পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

开酉 88S করিয়াছে, কিন্তু কখনো তঁহার গভীৰ্য নষ্ট হয় নাই। আজি সেই পুরাতন আদি ব্রাহ্মসমাজের অযোগ্য সম্পাদক আমি কাহারও কটাক্ষপাত হইতে আদি ব্রাহ্মসমাজকে রক্ষা করিতে অগ্রসর হইব ইহা দেখিতে হাস্যজনক। . বঙ্কিমবাবুর প্রতি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ভক্তি আছে তিনি তাহা জানেন। যদি তরুশ চপলতাবশত বিচলিত হইয়া তেঁহকে কোনো অন্যায় কথা বলিয়া থাকি তবে তিনি তঁহার বয়সের ও প্রতিভার উদারতাগুণে সে সমস্ত মার্জনা করিয়া এখনও আমাকে তঁহার মেহের পাত্র বলিয়া মনে রাখিবেন। আমার সবিনয় নিবেদন এই যে, আমি সরলভাবে যে-সকল কথা বলিয়াছি, আমাকে ভুল বুঝিয়া তাহার অন্য ভাব গ্ৰহণ না করেন। ভারতী পৌষ ১২৯১ [मूर्डिश्वक] অধিক দূরে নয়, তোমাদের দ্বারের নিকট ক্ষুধিতেরা দাঁড়াইয়া আছে। তোমরা দুই বেলা যে উচ্ছিষ্ট অন্ন কুকুর বিড়ালদের ফেলিয়া দিতেছ, তাহার প্রতি তাহার কী কাতরসূষ্টিতে চাহিয়া রহিয়াছে। তোমাদের নবকুমারের জন্মোপলক্ষে গৃহে কত আনন্দ পড়িয়াছে- আহারাভাবে কোলের ছেলেটির কঁদিবার শক্তিও নাই— তোমাদের গৃহে বিবাহের বাঁশি বাজিতেছে, কেবল একমুষ্টি অন্ত্রের অভাবে তাহাদের গৃহে বিবাহ-বন্ধন চিরদিনের মতো বিচ্ছিন্ন হইয়া যাইতেছে— স্ত্রীর মুখে অন্ন দিয়া স্বামী তাহার শেষ কর্তব্য সাধন করিতে পারিতেছে না। তোমরা গৃহে বসিয়া নিশ্চিত।মনে কত কথা লইয়া আলাপ করিতেছি, কত হাস্য-পরিহাস করিতেছি, সংসারের কত শত কাজে মন দিতেছে- তাহদের আর কোনো কথা নাই, কোনো ভাবনা নাই, কোনো কাজ নাই আশা কেবল একটি মুষ্টি অন্নের উপরে বদ্ধ রহিয়াছে। তাঁহাদের চক্ষে এক্ষণে সমস্ত জগতে একমুষ্টি অন্নের চেয়ে বাঞ্ছনীয় আর কিছু নাই— একমুষ্টি অন্ন উপাজনের চেয়ে আর মহত্তর উদ্দেশ্য নাই- এমন-কি, সমস্ত জগতে অন্নের অতীত আর কোনো কিছুই নাই। । ক্ষুধা যে কী ভয়ানক বিপদ, তাহা আমরা অনেকে কল্পনা করিতে পারি না। অন্যান্য অনেক বিপদে মনুষ্যের মনুষ্যত্ব জাগাইয়া তুলে- কিন্তু ক্ষুধায় মনুষ্যত্ব দূর করিয়া দেয়। ক্ষুধার সময় মনুষ্য অত্যন্ত ক্ষুদ্র। আত্মরক্ষার জন্য যখন একমুষ্টি অন্নাভাবের সহিত মনুষ্যকে যুদ্ধ করিতে হয়, তখন মনুষ্য একটি পিপীলিকার সমতুল্য। সে যুদ্ধেও যখন মানুষ্যের পরাজয় হয়- একমুষ্টি তগুলোর অভাবেও যখন মনুষ্যজীবনের শত সহস্ৰ মহৎ আশা উদ্দেশ্য ধরাশায়ী হয়, তখন মনুষ্যজাতির দীনতা দেখিয়া হৃদয় হাহাকার করিতে থাকে। ক্ষুধার জ্বালায় বড়ো ভাই ছোটাে ভাইয়ের মুখ হইতে তাহার বহু কষ্টের গ্রাস কড়িয়া লইতে সংকুচিত হয় না- “ক্ষুধায় মানুষ অত্যন্ত হীন, ক্ষুধায় কোনো মহত্ত্ব নাই। এই ক্ষুধার হাত হইতে কাতরদিগকে পরিত্রাণ করোএই ক্ষুধায় মানুষদের- আপনার ভাইদের মরিতে দিয়ে না- সে মানুষের পক্ষে অত্যন্ত লজার কথা । তোমার যদি আপনার ভাই থাকে, তবে যাহার ভাই আজ অনাহারে মরিতেছে, তাহার প্রতি একবার মুখ তুলিয়া চাও- তোমার যদি আপনার মা থাকে, তবে অন্নাভাবে মরণাপন্ন মায়ের মুখের দিকে হতাশ হইয়া যে তাকাইয়া আছে, তাহাকে কিছু সাহায্য করে- তোমার যদি নিজের সন্তান থাকে। তবে কোলের উপর বসিয়া যাহার শিশু-সন্তান প্রতিমুহূর্তে শীর্ণ হইয়া মরিতেছে, তোমার উদ্ধৃত উদকৃত্তি অন্নের কিছু অংশ তাহাকে দাও। সত্যসত্যই তোমার কি কিছুই নাই? যে আজ কয় দিন ধরিয়া কেবল তেঁতুল বীজের শস্য সিদ্ধ করিয়া খাইয়াছে, তাহার চেয়েও কি