পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ՎԶԵr - রবীন্দ্র-রচনাবলী দেখা যায়। প্রচারের লেখা হইতে এরূপ অনুমান করা যে কোনোমতেই সম্ভব হইতে পারে না। এমন কথা বলা যায় না। যদি স্বল্পবুদ্ধিবশত আমি এরূপ অনুমান করিয়া থাকি তবে তাহা মিথ্যা উক্তি মনে করিলে আমি কিঞ্চিৎ বিস্মিত এবং অত্যন্ত ব্যথিত হইব। বিশেষত তিনি যখন প্রকাশ্যে আমাকে তাহার সুহৃৎশ্রেণীমধ্যে গণ্য করিয়াছেন তখন সেই আমার গর্বের সম্পর্ক ধরিয়া আমি কিঞ্চিৎ অভিমান প্ৰকাশ করিতে পারি, সে অধিকার আমাকে তিনি দিয়াচ্ছেন। আমার দ্বিতীয় নম্বর মিথ্যার উল্লেখে বলিয়াছেন- ‘তার পর ‘আদর্শ” কথাটি সত্য নহে। ‘আদৰ্শ” শব্দটা আমার উক্তিতে নাই। ভাবেও বুঝায় না। যে ব্যক্তি কখনো কখনো সুরাপান করে সে ব্যক্তি আদর্শ হিন্দু বলিয়া গৃহীত হইল কী প্রকারে?” প্রথম কথা এই যে, আমি সৃলিয়াছিলাম। তিনি একটি “হিন্দুর আদৰ্শ” কল্পনা করিয়া বলিয়াছেন” ইত্যাদি। আমি এমন ফলি নাই যে- তিনি একটি আদর্শ হিন্দু কল্পনা করিয়া বলিয়াছেন। ‘একটি হিন্দুর আদর্শ কল্পনা করা” ও “একটি আদর্শ হিন্দু কল্পনা করা” উভয়ে অর্থের কত প্ৰভেদ হয় পাঠকেরা বিবেচনা করিয়া দেখিবেন। দ্বিতীয় কথা— ভাবেও কি বুঝায় না? আদর্শ বলিতে আমি সাধারণ্যে প্রচলিত হিন্দুর আদর্শস্থল মনে করি নাই। বঙ্কিমবাবুর আদর্শস্থল মনে করিয়াছিলাম। মনে করার কারণ যে কিছুই নাই তাহা নহে। প্ৰবন্ধ পড়িয়। এমন সংস্কার হয় যে, বঙ্কিমবাবুর মতে, কথঞ্চিৎ আচার বিরুদ্ধ কাজ করিলেই যে সমস্ত একেবারে দূষ্য হইয়া গেল তাহা নহে, ধর্মবিরুদ্ধ কাজ করিলেই বাস্তবিক দোষের কথা হয়। ইহাই দাঁড় করাইবার জন্য তিনি এমন একটি চিত্র আঁকিয়াছেন যাহা বিরুদ্ধাচার সমর্থনা করিয়াও সাধারণের চক্ষে অপেক্ষাকৃত মনোহর আকারে বিরাজ করে। দুইটি চিত্রের মধ্যে কোন চিত্রে লেখক মহাশয়ের পাঠকদের হৃদয়াকর্ষণের চেষ্টা করিয়াছেন তাহা পড়িলেই টের পাওয়া যায়। দুইটি চিত্ৰই যে তিনি সমান অপক্ষপাতিতার সঙ্গে আঁকিয়াছেন তাহা নহে। ইহার মধ্যে যে চিত্রের উপর তাহার প্রীতির লক্ষণ প্ৰকাশ পাইয়াছে সেইটিকেই সম্পূর্ণ না হউক অপেক্ষাকৃত আদর্শস্থল বলিয়া মনে করা অসম্ভব নহে। যখন বলা যায় বঙ্কিমবাবু একটি হিন্দুর আদর্শ কল্পনা করিয়াছেন, তখন যে মহত্তম আদর্শই বুঝায় তাহাও নহে। দোষে গুণে জড়িত একটি আদর্শও হইতে পারে। যেকোনো- একটা চিত্র খাড়া করিলেই তাহাকে আদর্শ বলা যায়। তৃতীয় কথা- কেহ বলিতে পারেন যে, আলোচা হিন্দুটিকে বঙ্কিমবাবু যদি মহত্তম আদর্শস্থল বলিয়া খাড়া করিয়া না থাকেন তবে তাহার চরিত্রগত কোনো-একটা গুণ অথবা দোয লইয়া এত আলোচনা করিবার আবশ্যক কী ছিল। কিন্তু আদর্শ হিন্দুর দোষ-গুণ লইয়া আমি সমালোচনা করি নাই। বঙ্কিমবাবু নিজের মুখে যাহা বলিয়াছেন তৎসম্বন্ধেই আমার বক্তব্য প্রকাশ করিয়াছি। যেখানে বলিয়াছেন- “যেখানে লোকহিতাৰ্থে মিথ্যা নিতান্ত প্রয়োজনীয় অর্থাৎ যেখানে মিথ্যাই সত্য হয়৷’-- সেখানে তিনি নিজেরই মত ব্যক্ত করিয়াছেন- এ তো আদর্শ হিন্দুর কথা নহে। বঙ্কিমবাবু যে দুইটি অসত্যের অপবাদ আমাকে দিয়াছেন তৎস বন্ধে আমার যাহা বক্তব্য আমি বলিলাম। কিন্তু যেখানে তিনি বলিয়াছেন ‘প্ৰয়োজন হইলে এরাপ উদাহরণ আরও দেওয়া যাইতে পারে” সেখানে আমার বক্তব্যের পথ রাখেন নাই। প্রয়োজন আছে কি না জানি না; যদি থাকিত তবে • উদাহরণ দিলেই ভালো ছিল আর যদি না থাকিত তবে গোপনে এই বিষবাণক্ষেপণেরও প্রয়োজন ছিল না। বঙ্কিমবাবু লিখিয়াছেন “লোকহিত’ শব্দের অর্থ বুঝিতে আমি ভুল করিয়াছি। তিনি সংশোধন করিয়া দেন নাই এইজন্য সেই ভুল আমার এখনও রহিয়া গেছে। সলজে স্বীকার করিতেছি, এখনও আমি আমার ভ্ৰম বুঝিতে পারি নাই। অন্য যাঁহাদের জিজ্ঞাসা করিয়াছি তাহারাও আমার