পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

an WOWOO নবীন্দ্ররচনাবলী শংকরাচার্য এবং ডয়সেন উত্তর দিতেছেন- এক অনাদি অনির্বচনীয় পদার্থে এক অনাদি অনির্বচনীয় ছায়া পড়িল তাঁহাই সৃষ্টি তাঁহাতেই দুঃখ। ইহার সরল অর্থ এই সৃষ্টিই বা কী আর সৃষ্টির কারণই বা কী আর দুঃখ পাপই বা কেন তাহা কিছুই জানি না। এবং বেদান্ত মতে এই অনাদি অজ্ঞান হইতে মুক্তিই বা কীরূপে এবং মুক্তিই বা কাহার তাহাও সুস্পষ্টরূপে বলা যায় না। বৌদ্ধ নাস্তিবাদীরা কিছুই মানে না। তাহারা এ কথাও স্বীকার করে না যে, জগৎ প্রতিভাত হইতেছে। তাঁহাদের মতে ব্ৰহ্মাও নাই জগৎও নাই, আমিও নাই তুমিও নাই— তাহাদের যুক্তি কিছুকাল পূর্বে ‘সাধনায় অনুবাদ করিয়া দেখানো হইয়াছিল। যাহা অনাদিকাল আছে তাহা অনন্তকালে ধবংস হইতে পারে না, তাহাকে মায়াই বল আর সত্যই বল, অতএব তাহাকে একবার স্বীকার করিলে মুক্তি স্বীকার করা যায় না। কিন্তু নাস্তিবাদীরা কিছুই মানে না। তাঁহাদের পক্ষে সকল কথাই সহজ। যদি বলি কিছুই যদি নাই। তবে তুমি তাহা প্রমাণ করিতেছ। কী করিয়া। তখন তাহারা প্রমাণ করিতে বসে যে, তাহারা প্রমাণ করিতেছে না। যদি বলি, কিছুই যদি নাই। তবে তুমি মুক্তির কথা পাড় কেন- তখন সে বলে যখন আমিই নাই, তখন আমি কোনো কথা বলিতেছি। ইহাও হইতে পারে না। অতএব কোনো কথাই স্বীকার না করিলে গায়ের জোর খাটানো সহজ হয়। কিন্তু যখনই এক স্বীকার করা গেল অমনি দুই প্রমাণ করা অসাধ্য হইয়া দাঁড়ায় এবং দুই স্বীকার করিলেই তাহাকে এক বলিয়া চালানো কাহারও সাধ্যায়ত্ত নহে। যদি আমাকে জিজ্ঞাসা কর, তুমি কী বল ? আমি আদি অন্ত মধ্য কিছুই জানি না, আমি কেবল এইটুকু জানি, আমার হৃদয়ে যে প্রীতি ভক্তি দয়া স্নেহ সৌন্দর্যপ্ৰেম আছে তাহা অনন্ত চরিতার্থতা চায়- এমন-কি, আমার সেই- সকল আকাঙক্ষার মধ্যেই আমি অনস্তের আস্বাদ পুঃ পুঃ আমার সর্বসফলতা হিনিই ইন যেখানেই থাকুন, তিনিই আমার ব্ৰহ্মা তাঁহাতেই আমার মাক্তি । , সাধনা VE S \Oo » একদা পিতৃদেবের নিকট শুনিয়াছিলাম যে, বাল্যকালে অনেক সময়ে রামমোহন রায় তাহাকে মহাপুরুষের মুখ হইতে মুগ্ধদৃষ্টি ফিরাইতে পারিতেন না, তাহার মুখচ্ছবিতে এমন একটি সুগভীর সুগভীর সুমহৎ বিষাদচ্ছায়া সর্বদা বিরাজমান ছিল। পিতার নিকট বর্ণনা-শ্রবণ-কালে রামমোহন রায়ের একটি অপূর্ব মানসী মূর্তি আমার মনে জাজ্বল্যমান হইয়া উঠে। তাঁহার মুখশ্ৰীর সেই পরিব্যাপ্ত বিষাদমহিমা বঙ্গদেশের সুদূর ভবিষ্যৎকালের সীমান্ত পর্যন্ত মেহচিন্তাকুল কল্যাণকামনার কোমল রশ্মিজালরূপে বিকীর্ণ দেখিতে পাই। আমরা বঙ্গবাসী নানা সফলতা এবং বিফলতা, দ্বিধা এবং দ্বন্দ্ব, আশা এবং নৈরাশ্যের মধ্য দিয়া ধীরে ধীরে আপনার পথ নির্মাণ করিয়া চলিয়াছি। আমি দেখিতে পাইতেছি এখনো আমাদের প্রতি এবং আমরা যখন আমাদের সমস্ত চেষ্টার অবসান করিয়া এই জীবলোকের কর্মক্ষেত্র হইতে অবসৃত হইব, যখন নবতর বঙ্গবাসী নব নব শিক্ষা এবং চেষ্টা এবং আশার রঙ্গভূমি-মধ্যে অবতীর্ণ হইবে, তখনো রামমোহন রায়ের সেই স্নিগ্ধ গভীর বিষন্নবিশাল দৃষ্টি তাঁহাদের সকল উদ্যোগের প্রতি আশীর্বাদ বিকীর্ণ করিতে থাকিবে! আমার পিতাকে যেদিন রামমোহন রায় সঙ্গে করিয়া বিদ্যালয়ে লইয়া যাইতেছিলেন সেদিন আমাদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই ইহসংসারে ছিলেন না- সেদিন যে পথ দিয়া তাহার শকট মলিয়াছিল আদা সে পথেব মর্তি-পরিবর্তন