পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

808 ब्रदीक्ष-शष्नांदकी যে-সকল দেশহিতৈষীদিগের Political agitation একমাত্র ব্যবসায় তাহদের উপর আমার বড়ো শ্ৰদ্ধা নাই। আমাদের দেশে Political agitation করার নাম ভিক্ষাবৃত্তি করা। যে নিতান্তই দরিদ্র সময়ে সময়ে তাহাকে ভিক্ষা করিতেই হয়, উপায় নাই, কিন্তু ভিক্ষাই যে একমাত্র উন্নতির উপায় স্থির করিয়াছে, তাহার প্রতি কাহারও ভক্তি থাকিতে পারে না। ভিক্ষুক মানুষেরও মঙ্গল নাই, ভিক্ষুক-জাতিরও মঙ্গল নাই, ক্রমশই তাহাকে হীন হইতে হয়। ইতিহাস ভুল বুঝিয়া আমাদের এই সকল বিড়ম্বনা ঘটিয়াছে। আমরা ভুলিয়া গিয়াছি যে স্বাধীন দেশে Political agitation-এর অর্থ, আর পরাধীন দেশে উহার সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র অর্থ। সে দেশে Political agitation VeífGCEIFR KFESF fRCE KRIST, VON 4 CMG Political agitation-AS VAffRCES কাজ পরকে দিয়া করানো। কাজেই ইহার ফল উভয় দেশে এক প্রকারের নহে। ইংরাজদের কাছে ভিক্ষা করিয়া আমরা আর সব পাইতে পারি, কিন্তু আত্মনির্ভর। পাইতে পারি না। আর, তাহাই যদি না পাই, তবে আসল জিনিসটাই পাইলাম না। কারণ, ভিক্ষার ফল অস্থায়ী, আত্মনির্ভরের ফল স্থায়ী। আমাদের সমস্ত জাতির যদি এই একমাত্র কাজ হয়, ইংরাজদের কাছে আবদার করা, ইংরাজদের কাছে ভিক্ষা করা, তাহা হইলে প্ৰত্যহ আমাদের জাতির জাতিত্ব নষ্ট হইতে থাকিবে, ক্রমশই আমাদের আত্মত্ব বিসর্জন দিতে হইবে। তাহা হইলে আমরা শুভ্র ইংলন্ডের গায়ে একটা কালো পোকার মতো লাগিয়া থাকিব ও ইংরাজের গায়ের রক্ত শোষণ করিয়া আবশ্যকের অভাবে আমাদের পাকযন্ত্র অদৃশ্য হইয়া যাইবে! এইজন্যই কি ন্যাশনাল ফন্ড ? আমরা কী শিখিতেছি? ন্যাশনাল ফন্ড সংগ্ৰহ করিয়া আমরা কী কাজের জন্য প্ৰস্তুত হইতেছি? না, কেমন করিয়া দরখাস্ত করিতে হয়, পার্লামেন্টে কী উপায়ে মনের দুঃখ নিবেদন করা যাইতে পারে, কোন সাহেবকে কীরূপ করিয়া আয়ত্ত করা যায়, ঠিক কোন সময়ে ভিক্ষার পাত্রটি বাড়াইলে এক মুঠা পাওয়া যাইতে পরিবে। অনিমেষ নেত্ৰে পৰ্যবেক্ষণ করিতে থাকো ইংরাজি কোন মন্ত্রীর কী ভাব, কখন ministry বদল হয়, কখন রাজা আমাদের অনুকুল, কখন আমাদের প্রতিকুল ঘড়ি ঘড়ি ইংরাজদের কাছে গিয়া বলো, তোমরা অতি মহাদাশয় লোক, তোমরা ধর্মাবতার, তোমাদের কাছে অনুগ্রহ প্রত্যাশা করিয়া কি আমরা বঞ্চিত হইব? কখনোই না। আজ রাজার মুখ প্রসন্ন দেখিলে কালীঘাটে পূজা দাও, আর কাল তাহাৰুে বিমুখ দেখিলে ঘরে হাহাকার পড়িয়া যাক! যাও, ছ। লাখ টাকা দিয়া একটা মস্ত constitutional ভিক্ষার বুলি কেনো, কখন কে লাটসাহেব হইল, কখন কে রাজমন্ত্রী হইল তাঁহাই অনুসন্ধান করিয়া ঠিক সময় বুঝিয়া ভিক্ষার বুলি পাতো গে। কিন্তু, তার পরে মনে করো ইংরাজ চলিয়া গেল, মগের মুলুক হইল। তখন কাহার কাছে আবদার করিবে? তখন তোমাদের দিশি মুখে বিলাতি বোল শুনিয়া ইস্কুল মাস্টারের মতো কে তোমাদের পিঠে উৎসাহের থাবড়া দিবো? ঘর হইতে কাপড় আনাইয়া কে তোমাদের কাপড়টি পরাইয়া দিবো? সহসা পিতৃহীন আদুরে ছেলেটির মতো কঠোর সংসারে আসিয়া টিকিবে কীরূপে ? আর কিছু না হউক সমস্ত বাঙালি জাতি যখন agitation-ওয়ালা হইয়া উঠিবে তখন হঠাৎ তাহদের agitation বন্ধ হইলে যে নিশ্বাস বদ্ধ হইয়া মরিবে। বরঞ্চ গুলি আহার বন্ধ হইলে চলিয়া যাইবে, কিন্তু দুই দণ্ড মুখ বন্ধ হইলে বাঙালি বাঁচবে কী ইহা বোধ করি কেহই অস্বীকার করিতে পরিবেন না যে, যথেষ্ট টাকা সংগ্ৰহ করিলে আমাদের দেশে এমন ঢের কাজ আছে যাহা আমরা নিজেই করিতে পারি, এবং যাহা-কিছু আমরা নিজে করিব তাহা সফল না হইলেও তাহার কিছু না-কিছু শুভ ফল স্থায়ী হইয়া থাকিবে। তাহাঁই যদি সত্য হয়, তবে যাহারা কেবলমাত্র অথবা প্রধানত গবর্মেন্টের কাছে তালোরাপ ভিক্ষা করিয়া দেশের উন্নতি করিতে চান তাহারা কীরূপ দেশহিতৈষী! গবর্মেন্টকে চেতন করাইতে তাহারা যে পরিশ্রম করিতেছেন, নিজের দেশের লোককে চেতন করাইতে সেই পরিশ্রম করিলে যে বিস্তর