পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ᏔbᏊᏔ2 রবীন্দ্র-রচনাবলী সভ্য করবেন বলিয়া মহা গোলযোগ করিতে আরম্ভ করিয়াছেন। ইহাও যদি সম্ভব হইল, পতিত ইটালি ও গ্ৰীসও যদি পুনরায় জাগিয়া উঠিল, তবে যে নূতন জাতি আজ নব উদ্যমে জুলিয়া উঠিতেছে, নবজীবনে সঞ্জীবিত হইতেছে, নূতন মন্ত্রে দীক্ষিত হইতেছে, সে যে সভ্যতার চরম শিখরে না উঠিয়া বিশ্রাম করিবে না, তাহাতে অসম্ভব কী আছে? সভ্যতা পৃথিবীতে স্তরে স্তরে নির্মিত হইতে থাকে, একেবারে প্রচুর পরিমাণে সভ্যতা কখনাে পৃথিবীতে জন্মিতে পারে না। ক্রমই প্রকৃতির নিয়ম। সভ্যতার অধিষ্ঠাত্রী দেবী আসিয়া ভারতবর্ষ, গ্ৰীস ও ইটালিতে এক স্তর সভ্যতা নির্মাণ করিয়া গিয়াছেন। ওই সকল দেশ হইতে দেবী চলিয়া গিয়াছেন বটে, কিন্তু এক স্তর সভ্যতা সেখানে এখনও অবশিষ্ট আছে। তিনি এখন ফ্রান্স জর্মনি প্রভৃতি দেশে সভ্যতা নির্মাণ করিতেছেন এবং কিছুদিন পরে সেখানেও পদচিহ্ন রাখিয়া আবার আমেরিকা, রুসিয়া, জাপান সভ্যতার অধিষ্ঠাত্রী দেবী এইরূপে পৃথিবীময় পরিভ্রমণ করিতেছেন এবং স্তরে স্তরে পৃথিবীতে পূর্ণ সভ্যতা নির্মাণ করিতেছেন। ভবিষ্যতের একদিন আমরা কল্পনাচক্ষে দেখিতেছি, যেদিন আমাদের দীপ্যমান সভ্যতার সম্মুখে ক্ৰমে ক্রমে ফ্রান্স, জর্মনি, ইংলন্ডের সভ্যতা নিবিয়া যাইবে। এ কথা অবিশ্বাস করিবার নহে। অনস্ত কাল-সমুদ্রে কত ঘটনা-তরঙ্গ উঠিবে ও পড়িবে, আর আমাদের এই বঙ্গদেশ, এই লক্ষ লক্ষ অধিবাসী চিরকালই যে অধীনতার অন্ধকারে নিজীবিভাবে বিমাইবে, তাহা আমরা কল্পনা করিতেও পারি না। আমরা যুরোপের সঞ্চিত সভ্যতা অল্পায়াসে অর্জন করিয়া লইতেছি, নিউটন যতখানি মাথা ঘুরাইয়া পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বুঝিয়াছিলেন, তাহা বুঝিতে আমাদের নিউটনের এক-পঞ্চদশ অংশও ভাবিতে হয় না। যুরোপ যখন বৃদ্ধ ও ক্লান্ত হইয়া যাইবেন, তখন তাহার সঞ্চিত সভ্যতা অর্জন করিয়া লইয়া আমরা আবার নব উদ্যমে অধিকতর সঞ্চয় করিতে আরম্ভ করিব। যে জাতি নব উদ্যমে উঠিতে আরম্ভ করে, তাহারাই ক্ৰমে সভ্যতার উচ্চ-শিখরে আরোহণ করে। কী অল্প কালের মধ্যে আমাদের বঙ্গদেশ উন্নতির পথে অগ্রসর হইয়াছে। বঙ্গ ভাষায় গদ্য এই সেদিন তো নির্মিত হইয়াছে; যত দিন ভাষার উন্নতি না হয়, তত দিন জাতির উন্নতি হয় না, অথবা জাতির উন্নতির চিহ্নই ভাষার উন্নতি। যাহারা প্ৰায় বাংলা গদ্যের সৃষ্টিকর্তা তাহারা আজিও বর্তমান আছেন। বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্য এই অর্ধশতাব্দীর মধ্যে আশ্চর্য উন্নত হইয়াছে। এত দ্রুত ও এত অল্প কালের মধ্যে বোধ হয় কোনো ভাষারই উন্নতি হয় নাই। এই উন্নতি-স্রোত যদি দারুণ প্ৰতিঘাত না পায় তবে কখনো থামিবে না। বাঙালিদের এই অর্ধশতাব্দীর উন্নতি, ইহার মধ্যে তাহদের উদ্যম কত বাড়িয়া উঠিয়াছে, অধীনতার অনুৎসাহের মধ্যে এতদূর আশা করা যায় না। স্কটলন্ডে গিয়া তাহারা কৃষিবিদ্যা অধ্যয়ন করিতেছে, লন্ডনে গিয়া সেখানকার বিজ্ঞান-আচার্য উপাধি আহরণ করিতেছে, অঙ্কবিদ্যা শিখিতেছে, জর্মনিতে নিজের মত প্রচার করিতেছে, রুসিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের আসন অধিকার করিতেছে, সমস্ত ভারতবর্ষে রাজনৈতিক ঐক্যতা স্থাপনের জন্য প্ৰাণপণে চেষ্টা করিতেছে, "সাহস-পূর্বক কত সামাজিক শৃঙ্খল ছিড়িয়া ফেলিয়াছে সফল হউক বা না হউক, গবর্নমেন্টের কুনিয়মের বিরুদ্ধে সাহসপূর্বক স্বীয় মত প্রকাশ করিতেছে, আমেরিকায় শিক্ষা পাইবার জন্য কত যুবক উদ্যত হইয়াছেন এবং আমরা শীঘ্রই দেখিতে পাইব যে, তাহারা পোতনির্মাণবিদ্যা, যন্ত্ৰ-বিদ্যা এবং ইংরাজেরা যদি যুদ্ধ শিক্ষা না দেন, তবে ফ্রান্সে গিয়া, জর্মনিতে গিয়া যুদ্ধ শিখিয়া আসিবে, ইহা নিশ্চয়ই। গবর্নমেন্টের অধীনে কার্য জুটিতেছে না, সুতরাং জীবিকার অভাবে বিদেশে গিয়া অর্থের নিমিত্তেও বিদ্যা শিখিবে, বাণিজ্যের উন্নতি হইবে, এখনি আমাদের দেশীয় লোকের বাণিজ্যের দিকে মন পড়িয়াছে, অর্ধশতাব্দীর মধ্যে অধীনতার সীমাবদ্ধক্ষেত্রে এত मूल उमडि (कान् छांडि कब्रिाष्छ अनि ना। পাঠকেরা জিজ্ঞাসা করিবেন যে আমরা পূর্বে বলিলাম সভ্যতার প্রথম অবস্থায় অর্থের আবশ্যক করে, তবে এখন কেন বলিতেছি যে, অর্থাভাবও বাঙালিদের জ্ঞান উপার্জনের প্রধান