পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইতিহাস * 8ዔዔ যুদ্ধে প্ৰবৃত্ত করাইলেন। কিন্তু তাহারা হত ও আহত হইল। সিন্ধিয়া অশ্বারোহণে আগ্রার দিকে পলায়ন করিলেন। মহারানীর মাতা ‘গুজ্জারাজা’ সিন্ধিয়া বিদ্রোহীদের হস্তে বন্দী হইয়াছেন মনে করিয়া, কৃপাণ লইয়া অশ্বারোহণে র্তাহাকে মুক্ত করিতে গেলেন; অবশেষে সিন্ধিয়া পলায়ন করিয়াছেন শুনিয়া নিবৃত্ত হইলেন। ঝানসীরাজীর সৈন্যগণ সিন্ধিয়ার রাজকোষ হস্তগত করিল, এবং তাহা হইতে রানী সৈন্যদের ছয় মাসের বেতন চুকাইয়া দিলেন ও নগরবাসী দিগকে পুরস্কার দানে সন্তুষ্ট করিলেন। কিন্তু তাতিয়া টােপী ও রাজী দুৰ্গরক্ষার কিছুমাত্র আয়োজন করেন নাই; র্তাহারা প্রকাশ্য ক্ষেত্রেই সৈন্য স্থাপন করিয়াছিলেন; সমুদয় বন্দোবস্ত রানী একাকীই সম্পন্ন করিতেছিলেন। তিনি সৈনিকের বেশ পরিয়া, যে রৌদ্রে ইংরাজ-সেনাপতি চারিবার মুছিত হইয়া পড়েন, সেই রৌদ্রে অপরিশ্রান্ত ভাবে মুহূর্ত বিশ্রাম না করিয়া অশ্বারোহণে এখানে ওখানে পরিভ্রমণ করিয়া বেড়াইতেছেন। সার হিউ রোজ যখন শুনিলেন যে, গোয়ালিয়র শক্ৰহস্তগত হইয়াছে, তখন সৈন্যদল সংগ্ৰহ করিয়া রাস্ত্রী-সৈন্যের দুর্বলভাগ আক্রমণ করিলেন। ঘোরতর যুদ্ধ বাধিল। সেই যুদ্ধের দরুন বিপ্লবের মধ্যে রাজীী অসি। হস্তে ইতস্তত অশ্বচালনা করিতেছেন। রাজীীর সৈন্যরা ভঙ্গ দিল; বিপক্ষ সৈন্যদের গুলিতে রাস্ত্রী অত্যন্ত আহত হইলেন। তাহার অশ্ব সম্মুখে একটি খাত দেখিয়া কোনোমতে উহা উল্লঙ্ঘন করিতে চাহিল না; লক্ষ্মীবাইয়ের স্কন্ধে বিপক্ষের তলবারের আঘাত লাগিল, তথাপি তিনি অশ্বপরিচালনা করিলেন। তঁহার পাশ্ববর্তিনী ভগিনীর মস্তকে তলবারের আঘাত লাগিল এবং উভয়ে পাশাপাশি রণক্ষেত্রে পতিত হইলেন। এই ভগিনী যুদ্ধের সময়ে কোনো ক্ৰমে কেহ বলে যে, তিনি রাজীীর ভগিনী নহেন, তিনি তাহার স্বামীর উপপত্নী ছিলেন। ইংরাজি ইতিহাস হইতে আমরা রাজীর এইটুকু জীবনী সংগ্ৰহ করিয়াছি। আমরা নিজে তাহার যেরূপ ইতিহাস সংগ্ৰহ করিয়াছি, তাহা ভবিষ্যতে প্ৰকাশ করিবার বাসনা রহিল। অগ্রহায়ণ ১২৮৪ কাজের লোক কে আজ প্রায় চারশে বৎসর হইল পাঞ্জাবে তলবন্দী গ্রামে কালু বলিয়া একজন ক্ষত্ৰিয় ব্যাবসাবাণিজ্য করিয়া খাইত। তাহার এক ছেলে নানক। নানক কিছু নিতান্ত ছেলেমানুষ নহে। তাহার বয়স হইয়াছে, এখন কোথায় সে বাপের ব্যাবসা-বাণিজ্যে সাহায্য করিবে তাহা নহে- সে আপনার ভাবনা লইয়া দিন কাটায়, সে ধর্মের কথা লইয়াই থাকে। কিন্তু বাপের মন টাকার দিকে, ছেলের মন ধর্মের দিকে— সুতরাং বাপের বিশ্বাস হইল এ ছেলেটার দ্বারা পৃথিবীর কোনাে কাজ হইবে না। ছেলের দুর্দশার কথা ভাবিয়া কালুর রাত্রে ঘুম হইত না। নানকেরও যে রাত্রে ভালো ঘুম হইত। তাহা নহে, তাহারও দিনরাত্রি একটা ভাবনা লাগিয়া ছিল। বাবা যদিও বলিতেন ছেলের কিছু হইবে না, কিন্তু পাড়ার লোকেরা তাহা বলিত না। তাহার একটা কারণ বোধ করি এই হইবে যে, নানকের ধর্মে মন থাকতে পাড়ার লোকের বাণিজ্যব্যাবসার বিশেষ ক্ষতি হয় নাই। কিন্তু বোধ করি তাহারা, নানকের চেহারা, নানকের ভাব দেখিয়া আশ্চর্য হইয়াছিল। এমন-কি, নানকের নামে একটা গল্প রাষ্ট্র আছে। গল্পটা যে সত্য নয় সে আর কাহাকেও বলিতে হইবে না। তবে, লোকে যেরূপ বলে তাঁহাই লিখিতেছি। একদিন নানক মাঠে গোরু চরাইতে গিয়া গাছের তলায় ঘুমাইয়া পড়িয়ছিলেন। সূৰ্য অস্ত যাইবার সময় নানকের