পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢vo ब्रीक्ष-ब्रष्नांबी আমি ইংলন্ডে যাই, সে আজ সাত বৎসর হইল। তখন আমার বয়সও নিতান্ত অল্প ছিল। তখন ইংলন্ডে যাহা দেখিয়ছিলাম তাহার একটা মোটামুটি ভাব মনে আছে বটে, কিন্তু তাহার সকল ছবি খুব পরিষ্কাররূপে মনে আনিতে পারি না, রেখায় রেখায় মিলাইয়া লাইতে পারি না। ইহারই মধ্যে আমার স্মৃতিপটবর্তী ইংলন্ডের উপর কোয়াশা পড়িয়া আসিতেছে। ছবিগুলি মাঝে মাঝে রৌদ্রে বাহির করিয়া ঝাড়িয়া দেখিতে হয়। সেইজন্য আজ স্মৃতিপট রৌদ্রে বাহির করিয়াছি। আমি যখন ইংলন্ডে গিয়া পৌঁছাই, তখন অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি। তখনও খুব বেশি। শীত বলিয়া আমার মনে হয় নাই। আমরা ব্রাইটনে ছিলাম। ব্রাইটনে তখনও যথেষ্ট রৌদ্র ছিল। রৌদ্রে পুলকিত হইয়া সমুদ্রের ধারের পথে ছেলে বুড়ো বঁটাকে বঁাকে বাহির হইয়াছে। রোগীরা এবং জরাগ্রস্তুরা ঠেলাগাড়িতে চলিয়াছে, সঙ্গে সঙ্গে পাশে পাশে একটি-দুইটি মেয়ে, বা পরিবারের কেহ। মেয়েরা নানা সাজপরা, ছাতা মাথায়। ছোটো ছেলেরা লোহার চাকা গড়াইয়া পথে ছুটিতেছে। সমুদ্রের তীরে কোনো মেয়ে ছাতা মাথায় দিয়া বসিয়া। সমুদ্রের ঢেউয়ের । অনুসরণ করিয়া কেহ কেহ নানাবিধ ঝিনুক সংগ্ৰহ করিতেছে। ইটালীয় ভিক্ষুক পথে পথে আর্গিন বাজাইয়া ফিরিতেছে। শাকসবজিওয়ালা, দুধওয়ালা, গাড়ি করিয়া ঘরে ঘরে জোগান দিয়া ফিরিতেছে। বেড়াইবার পথে অশ্বারোহী এবং অশ্বারোহিণী পাশাপাশি ছুটিয়াছে- পশ্চাতে কিছুদূরে একটি করিয়া অশ্বারোহী সহিস তকমা পরিয়া অনুসরণ করিতেছে। এক-একটি শিক্ষক তাহার পশ্চাতে এক পাল ইস্কুলের ছেলে লইয়া— অথবা এক-একটি শিক্ষয়িত্ৰী বঁটাকে বঁটাকে ইস্কুলের মেয়ে লইয়া সার বঁধিয়া সমুদ্রতীরের পথে হাওয়া খাইতে আসিয়াছে; হাওয়া না হউক।-- রৌদ্র খাইতে আসিয়াছে। আমরা প্রায় মাঝে মাঝে ছেলেদের লইয়া সমুদ্রতীরের তৃণক্ষেত্রে ছুটািছুটি করিতাম। দুটাছুটি করিবার ঠিক বয়স নয় বটে- কিন্তু সেখানে আমাদের এই রীতি-বহির্ভূত ব্যবহার সমালোচনা করিবার যোগ্যপাত্র কেহ উপস্থিত ছিলেন না। দশটাএগারোটার সময় আমাদের বেড়াইবার সময় ছিল। যাহা হউক, আমরা যখন ব্রাইটনে আসিয়া পৌছিলাম, তখন সমুদ্রতীরে সূৰ্যকারোৎসব। দিন যাইতে লাগিল- শীত বাড়িতে লাগিল। রাস্তার কাদা শীতে শক্ত হইয়া উঠিল। ঘাসের উপরে শিশির জমিয়া যাইত, কে যেন চুন ছড়াইয়াছে। সকালে উঠিয়া দেখি শাশির কাচে চিত্রবিচিত্ৰ তুষারের স্ফটিকলতা আঁকা রহিয়াছে। কখনো কখনো পথে দেখিতাম, দুই-একটা চড়ুই পাখি শীতে মরিয়া পড়িয়া রহিয়াছে। গাছের যে কয়েকটা হলদে পাতা অবশিষ্ট ছিল, তাহও করিয়া পড়িল, শীর্ণ ডালগুলো বাহির হইতে লাগিল। বিশ্বাস্ত-হৃদয় ছোটো ছোটো রবিন পাখি কাচের জানালার কাছে আসিয়া রুটির টুকরা ভিক্ষা চায়। সকলে আশ্বাস দিল, শীঘ্রই বরফ পড়া দেখিতে পাইবে। ক্রিস্টমাসের সময় আগত প্ৰায়। কনকনে শীত। জ্যোৎস্না রাত্ৰি। ঘরের জানিলা দরজা বন্ধ, পারদা ফেলা। গ্যাস জ্বলিতেছে। গরমের জন্য আগুন জ্বালা হইয়াছে। সন্ধ্যাবেলা আহার করিয়া অগ্নিকুণ্ড ঘিরিয়া আমরা গল্পে নিমগ্ন। দুটি ছেলে আমার প্রতি আক্রমণ করিয়াছেন। তঁহারা যে আমার সঙ্গে ভদ্রজন্যেচিত ব্যবহার করতেন না, তাহার সহস্ৰ প্ৰমাণ সত্ত্বেও আমি এখানে সেসকল কথার উল্লেখ করিতে চাহিনা। তাহারা এখন বড়োহইয়া উঠিয়াছে, “বালক পড়িয়া থাকেতাহদের সম্বন্ধে একটা কথা লিখিয়া শেষকালে জবাবদিহি করিতেই প্ৰাণ বাহির হইয়া যায়। আর কিছুদিন পরে তাহারা আবার প্রতিবাদ করিতেও শিখিবে। তখন আমি তাহদের সঙ্গে পারিয়া উঠিব না- এই ভয়ে আমি ক্ষান্ত রহিলাম। পাঠকেরা তাহদের স্বভাব চরিত্র সম্বন্ধে যাহার যেমন সাধ্য নুমান করিয়া লইবেন- আমি ইচ্ছাপূর্বক কোনোরূপ দায় স্কন্ধে লাইতে চাই না। : ا ۔ 1 গরম হইয়া সকলে বসিয়া আছি, এমন সময়ে খবর আসিল, বরফ পড়িয়ছে। কখন পুড়িতে। আরম্ভ হইয়াছিল, জানিতে পারি নাই, আমাদের দ্বার সমস্ত রুদ্ধ ছিল। ছেলেপিলে মিলিয়া