পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q(?や রবীন্দ্র-রচনাবলী করিয়া তুলি তাহা আমার কর্ম নহে। আমি আজ গােঁফের সম্বন্ধে কেবলমাত্র গুটিকতক সহজ সত্য বলিব ও আমার বিশ্বাস, তাহা হইলেই কল্পনাবান মনস্বীগণ স্বতই তাহার পরম মহত্ত্ব অনুভব করিতে পরিবেন। ইহা দেখা গিয়াছে গােঁফ যতদিন না উঠে। ততদিন পরিষ্কাররূপে বুদ্ধির বিকাশ হয় না। স্ত্রীলোকদের গোফ উঠে না, স্ত্রীলোকদের পরিপাক বুদ্ধিরও অভাব দেখিতে পাওয়া যায়। বিপদে পড়িলে বুদ্ধির নিমিত্ত গোঁফের শরণাপন্ন হইতে হয় না, এমন কয়জন গুফো লোক আছে। জানিতে চাহি। সংসার ক্ষেত্রে কাজ করিতে করিতে একটা কঠিন সমস্যা উপস্থিত হইলেই তৎক্ষণাৎ দুই হাতে গোঁফের হাতে ধরিয়া পায়ে ধরিয়া গায়ে হাত বুলাইয়া ১০/১৫ মিনিট অর্থাৎ শামােদ করতে হয়, তবেই তিনি প্রসর হইয়া ভক্তের সেবামান হন্তে পাকা বৃদ্ধি 5머이 진F3F | অতএব স্পষ্টই প্রমাণ হইতেছে, বুদ্ধির সহিত গোঁফের সহিত একটা বিশেষ যোগ আছে। বয়স্কেরা যে শ্মশ্রুগর্বে গর্বিত হইয়া অজাত-শ্মশ্রুদিগকে অর্বাচীন জ্ঞান করেন, অবশ্যই তাহার একটা মূল আছে। গোফ উদগত হইয়াই তৎক্ষণাৎ একজোড়া বঁটার মতো বালকদের সমস্ত যেন নূতন করিয়া দেয়। অতএব এই অজ্ঞান-ধূমকেতু গোফ যুগলের সহিত বুদ্ধির কী যোগ আছে, আলোচনা করিয়া দেখা যাক। এ বিষয়ে মনােনিবেশপূর্বক ধ্যান করিতে করিতে সহসা আমার মনে উদিত হইল, “গোফে তা দেওয়া’ নামক একটি শব্দ চলিত ভাষায় ব্যবহৃত হয়। আপেল ফল পতন যেমন মাধ্যাকৰ্ষণতত্ত্ব আবিষ্কারের মূলস্বরূপ হইয়াছিল, ‘গোঁফে তা দেওয়া’ শব্দটি তেমনি বর্তমান আলোচ্য মহত্তর আবিষ্কারের মূলস্বরূপ হইল। ইহা হইতে এই অতি দুর্লভ সত্য বা তত্ত্ব সংগ্ৰহ করা যায় যে বায়ুবাহিত বা পক্ষীমুখভ্রষ্ট বীজ অপেক্ষা তদ্যুৎপন্ন বৃক্ষ অনেকগুণে বৃহৎ ও বিস্তৃত হইয়া থাকে। “তা দেওয়া’ শব্দ আমার মাথায় আসিতেই আমার সহসা মনে পড়িল যে নাকের গুহার নীচে এই যে গোফটা বুলিতেছে ইহা বুদ্ধির নীড় মাত্র। বুদ্ধি বল, ভাব বল, এইখানে তাহার ডিম পাড়িয়া যায়। কতশত বুদ্ধির ডিম, ভাবের ডিম আমাদের গোঁফ-নীড়ের অন্ধকারের মধ্যে অদৃশ্য ভাবে রক্ষিত হইয়াছে, দিবারাত্রি উত্তপ্ত নিশ্বাসবায়ু লাগিয়া ফুটিয়া ফুটিয়া উঠিতেছে, তাহা কি আমরা জানিতে পারি? মায়াবিনী প্রকৃতিদেবী সকল কাৰ্য কী গোপনেই সম্পন্ন করিতেছেন! বিশেষত অপরিস্ফুট জন্ম-পূর্ব অবস্থায় তিনি সকল দ্রব্যকে কী প্রচ্ছন্ন ভাবেই পোষণ করিতে থাকেন। বৃক্ষ হইবার পূর্বে বীজ মৃত্তিকার মধ্যে লুকায়িত থাকে, প্ৰাণীদিগের ভূণ জঠরান্ধকারে নিহিত থাকে, এবং এই চরাচর অস্ফুট শৈশবে অন্ধকারগর্ভে আবৃত ছিল, মনুষ্যের বুদ্ধির এবং ভাবের ডিমও গোঁফের মধ্যেই আচ্ছন্ন হইয়া বাস করিতে থাকে। মনুষ্যবুদ্ধি বিজ্ঞান মায়াবীর কঁধে চড়িয়া প্রকৃতির মহা-রহস্যশালার দ্বারের নিকট দাঁড়াইয়া আছে ও সেই রুদ্ধ দ্বারের ছিদ্রের মধ্য দিয়া সেই অপরিসীম। অন্ধকারের মধ্যে দৃষ্টি চালাইবার চেষ্টা করিতেছে কিন্তু আজ পর্যন্ত কয়জন বিজ্ঞানবিৎ গোঁফের অন্ধকারের মধ্যে প্রবেশ করিয়া ভাবডিম্ব পরিস্ফুটনের মহত্তত্ত্ব আবিষ্কারে অগ্রসর হইয়াছেন। আমি আজ দুঃসাহসে ভর করিয়া সেই গোঁফের মহারণ্যের মধ্যে প্ৰবেশ করিয়াছি, ইহার অগণ্য শাখা-প্ৰশাখার উপরে কতবিধ জাতীয় ভােব আসিয়া নিঃশব্দে ডিম পাড়িয়া যাইতেছে, তাহাই চুপ করিয়া দেখিতেছি। আমরা অনেক সময়ে জানিতেই পারি না কোথা হইতে সহসা এ বুদ্ধি আমার মাথায় আসিয়া উপস্থিত হইল! কেমন করিয়া জানিব বলো। কখন আমাদের গোফে নিঃশব্দে ডিম্ব ভাঙিয়া পাখিটি মাথায় আসিয়া উড়িয়া বসিল, তাহা সব সময়ে টের পাওয়া যায় না তো। কিন্তু যখন আমাদের তাড়াতাড়ি একটা কোনাে বুদ্ধির আবশ্যক পড়ে, তখন স্বভাবতই আমরা ঘন ঘন