পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

evs রবীন্দ্র-রচনাবলী । বানর বলিতেছেন- আমরা বানর, অতি শ্রেষ্ঠ পুরাতন বনুবংশজাত, অতএব আমরাই সকল জীবের প্রধান। নল নীল অঙ্গদ এবং সুবিখ্যাত মার্কটেরা এই বনুবংশেই জন্মগ্রহণ করিয়াছেন। তাহদের নমস্কার। আমরা যে শ্রেষ্ঠ, তার প্রমাণ এই যে, আমাদের ভাষায় বানর অর্থই শ্রেষ্ঠ- আর আর সকল জীবই অশ্রেষ্ঠ। মনুষ্যদের আমরা স্লেচ্ছ বলিয়া থাকি। যেহেতু তাহারা অপক কদলী দগ্ধ করিয়া খায়, এরাপ আচরণ আমরা স্বপ্নেও কল্পনা করিতে পারি না। তাহ ছাড়া তাহারা সাতজন্মে গায়ের উকুন বাছিয়া খায় না। এমনি অশুচি। আমীয় বান্ধবের সহিত দেখা হইলে তাহারা পরস্পরের গায়ের উকুন বাছিয়া দেয় না। তাহদের সমাজে এমনি সহৃদয়তার অভাব। আমাদের শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় কত দিব? আমরা পুরুষানুক্ৰমে কখনো চাষ করিয়া খাই না। সনাতন বানরশাস্ত্রে চাষ করার কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না। প্রাচীন বনুর সময়ে যে নিয়ম ছিল। আমরা আজও সেই নিয়ম পালন করিয়া আসিতেছি- এমনি আমরা শ্রেষ্ঠ ! আমাদিগকে ভ্ৰষ্টাচারী কেহ বলিতে পারে না। কিন্তু স্লেচ্ছ মনুষ্য জাতি চাষ করিয়া খায়, তাহারা চাবা। চাষ না করাই যে সাধু আচার তাহার প্রমাণ এই, এতকাল ধরিয়া শ্রেষ্ঠ বানরসমাজে চাষ না করাই প্রচলিত। চাষ করাই যদি সদাচার হুইত, তবে বনু আচাৰ্য কি চাষ করিতে বলিতেন না? আমাদের বানর বংশে যে মহাত্মা জাম্বুবানের মতো এত বড়ো দূরদর্শী পণ্ডিত জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, কই তিনি তো চাষের কোনো উল্লেখ করেন নাই। তবে যদি আধুনিক অর্বািচীন নব্য পবিত্র বানর প্রথা ত্যাগ করিয়া চাষ করিতে থাকুন! কিন্তু অত্যন্ত আমোদের বিষয় এই যে, বানরদের শ্রেষ্ঠতায় মুগ্ধ হইয়া মানুষেরা সম্প্রতি প্রমাণ করিতে আসিয়াছে যে, মানুষরা বানর বংশজাত। এইরাপ মিথ্যাযুক্তির সাহায্যে গোলেমালে কোনোপ্রকারে মানুষ বানরের দলে মিশিতে চায়! হে বানর ভ্ৰাতৃবৃন্দ, তোমরা সাবধান, মানুষ যে বানর। এরাপ গুরুতর ভ্ৰম মনে স্থান দিয়ে না। গোটকতক বিষয়ে বানরে ও মানবে সাদৃশ্য দেখা যায় বটে। কিন্তু তাহা হইতে কী প্রমাণ হইতেছে! এই প্রমাণ হইতেছে যে, মানবেরা বানর হুইবার দুরাকাঙ্ক্ষায় ক্রমাগত আমাদের অনুকরণ করিতেছে- ক্ৰমাগত আমাদিগকে ape করিতেছে। স্লেচ্ছ মানব কাচকলা খাইত বটে, আমাদের অতি অসম্পূর্ণ অনুকরণ আরম্ভ করিয়াছে, শ্ৰেষ্ঠ বানরেরা তাহা দেখিয়া হাস্য সংবরণ করিতে পারে না! আনন্দ উপলক্ষে অনেক সময়ে মানবেরা দন্তপঙক্তি বিকাশ করে বটে, এবং মনে করে বুকি অবিকল বানরের মতো হইলাম- কিন্তু সে মুখভঙ্গি আমাদের পবিত্র বানরজাতি-প্রচলিত সনাতন দন্তবিকাশের কােছ দিয়াও যায় না। মানবের ভাষায় দুই-একটা এমন শব্দপ্রয়োগ দেখা যায় বটে, যাহাতে সহসা কোনো নির্বোধের ভ্ৰম হইতেও পারে যে বানরের সহিত মানবের যোগ আছে। লেজে তেল দেওয়া” “লেজ মোটা ভান মাত্ৰ- উহাতে কেবল তাহদের হৃদয়ের বাসনা প্রকাশ পায় মাত্ৰ- হয় রে দুরভিলাব! আমি শুনিয়াছি দুরাশাগ্রান্ত লোককে মানুষ বলিয়া থাকে “অমুক কাজ করিয়া এমনি কী চতুর্ভুজ ২া হইয়াছ" ইহাতে চতুৰ্ভুজ হুইবার জুন মানুষের প্রাণপণ চেষ্টা প্ৰকাশ পায়। শ্ৰেষ্ঠ বনুবংশজাত > বানরেরা সহজেই চতুর্ভুজ হইয়াছে, কিন্তু স্লেচ্ছ মানবেরা শত জন্ম তপস্যা করিলেও তাহা হইতে