পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

forg \O0 সংস্কৃত ভাষায় একটা শ্লোক আছে পরিক্ষীণঃ কশ্চিৎ স্পহয়তি যাবানাং প্রসৃতয়ে স। পশ্চাৎ সংপূর্ণঃ কলয়তি ধরিত্রীং তৃণসমাম। অতশচানৈক্যাস্ত্যাদি গুরুলঘুতয়াৰ্থেষু, ধনিনাম অবস্থা বস্তুনি প্রথয়তি চ সংকোচয়তি চ। VNঅর্থাৎ, দীন ব্যক্তি এইটুকু ইচ্ছা করিয়াই ক্ষান্ত হয় যে, তাহার যবের সঞ্চয়টুকু কিছু বাডুক, কিন্তু সেই ব্যক্তিই যখন পরিপূর্ণ হইয়া উঠেন তখন তিনি ধরিত্রীকে তৃণসমান দেখেন। অতএব অর্থ সম্বন্ধে গুরুলঘুতার কোনো একান্ততা নাই; ধনীর অবস্থাই বস্তু-সকলকে কখনো বড়ো করিয়া তোলে কখনো বা ছোটো করিয়া আনে। আমাদেরও সেই অবস্থা। আমাদের কোনো তরুণ প্রতিভান্বিত শিল্পী -রচিত মূর্তি প্রাচীন গ্ৰীসীয় মূর্তির সমকক্ষ না হইলেও আমরা সন্তুষ্ট থাকিব। যখন আমাদের তেমন দিন আসিবে, যখন ধরিত্রীকে তৃণসমান দেখিবার মতো অবস্থা আমাদের হইবে, তখন আমাদের ভালোমন্দ তুলনীয় বাটখারাও ওজনে বাড়িয়া চলিতে থাকিবে। অতএব যুরোপের কাছে যে জিনিস ছোটাে আমাদের কাছে সে জিনিস যথেষ্ট বড়ো- কারণ ধনীর অবস্থাই বস্তু-সকলকে কখনো ছোটো করে, কখনো বড়ো করিয়া তোলে। মাদ্রাজবাসী চিত্রশিল্পী রবিবর্মার দেশী ছবিগুলি যখন প্রথম আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় তখন তাহা যে পরিমাণ আনন্দ আমাদিগকে দান করিয়াছিল, ভাবী সমালোচকের অপক্ষপাত বিচারে তাহার সে পরিমাণ উৎকর্ষ প্রমাণিত হইবে কি না সন্দেহ। কিন্তু তাহা বুভুক্ষিতের রিক্তস্থালীর উপর যবের মুষ্টি বর্ষণ করিয়াছিল— আপাতত সেই যাবমুষ্টি ভবিষ্যতের পূর্ণোিদর ব্যক্তির স্বর্ণমুষ্টির চেয়ে বেশি। রবিবর্মার ছবিতে চিত্রকলা সম্বন্ধে কী সমস্ত অসম্পূর্ণতা আছে, সে-সকল বিচার আমরা যখন উপযুক্ত হইব, তখন করিব। কিন্তু সম্প্রতি আমাদের যে আনন্দ তাহা শুদ্ধমাত্র সৌন্দৰ্যসম্ভোগের আনন্দ নহে, তাহা আশার আনন্দ। আমরা দেখিতেছি। ভারতবর্ষের নিদ্রিত অন্তঃকরণের এক প্রান্তে সৌন্দর্যরচনার একটা চেষ্টা জাগিয়া উঠিতেছে। তাহা যতই অপরিস্ফুট অসম্পূর্ণ হউক-না-কেন, তাহা অত্যন্ত বিরাট আকারে আমাদের কল্পনাকে অভিভূত করিয়া । তোলে। প্রাচীন ভারতবর্ষের সেই যে-সকল যুগের ইতিহাসপ্ৰদীপ নির্বাপিত হইয়া গেছে, যে সময়ে এক অপূর্ব শিল্পচেষ্টা ভারতের নির্জন গিরিগুহায় এবং দেবালয়ের পাষাণপুঞ্জমধ্যে ভাবুকস্পর্শে-পাথরকে-প্ৰাণ-দেওয়া যুগ। ভবিষ্যতের দিগন্তপটে নুতন করিয়া প্রতিফলিত দেখিতে পাই। যদি-বা। আমাদের সূর্যচন্দ্ৰ নাও হন তথাপি আমাদের স্বদেশের অন্ধ রজনীতে র্তাহারা এক মহিমান্বিত ভবিষ্যতের দিকে আমাদিগকে পথ দেখাইয়া জাগিতেছেন। সম্ভবত সেই ভবিষ্যতের আলোকে তঁহাদের ক্ষুদ্র রশ্মিটুকু একদিন স্নান হইয়া যাইতে পারে। কিন্তু তথাপি তাহারা ধন্য। ভারতবর্ষ আজ পৃথিবীর সমাজচ্যুত। তাহাকে আবার সমাজে উঠিতে হইবে। কোনো-এক সূত্রে পৃথিবীর সহিত তাহার আদানপ্রদান আবার সমানভাবে চলিবে, এ আশা আমরা কিছুতেই ছাড়িতে পারি না। রাষ্ট্ৰীয় স্বাধীনতা আমরা কবে ফিরিয়া পাইব এবং কখনো ফিরিয়া পাইব কিনা সে কথা আলোচনা করা বৃথা। কিন্তু নিজের ক্ষমতায় জগতের প্রতিভারাজ্যে আমরা স্বাধীন আসন লাভ করিব এ আশা কখনোই পরিত্যাগ করিবার নহে। রাজ্যবিস্তারমন্দোদ্ধত ইংলন্ড। আজকাল উষ্ণমণ্ডলবাসী জাতিমাত্রকে আপনাদের গোষ্ঠের গোরুর মতো দেখিতে আরম্ভ করিয়াছেন । সমস্ত এশিয়া এবং আফ্রিকা তাহদের ভারবহন এবং