দৰ্যপূহ প্রভৃতি আমাদের অনেকগুলি স্বতন্ত্ৰ মনোবৃত্তি আছে, বিজ্ঞান দর্শন এবং কলাবিদ্যা প্রভৃতিরা সেগুলোকে স্বতন্ত্ররূপে চরিতাৰ্থ করে। বিজ্ঞানে কেবল জিজ্ঞাসাবৃত্তির পরিতৃপ্তি, সংগীত প্রভৃতি কলাবিদ্যায় কেবল সৌন্দর্যবৃত্তির পরিতৃপ্তি, কিন্তু সাহিত্যে সমস্ত বৃত্তির একত্ৰ সামঞ্জস্য। অন্তত সাহিত্যের সেই চরম চেষ্টা, সেই পরম গতি। নগেন্দ্র। সাহিত্যের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আর-একটু খোলসা করিয়া বলো, শুনা যাক। মন্মথ। ম্যাথু আর্নলড়ি বলেন, সাহিত্যের উদ্দেশ্য মনুষ্যত্ব বিকাশ করা। জ্ঞানসম্পূহ সৌন্দর্যম্পুহা প্রভৃতি মানুষের যতগুলি উচ্চ প্রবৃত্তি আছে তাহার, প্রত্যেকটার পরিপূর্ণ পরিণতির সহায়তা করা। আমার মতে শিক্ষাবিধানকে গৌণ করিয়া আনন্দ-উদ্রেককে মুখ্য করিলে সেই উদ্দেশ্য-সাধন হইতে পারে। নগেন্দ্র। বেশ কথা। তাহা হইলে শেষে দাঁড়ায় এই যে, হৃদয়ের প্রতিই সাহিত্যের প্রধান অধিকার, মুখ্য প্রভাব। এ স্থলে নীতিবোধকেও আমি হৃদয়বৃত্তির মধ্যে ধরিতেছি। কারণ, সাহিত্যে হৃদয়পথ দিয়াই ধৰ্মবোধের উদ্দীপন করে, তর্কপথ দিয়া নহে। ] মন্মথ। এ সম্বন্ধে বক্তব্য আছে। সত্যকে দুই খণ্ড করিয়া দেখা যায়। প্রথম, চিন্তার বিষয়রাপে; দ্বিতীয়, অনুভবের বিষয়রাপে। কিন্তু সাহিত্য সত্যকে আমাদের কাছে জীবন্ত অখণ্ড সমগ্রভাবে উপনীত করে। প্রাকৃত বিজ্ঞানের নির্দেশ অনুসারে আমরা প্রকৃতিকে কেবলমাত্র বস্তু এবং ক্রিয়ার সমষ্টিরূপে মনে করিতে পারি; কিন্তু প্ৰকৃতিকে তার সমস্ত বস্তু এবং ক্রিয়া এবং সৌন্দৰ্য-সহযোগে একটি অখণ্ড সত্তাররূপে অনুভব করাইতে পারে যে-একটি একীভূত মানসিক নগেন্দ্ৰ। সত্য হৃদয়ের দ্বারা কিরাপে অনুভব করা যায় বুঝিলাম না। প্রকৃতির সৌন্দর্যকেই বা কী হিসাবে সত্য বলা যায় ধারণা হইল না। সৌন্দৰ্য বিশেষরূপে আমাদের যুদ্ধবৃত্তিকে উত্তেজিত করে, এই কারণে তাহ বিশুদ্ধরূপে হাদয়-সম্পৰ্কীয়। ইহাকে যদি সত্য নাম দিতে চাও তবে ভাষার জটিলতা বাড়িয়া উঠিবে। নদী-অরণ্য-পর্বতের যে সমষ্টিকে আমরা প্রকৃতি বলি তাহার একটা বিভাগ হৃদয়-সম্পর্ক-বর্জিত, এইজন্য সেই বিভাগটাকে আমরা কেবলমাত্র বৈজ্ঞানিকভাবে আলোচনা করিতে পারি। কিন্তু তাহার যে দিকটা আমাদের হৃদয়ভাবকে উত্তেজিত করে সে দিকে সত্য-মিথ্যা উচিত-অনুচিত নই। এটা সুন্দর হওয়া উচিত বা উচিত নয় এমনও কোনো কথা নাই। সৌন্দৰ্য মানুষের মন এবং বহিঃপ্রকৃতির মধ্যগত একটা সম্বন্ধ মাত্র। সে সম্বন্ধ সর্বত্র এবং সর্বকালে সমান নহে, সেইজন্যই সাধারণত তাহকে বৈজ্ঞানিক কোঠা হইতে দূরে রাখা হয়। । মন্মথ। অনেক কথা আসিয়া পড়িল। আমার মোট কথাটা এই সাহিত্যের বিষয় সুন্দর,