পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ইতিহাস ৪৮১ নেপােলিয়ন তাহাকে একটি মােহর দিলেন- এবং নিজের জাহাজে করিয়া তাহাকে ইংলন্ডে পঠাইয়া দিলেন। দুঃখে পড়িলেও সেই মোহরটি সে কখনো ভাঙায় নাই, নেপোলিয়নের দয়া । মনে রাখিবার জন্য সেই মোহরটি সে চিরদিন কাছে রাখিয়াছিল। SR একশো বৎসরেরও অধিক হইল একদিন জার্মানির একটি ছােটাে প্রদেশের চার্লস নামে এক রাজা আহার করিয়া উঠিয়া আসিতেছেন এমন সময়ে শুনিতে পাইলেন। তঁহার রাজবাটির সম্মুখে একদল লোক জমা হইয়াছে। বাটির বাহিরে আসিয়া দেখিলেন একদল ছেলে। কী, ব্যাপারটা কী? রাজার নিকট একটি নিবেদন আছে। রাজার সহিসের ছেলে ডানেকির, পায়ে জুতা নাই, গায়ে ময়লা কাপড়- সে অগ্রসর হইয়া আপনাদের প্রার্থনা রাজাকে জানাইল। রাজার একটি স্কুল আছে, কেবল তাহার সৈন্যেরা সেই স্কুলে পড়ে। সম্প্রতি শুনা গেছে রাজা নিয়ম করিয়াছেন অন্য ছেলেরাও সেখানে পড়িতে পাইবে, তাই শুনিয়া রাজার সেই স্কুলে ভর্তি হইবার জন্য ইহারা প্রার্থনা করিতে আসিয়াছে। * সহিসের ছেলে ডানেকির ছবি আঁকিতে বড়ো ভালোবাসিত। সে মাটিতে দেয়ালে যেখানে পাইত খড়ি দিয়া নানারকম ছবি আঁকিত। সে জানিত রাজার স্কুলে ছবি আঁকা শিখানো হয়। তাই যখন সে শুনিল রাজার স্কুলে সকলেই যাইতে পারে তখন ভারি খুশি হইয়া সেই স্কুলে ভর্তি হইবার জন্য বাপের কাছে প্রস্তাব করে। বাপ চটিয়া গরম হইয়া উঠিল— বলিল, “তুমি নিজের কাজে মন দাও তো বাপু। লেখাপড়া শিখিতে হইবে না!” এই বলিয়া তাহাকে মারিয়া ঘরে । চাবিবন্ধ করিয়া রাখিল। ডানেকির জানালার মধ্য দিয়া গলিয়া আপনার সমবয়সী একদল ছোটো ছেলে জুটাইয়া স্বয়ং রাজার দুয়ারে আসিয়া উপস্থিত। রাজা সন্তুষ্ট হইয়া ডানেকিরকে স্কুলে পাঠাইতে রাজি হইলেন। ডানেকিরের বাপ দেখিল ছেলে স্কুলে গেলে আস্তাবলের কাজের কিছু অসুবিধা হইবে- ভারি বিরক্ত হইয়া মারধোর করিয়া ছেলেকে বাড়ি হইতে দূর করিয়া দিল। কিন্তু ছেলের মা গুটিকতক গায়ের কাপড় পুঁটুলিতে বাধিয়া তাহার সঙ্গে দিলেন- এবং খানিক রাস্তা তাহার সঙ্গে গিয়া ছেলের কল্যাণের জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করিয়া কাদিয়া ফিরিয়া আসিলেন। ডানেকির গরিব- এইজন্য স্কুলে তাহাকে কেহ গ্রাহ্য করিত না। সেখানে তাহাকে উঠান বঁট দিতে হইত, চাকরের কাজ করিতে হইত। বোধ করি যত্ন করিয়া তাহাকে কেহ শিখাইত না- অনেক সময়ে ডানেকির লুকাইয়া গোপনে শিক্ষা করিত। স্কুলে ছবি-আঁকা শেখা ফুরাইলে পর, আরও বেশি করিয়া শিখিবার জন্য ডানেকির পায়ে হাঁটিয়া দেশে বিদেশে ভ্ৰমণ করেন। এমনি করিয়া প্রায় কুড়ি-পঁচিশ বৎসর কাটিয়া গেল। এখন এই ডানেকিরের নাম যুরোপে সকল জায়গায় বিখ্যাত। ডানেকিরের মতো পাথরের মূর্তি গড়িতে কয়জন লোক পারে! যে রাজার স্কুলে তিনি পড়িতে অনুমতি পাইয়াছিলেন, সেই NS) মাড়োয়ারের রাজপুত রাজা যশোবন্ত দিল্লির বাদশা আরঞ্জাবের একজন সেনাপতি ছিলেন। তাহার অধীনে নহর খাঁ নামক এক হিন্দু রাজপুত বীর ছিলেন। নাহর খাঁ বলিয়া তাহাকে সকলে ডাকিত বটে। কিন্তু তাহার আসল নাম ছিল মুকুন্দদাস। এক সময়ে তিনি বাদশাকে অমান্য করাতে বাদশা তাহার উপর চটিয়া যান। বাদশা হুকুম দিলেন- ‘কোনো প্রকার অন্ত্র না লইয়া মুকুন্দকে