পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

| 6łRC2 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী মামুণে যতই মৃগী হরিণের জন্ম হইবে ততই মৃগহীন হরিণের ধ্বংস অবশ্যই ইয়া পড়িবে। অতএব বর্তমান অনেক অভিব্যক্তিবাদীদের মতে সহজাত সুবিধাগুলি জীবরাজ্যে স্থায়ী হয়, অভ্যাসজাত সুবিধাগুলি নহে। আবাঢ় ১৩০০ ওলাউঠার বিস্তার ॥ ভারতবর্ষ যে ওলাউঠা রোগের জন্মভূমি, এ সম্বন্ধে সন্দেহ অতি অল্পই আছে। ১৮১৭ খৃস্টাব্দে ভলগা, অবশেষে আমেরিকার সেন্টলরেন্স এবং মিসিসিপি নদী পার হইয়া দেশবিদেশে হাহাকার ধবনি উখিত করিয়াছিল। কিন্তু এই রোগ জল, খাদ্য অথবা বায়ু কোন পথ অবলম্বন করিয়া ভ্ৰমণ করে এখনও তােহা নিঃসংশয়রূপে স্থির হয় নাই। তবে, জলটাই তাহার সর্বাপেক্ষা প্ৰধান বাহন তাহার অনেকগুলা প্রমাণ পাওয়া যায়। মে মাসের নিয়ু রিভিয়ু পত্রে এ সম্বন্ধে আলোচনা আছে। ১৮৪৯ খৃস্টাব্দে লন্ডনে যখন এই মড়কের প্রাদুর্ভাব হয় তখন সেখানে সাধারণত টেমস নদীর জল ব্যবহার হইত। শহরের নর্দমা এই নদীতে গিয়া মিশিত। সেই সময় দেখা গিয়াছে, নদীর জল শহরের যত নীচে হইতে লওয়া হইয়াছে মৃত্যুসংখ্যা ততই বাড়িয়াছে, এবং শহরের সংস্রবে অপেক্ষাকৃত অল্পদূষিত অংশের জল যাহারা ব্যবহার করিয়াছে তাহাদের মধ্যে মৃত্যুসংখ্যাও তত অল্প হইয়াছে। ১৮৫৪ খৃস্টাব্দে লন্ডনে যে ওলাউঠার মড়ক হয় তখনও এ সম্বন্ধে একটি প্রমাণ পাওয়া গেছে। লন্ডনে যে দুই জলের কলওয়ালা জল জোগাইয়া থাকে তন্মধ্যে সাউথওয়ার্ক ওয়াটার কোম্পানি ব্যাটার্সি নামক স্থানের পয়ঃপ্ৰণালীর নিকটবতী টেমস হইতে জল লইত। এবং ল্যাম্বোথ ওয়াটার কোম্পানি নদীর অনেক উপর হইতে অপেক্ষাকৃত বিশুদ্ধ জল আহরণ করিত। লন্ডনের স্থানে স্থানে এই দুই কম্পানির পাইপ সংলগ্নভাবে দুই পাশাপাশি বাড়িতে ব্যবহৃত হইয়াছে অথচ মৃত্যুসংখ্যা তুলনা করিয়া দেখা গিয়াছে সাউথওয়ার্ক কোম্পানির জল যাহারা ব্যবহার করিয়াছে তাহাদের মধ্যে হাজার করা সাতান্ন জন মরিয়াছে আর ল্যাম্বেথ কোম্পানির জল যাহারা পান করিত তাহদের মধ্যে হাজার করা এগারো জনের মৃত্যু হয়। f ১৮৫৪ খৃস্টাব্দে ইংলন্ডে সোহােপল্পীর গোলন্ডন স্কোয়ার নামক একটি ক্ষুদ্র অংশে ওলাউঠা দেখা দেয়। তাহার কারণ নির্ণয়ের জন্য যে কমিশন বসে তাহারা দেখিলেন সেখানে পল্লীর লোক একটি বিশেষ কুপের জল পান করিয়া থাকে। এবং সন্ধানের দ্বারা জানিলেন, মড়কের প্রাদুর্ভাবের প্রাক্কালে স্থানীয় একটি নল-কূপ কীরূপে জীৰ্ণ হইয়া যায় এবং মৃত্তিকাতল দিয়া আবর্জনাপ্রবাহ এই জলের সহিত মিশ্রিত হয়। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, যেখানে এই জলাশয় অবস্থিত সেই রাস্তার উপরেই একটি মদ চোয়াইবার কারখানা ছিল, সেখানকার কর্মচারীরা উক্ত জল পান করিত না এবং তাহদের মধ্যে একজনেরও ওলাউঠা হয় নাই। ১৮৮৫ খৃস্টাব্দে ডোরাল্ডা নামক একটি কুলিজাহাজ ইংলন্ড ছাড়িয়া মাসখানেক পরে জাভা দ্বীপের বন্দরে কয়লা তুলিয়ছিল। সেখানে কোনো মাল বোঝাই হয় নাই, কেবল ফাস্ট ক্লাস প্যাসেঞ্জারদের জন্য ফল এবং শাকসবজি লওয়া হয়। সমস্ত পথ ডিস্টিল করা জল ব্যবহার হইয়াছে এবং কোনাে বন্দর হইতে জল লওয়া হয় নাই। বন্দর ছাড়ার পর জাহাজে ওলাউষ্ঠা দেখা দিল। কিন্তু প্ৰথমশ্রেণীর প্যাসেঞ্জারদের কেহ রোগগ্ৰস্ত হয় নাই। তাহারই ফল ও উদ্ভিজ্জ