পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

9ܛ ܠ রবীন্দ্র-রচনাবলী কঁপিয়া উঠিল বেগে ক্ষুব্ধ হিমগিরি। জাহ্নবী উন্মত্তাপারা, নির্বাের চঞ্চল ধারা, বহিল প্ৰচণ্ড বেগে ভেদিয়া প্ৰস্তর। প্ৰবল তরঙ্গভরে, পদ্ম কঁপে থরে থরে, টলিল প্ৰকৃতি-সতী আসন-উপর। সুচঞ্চল সমীরণে, উড়াইল মেঘগণে, সুতীব্র রবির ছটা হল বিকীরিত। আবার প্রকৃতি-সতী আরম্ভিল গীত।-- “দেখিয়াছি তোর আমি সেই এক বেশ । অজ্ঞাত আছিলি যবে মানব নয়নে। নিবিড় অরণ্য ছিল এ বিস্তুত দেশ। বিজন ছায়ায় নিদ্রা যেত পশুগণে । কুমারী অবস্থা তোর সে কি পড়ে মনে ? সম্পদ বিপদ সুখ, হরষ বিষাদ দুখ কিছুই না জানিতিস সে কি পড়ে মনে ? সে—এক সুখের দিন হয়ে গেছে শেষযখন মানবগণ, করে নাই নিরীক্ষণ, তোর সেই সুদুৰ্গম অরণ্য প্রদেশ। না বিতরি গন্ধ হয়, মানবের নাসিকায় বিজনে অরণ্যফুল যাইত শুকায়ে— তপনকিরণ-তপ্ত, মধ্যাহের বায়ে । সে—এক সুখের দিন হয়ে গেছে। শেষ। সেইরাপ রহিলি না কেন চিরকাল । না দেখি মনুষ্যমুখ, না জানিয়া দুঃখ সুখ, না করিয়া অনুভব মান অপমান। অজ্ঞান শিশুর মতো, আনন্দে দিবস যেত, সংসারের গোলমালে থাকিয়া অজ্ঞান। তা হলে তো ঘটিত না এ-সব জঞ্জাল । সেইরূপ রহিলি না কেন চিরকাল। । সৌভাগ্যে হানিয়া বাজ, তা হলে তো তোরে আজ অনাথা ভিখারীবেশে কাদিতে হত না । পদাঘাতে উপহাসে, তা হলে তো কারাবাসে । সহিতে হত না শেষে এ ঘোর যাতনা। অরণ্যেতে নিরিবিলি, সে যে তুই ভালো ছিলি, কী কুক্ষণে করিলি রে সুখের কামনা। দেখি মরীচিকা হয় আনন্দে বিহবলপ্ৰায় f না জানি নৈরাশ্য শেষে করিবে তাড়না। নগারেতে পরিণত হল। তোর বন ।