পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ধর্ম/দৰ্শন \9 RR বেদব্যাস বলিতেছেন, ন কৰ্ম্মবিভাগাদিতি চেন্ন অনাদিত্বাৎ। অর্থাৎ সৃষ্টির পূর্বে কর্মের বিভাগ ছিল না। এ কথা বলা যায় না যেহেতু কর্ম এবং সৃষ্টি কার্যকারণরীপে অন্যাদি। যেমন বীজ ও বৃক্ষ। বীজও বৃক্ষের কারণ এবং বৃক্ষও বীজের কারণ এইভাবে কোনো কালেও কাহারও আদি 에G II FII ইহা হইতে বুঝা যাইতেছে, কর্মের ফল সৃষ্টি এবং সৃষ্টির ফল কর্ম ইহার আর শেষ নাই। বোধ করি এ স্থলে কর্ম বলিতে যাহা বুঝায় ইংরাজি ফোর্স বলিতেও তাঁহা বুঝায়- অর্থাৎ এমন একটা কিছু বুঝায় যাহা আমরা ঠিক বুঝি না। অথচ বুদ্ধিগম্য একটা ছবির আভাস আমাদের মনে আসে, কিন্তু সেটা মিলাইয়া দেখিতে গেলে মিলাইতে পারি না। তথাপি যেমন করিয়াই দেখি এবং বেদান্তশাস্ত্রে যেমন ব্যাখ্যাই পাওয়া যায় শেষকালে দাঁড়ায় এই যে, আমরা কেন হইয়াছি এ প্রশ্নের কোনো অর্থ নাই। আমরা হইয়াছি- আমাদের হওয়াটা অনাদি। এবং হওয়াটিই দুঃখভোগের কারণ- সুতরাং কেন দুঃখভোগ করিতেছি। তাহারও কোনো কেনত্ব নাই। অতএব এ স্থলে মরল অথবা অন্য কোনো ‘নেসেসিটি” দেখা যায় না। মুক্তিতত্ত্ব সম্বন্ধে বক্তব্য এই যে, যখন অজ্ঞান অনাদি তখন সে অনন্ত। যতক্ষণ সে আছে ততক্ষণ কাহারও মুক্তি কল্পনা করা যায় না। কারণ, বেদান্ত মতে আমি সকলের অন্তৰ্গত এবং আমার অন্তর্গত সকলই, যতক্ষণ অজ্ঞান কোথাও আছে ততক্ষণ সে অজ্ঞান আমাকে বদ্ধ করিতেছে। এ যেন আপনার ছায়াকে আপনি লঙঘন করিবার চেষ্টা করার মতো। কেন ব্ৰহ্মা জগতের সৃষ্টি করিলেন। তদুত্তরে ব্ৰহ্মসূত্র কাহেন, লোকবত্ত্ব লীলাকৈবল্যং।। লোকেতে যেমন বালকেরা রাজা প্রভৃতি নানা রূপ ধারণ করিয়া লীলা করে জগৎও সেইরা ব্রহ্মের লীলামাত্র। এ মত অনুসারে, যাঁহার ইচ্ছাতেই জগৎ তাহার ইচ্ছা ব্যতীত জগতের মুক্তি হইতে পারে না। অর্থাৎ তিনি ইচ্ছা করিলে, অথবা ইচ্ছা প্রতিসংহার করিলে তাহার জগৎরাপ জীবরূপ দূর হইয়া তাহার শুদ্ধস্বরূপ প্ৰকাশ পাইতে পারে, অতএব এ স্থলে সমস্ত জগতের বিলয় ব্যতীত ব্যক্তিবিশেষের মুক্তির কোনো অর্থ থাকিতে পারে না। কারণ, ব্যক্তিবিশেষ হওয়া তাহার ইচ্ছা এবং ব্যক্তিবিশেষ না হওয়াও তাহার ইচ্ছা এবং ব্যক্তিবিশেষ না হইলেও যতক্ষণ জগৎ আছে ততক্ষণ তিনি লীলাররূপেই বিরাজ করবেন। ডয়সেন সাহেব অন্যত্র তাহার দর্শনগ্রন্থে প্রকৃতিসম্বন্ধীয় তত্ত্ববিদ্যা নামক পরিচ্ছেদে প্রথমে দেখাইয়াছেন যে, কন্টের অকাট্যযুক্তি অনুসারে দেশকাল ও কার্যকারণত্ব আমাদের বুদ্ধির ধর্ম, বাহিরের ধর্ম নহে। অতএব বস্তুকে যে আমরা বস্তুরূপে দেখিতেছি তাহা আমাদের বুদ্ধির রচনা। এই বুদ্ধির আরোপ বাহির হইতে উঠাইয়া লইলে যাহা অবশিষ্ট থাকে তাহাই বস্তুর যথার্থ স্বরূপ- সেই দেশকল কারণাতীত সত্তাকে অধ্যাপক মহাশয় শোপেনহীেয়ারের মতে উইল (ইচ্ছা) এবং বেদান্তমতে আত্মা বলিতেছেন। এই একমেবাদ্বিতীয়ম অনবচ্ছিন্ন উইল’ পদার্থের নেতি-আত্মক নিগুণ ভােবই বিশুদ্ধভাব- তাহাতে পাপ নাই, দুঃখ নাই, অস্তিত্ব নাই। এই বিশুদ্ধ, দুঃখবিহীন, কামনাবিহীন, নেতিত্বের আনন্দমধ্যে একটা মোহ একটা পাপের সূচনা দেখা দিল- (কোনো বিশেষকালে নহে, আজও বটে অনন্তকালও বটে অনন্তকালের পূর্বেও বটে) এই উইল এই আত্মা ইতি-আত্মক সগুণ ভােব ধারণ করিল। মূলের ভাষা উদধূত করি— Now there was formed- not at any time, but before all eternity, today and for ever, like an inexplicable clouding of the clearness of the heavens, in the pure, painless, and will-less bliss of denial a morbid propensity, a sinful bent : the affirmation of the Will to life. In it and with it is given the myriad host of all the sins and woes of which this immeasurable world is the revealer. মানব-বুদ্ধি চিরকাল প্রশ্ন করিতেছে সৃষ্টি হইল কেমন করিয়া ? দুঃখের উৎপত্তি হইল কেন?