পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

तिति අණතු নব বরষের ঘাসের 'পরে গত বরফের কুসুম ঝরে, হয়তো দাঁড়ায়ে সেজন আমার। —Christina Rossetti হয়তো ওই একটি বেড়ার আড়াল পড়িল বলিয়া, যাহার সহিত আমার চিরজীবনের সম্বন্ধ, তাহার সহিত ইহজন্মে আর দেখা হইল না। হয়তো রাজপথে সে আমার পাশ দিয়া চলিয়া গিয়াছে, মুখ ফিরানো ছিল বলিয়া দেখা হইল না, মিলন হইল না। তোমার জন্য যে হৃদয় নির্দিষ্ট রহিয়াছে তোমার মনের এমনই ধর্ম যে, তাহাকে দেখিয়া তুমি না ভালোবাসিয়া থাকিতে পরিবে না, এবং সেও তোমাকে ভালোবাসিবে, প্রকৃতি এমনই উপায় করিয়া রাখিয়া দিয়াছেন। কিন্তু তবে কেন সংসারে প্রণয় লইয়া এত গোলযোগ হয়? তবে কেন ‘প্রকৃত স্রোত প্রশান্তভাবে বহে না?” যতক্ষণে না। আমাদের যথার্থ দোসরকে পাই, ততক্ষণে তাহার সহিত যাহার কোনো বিষয়ে মিল আছে, আমরা তাহার প্রতিই আকৃষ্ট হই। এমনও সচরাচর হইয়া থাকে, প্ৰথমে একজনকে । ভালোবাসিলাম, তাহার কিছুদিন পরে তাহাকে আর ভালোবাসিলাম না, এমন-কি, আর-একজনকে ভালোবাসিলাম। তাহার কারণ এই যে প্রথমে তাহার সহিত আমার প্রকৃত দোসরের সাদৃশ্য একে চক্ষে পড়িতে লাগিল ও অবশেষে তাহার অপেক্ষা সদৃশতার লোককে দেখিতে পাইলাম, আমার ভালোবাসা স্থান পরিবর্তন করিল। এমন এক-এক সময় হয়, আমরা সহসা এক ব্যক্তির মুখের এক পার্শ্বভাগ দেখিতে পাইলাম, সহসা মনে হইল, ইহাকে অমুকের মতন দেখিতে, হয়তো তাহার ভুরুর প্রান্তভাগ, তাহার অধীরের সীমান্তভাগ মাত্ৰ দেখিয়া মনে হইয়াছে ইহার সহিত অমুকের আদল আসে, হয়তো সমস্ত মুখটা দেখিলে দেখিতে পাই কিছুমাত্র আদল নাই। অনেক সময়ে দূর হইতে দেখিলে সহসা মনে হয় ইহাকে অমুকের মতন দেখিতে, কাছে আসিয়া দেখি তাহা নয়, অনেক সময় পশ্চাৎ হইতে দেখিয়া মনে হয় এ অমুক হইবে’, সম্মুখে আসিয়া দেখি যে সে নয়। আমরা অনেক সময়ে পাশ হইতে ভালোবাসি, দূর হইতে ভালোবাসি, পশ্চাৎ হইতে ভালোবাসি, সুতরাং এমন হয় যে সম্মুখে আসিয়া কাছে আসিয়া আর ভালোবাসি না। অনেক সময়ে আবার হয়তো সত্যসত্যই আমরা আদল দেখিতে পাইয়া ভালোবাসি, কিন্তু তাহার অপেক্ষা অধিকতর আদল দেখিতে পাইলে আর-একজনকেও ভালোবাসিতে পারি। এইরূপ অবস্থায় আমরা আমাদের ভালোবাসার প্রতিদান দৈবক্রমে পাইতেও পারি, আবার অনেক সময়ে না। পাইতেও পারি। এই-সকল কারণেই প্রেমে এত গোলযোগ বাধে। এই সকল কারণেই আমরা (তাহার দোষ থাকুক বা গুণ থাকুক) একজনকে অন্ধভাবে ভালোবাসি, অথচ কেন ভালোবাসি ভাবিয়া পাই না, সে আমাদের প্রতি সহস্র নির্যাতন করুক, সহস্ৰ অন্যায় ব্যবহার করুক, কিছুতেই তাহাকে না ভালোবাসিয়া থাকিতে পারি না। এই সকল কারণেই আমরা নিশ্চয় করিয়া বলিতে পারি না যে, এইরূপ চরিত্রবিশিষ্ট ব্যক্তি ভালোবাসিব, আর এইরূপকে ভালোবাসিব না। একটি রঙের সহিত আর-একটি রঙ যখন মিলাইয়া গেল, তখন সেই উভয় বর্ণের অতি সূক্ষ্মতম বর্ণণুগুলি কোন সীমায় ধীরে ধীরে মিলাইয়া গেল আমরা দেখিতে পাই না, এই পর্যন্ত বুঝিতে পারি যে, উভয় বর্ণের বর্ণাণুগুলির মধ্যে পরস্পর মিলিবার শক্তি আছে, আর কোনো শ্ৰেণীর বর্ণাণু হইলে মিলিতে পারিত না। তেমনি আমার বর্ণণু আর কোন হৃদয়ের বর্ণণুর সাহিত মিলিতে পরিবে, তাহা কোনো পার্থিব সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পড়বার জো নাই, কিন্তু মিল আছেই। এমন বস্তু নাই যাহার মিল নাই। এ জগতে মিলের রাজ্য, প্রতি বর্ণের মিল আছে, প্রতি সুরের শিল আছে, প্রতি হৃদয়েরও মিল আছে। এ জগৎ মিত্ৰাক্ষরের কবিতা। এত মিল, এত অনুপ্রাস