পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৬২ রবীন্দ্র-রচনাবলী সিংহল দ্বীপের অন্তর্বতী ত্রিনকমলিতে একটি পুরাতন কুপের মধ্যে একটি প্রস্তরফলক পাওয়া গিয়াছে। তাহাতে ভানুসিংহের নামের ভ এবং হ অক্ষরটি পাওয়া গিয়াছে। বাকি অক্ষরগুলি একেবারেই বিলুপ্ত। হটিকে কেহ বা ‘ক্ষ’ বলিতেছেন, কেহ বা ‘খ’ বলিতেছেন কিন্তু তাহা যে “হ’ তাহাতে সন্দেহ নাই। আবার “ভটিকে কেহ বা বলেন চর্চ, কেহ বা বলেন ক্লৈ, কিন্তু তাহারা ভাবিয়া দেখিলেই বুঝিতে পরিবেন, “ভানুসিংহ শব্দের মধ্যে উক্ত দুই অক্ষর আসিবার কোনো সম্ভাবনা নাই। অতএব ভানুসিংহ ত্রিনকমলিতে বাস করিতেন, কুপের মধ্যে কি না সে বিষয়ে তর্ক উঠিতে পারে। কিন্তু আবার আর-একটা কথা আছে। নেপালে কাটামুণ্ডের নিকটবতী একটি পর্বতে সূর্যের (ভানু) প্রতিমূর্তি পাওয়া গিয়াছে, অনেক অনুসন্ধান করিয়া তাহার কাছাকাছি সিংহের প্রতিমূতিটা পাওয়া গেল না। পাষণ্ড যবনাধিকারে আমাদের কত গ্রন্থ কত ইতিহাস, কত মন্দির ধ্বংস হইয়াছে; সেই সময়ে ঔরংজীবের আদেশানুসারে এই সিংহের প্রতিমূর্তি ধ্বংস হইয়া থাকিবে। কিন্তু সম্প্রতি পেশোয়ারের একটি ক্ষেত্র চাষ করিতে করিতে সিংহের প্রতিমূর্তিখোদিত ফলকখণ্ড প্রস্তর বাহির হইয়া পড়িয়ছে- স্পষ্টই দেখা যাইতেছে ইহা সেই নেপালের ভানুপ্রতিমূর্তির অবশিষ্টাংশ, নাহলে ইহার কোনো অর্থই থাকে না। অতএব দেখা যাইতেছে ভানুসিংহের বাসস্থান নেপালে থাকা কিছু আশ্চর্য নয়, বরঞ্চ সম্পূর্ণ সম্ভব। তবে তিনি কাৰ্য্যগতিকে নেপাল হইতে পেশোয়ারে যাতায়াত করিতেন কি না সে কথা পাঠকেরা বিবেচনা করিবেন এবং স্নান-উপলক্ষে মাঝে মাঝে ত্রিনকমলির কূপে যাওয়াও কিছু আশ্চর্য নহে। ভানুসিংহের বাসস্থান সম্বন্ধে অভ্রান্তবুদ্ধি সূক্ষ্মদশী অপ্রকাশচন্দ্রবাবু যে তর্ক করেন তাহা নিতান্ত বাতুলের প্রলপ বলিয়া বোধ হয়। তিনি ভানুসিংহের স্বহস্তে-লিখিত পাণ্ডুলিপির একপার্থে কলিকাতা শহরের নাম দেখিয়াছেন। ইহার সত্যতা আমরা অবিশ্বাস করি না। কিন্তু আমরা স্পষ্ট প্রমাণ করিতে পারি যে, ভানুসিংহ তাহার বাসস্থানের উল্লেখ সম্বন্ধে অত্যন্ত ভ্ৰমে পড়িয়াছেন। তিনি লিখিয়াছেন বটে। আমি কলিকাতায় বাস করি— কিন্তু তাঁহাই যদি সত্য হইবে, তাহা হইলে কলিকাতায় এত কৃপ আছে কোথাও কি প্রমাণসমেত একটা প্রস্তরফলক পাওয়া যাইত না? শব্দশাস্ত্ৰ অনুসারে কাটামুণ্ডু ও ত্রিনকমলির অপভ্রংশে কলিকাতা লিখিত হওয়ারও সম্পূর্ণ সম্ভাবনা ভুঞ্জয়া হউক, ভানুসিংহ যে নিজ বাসস্থানের সম্বন্ধে ভ্ৰমে পড়য়ছিলেন তাহাতে আর এ श्क नीं। ভানুসিংহের জীবনের সম্বন্ধে কিছুই জানা নাই। হয়তো বা অন্যান্য মতিমান লেখকের জানিতে পারেন, কিন্তু এ লেখক বিনীতভাবে তদবিষয়ে অজ্ঞতা স্বীকার করিতেছেন। তাহার কুবলয় সম্বন্ধে কেহ বলে উহার কাঠের দোকান ছিল, কেহ বলে তিনি বিশ্বেশ্বরের পূজারী ভানুসিংহের কবিতা সম্বন্ধে বেশি কিছু বলিব না। ইহা মা সরস্বতীর চােরাই মাল। জনশ্রুটি এই যে, এ কবিতাগুলি স্বর্গে সরস্বতীর বীণায় বাস করিত। পাছে বিষ্ণুর কর্ণগোচর হয় ও তিনি দ্বিতীয়বার দ্রব হইয়া যান, এই ভয়ে লক্ষ্মীর অনুচরগণ এগুলি চুরি করিয়া লইয়া মর্ত্যভূমি ভানুসিংহের মগজে গুজিয়া রাখিয়া যায়। কেহ কেহ বলেন যে, এগুলি বিদ্যাপতির অনুকরণে লিখিত, সে কথা শুনিলে হাসি আসে। বিদ্যাপতি বলিয়া একব্যক্তি ছিল কি না ছিল তাহই তাঁর অনুসন্ধান করিয়া দেখেন নাই। যাহা হউক, ভানুসিংহের জীবনী সম্বন্ধে সমস্তই নিঃসংশয়রূপে স্থির করা গেল। তবে, এই ভানুসিংহই যে বৈষ্ণব কবি তাহা না হইতেও পারে। হউক বা না হউক সে অতি সামান্য বিষয় আসল কথাটা তো স্থির হইয়া গেল। নবজীবন SK SSSS