পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভারতী। ১৫শ ভাগ। আশ্বিন ও কার্তিক ১২৯৮] . . এবারকার ভারতীতে লজাবতী নামক একটি গল্প প্ৰকাশিত হইয়াছে। এ রচনাটি ছোটে গল্পলেখার আদর্শ বলিলেই হয়। দুটি-একটি বাঙালি অন্তঃপুরবাসিনীর জাজ্বল্যমান ছবি আঁকা হইয়াছে অথচ তাহাকে কোনোপ্রকার কাল্পনিক ভঙ্গি করিয়া বসানো হয় নাই, যেমনটি তেমনি উঠিয়াছে। কোনো বাড়াবাড়ি নাই, রকম-সকম নাই, রোমহর্ষণ ভাষাপ্রয়োগ নাই, অথচ পাঠসমাপ্তি কালে পাঠকের চােখে অতি সহজে অশ্রুবিন্দু সঞ্চিত হইয়া আসে। ‘বিলাপ’ একটি গদ্যপ্ৰবন্ধ। কিন্তু ইহাতে না আছে। গদ্যের সংযম, না আছে পদ্যের ছন্দ। আজকাল এইরূপ উচ্ছঙ্খল প্ৰবন্ধ বাংলা ভাষায় প্রায় দেখিতে পাওয়া যায়। কিন্তু এমন লেখার কোনো আবশ্যক না। --লিটারেরি। ধবনির সঙ্গে সঙ্গে যেমন প্ৰতিধ্বনি থাকে তেমনি সকল দলেরই পশ্চাতে কতকগুলি অনুবতী লোক থাকে তাহারা খাঁটি দলভুক্ত নহে। অথচ ভাবভঙ্গির অনুকরণ করিয়া দলপতির সঙ্গে একত্রে তারিয়া যাইতে চাহে। এরূপ লোক সর্বত্রই উপহাসাম্পদ হইয়া থাকে। সেইরাপ যাহারা সারস্বতমণ্ডলীর ছায়াস্বরাপে থাকিয়া সাহিত্যের ভিড়ং করিয়া থাকেন লেখক তাঁহাদিগকে লিটারেরি নাম দিয়া কিঞ্চিৎ বিদ্রুপ করিয়াছেন। কিন্তু দুৰ্ভাগ্যক্রমে বাংলা দেশে সেরাপ মণ্ডলীও নাই এবং তঁহাদের ফিকা অনুকরণও নাই। লেখক যে বৰ্ণনা প্রয়োগ করিয়াছেন তাহা বাংলা দেশের কোনো বিশেষ দলের প্রতিই প্রয়োগ করা যাইতে পারে না। লেখা পড়িয়াই মনে হয় সাহিত্য সম্বন্ধে কাহারও সহিত লেখকের তর্ক হইয়া থাকিবে, এবং প্রতিপক্ষের নিকট হইতে এমন কোনো রূঢ় উত্তর শুনিয়া থাকিবেন যে, “ও-সকল তুমি বুঝিবে কী করিয়া!” সেই ক্ষোভে তাহার প্রতিপক্ষের একটি বিরূপ প্ৰতিমূর্তি আঁকিয়া অমনি কাগজে ছাপাইয়া বসিয়াছেন। লেখকের বিবেচনায় তাহার এ রচনা যতই তীব্র এবং অসামান্য ব্যঙ্গ রাসপূর্ণ হীেক-না-কেন ইহা ছাপায় প্রকাশ করিবার যোগ্য নয়। এরূপ লেখা সত্যও নহে, সুন্দরও নহে, এবং ইহাতে কাহারও কোনো উপকার দেখি না। -প্ল্যাঞ্চেটি। আদি ব্ৰাহ্মসমাজের শ্রদ্ধাস্পদ আচার্য শ্ৰীযুক্ত হেমচন্দ্ৰ বিদ্যারত্ন মহাশয় উক্ত নামে যে পত্র প্রকাশ করিয়াছেন তাহা বিশেষ প্ৰণিধানের যোগ্য। প্ল্যাঞ্চোটে বিদ্যারত্ন মহাশয় এবং একটি বালকের সহযোগে যে দুইটি ইংরাজি কবিতা বাহির হইয়াছে তাহা অতিশয় বিস্ময়জনক। বিশেষত শেষ কবিতাটি কোনো বাঙালির নিকট হইতে আশা করা যায় না। -‘একাল ও ওকালের মেয়ে’ যে লেখিকার রচনা আমরা তাহাকে ধন্যবাদ দিই। এরূপ সরল পরিষ্কার যুক্তিপূর্ণ এবং চিত্ৰিতবৎ লেখা কয়জন লেখক লিখিতে পারেন? লেখিকা কালের পরিবর্তন সম্বন্ধে যে গুটিকতক কথা বলিয়াছেন তাহা অতিশয় সারগর্ভ। যে লোক ট্রামে চড়িতেছে; পূর্বে যাহারা ঠনঠনের চটিও পরিত না আজ তাহারা বিলাতি জুতা-মোজা পরিতেছে; জীবনযাত্রা সম্বন্ধে পুরুষসমাজে যে আশ্চর্য পরিবর্তন প্রচলিত বর্তমান কালোচিত পরিবর্তনের লেশমাত্ৰ দেখিলেই এই নূতন ভাবের ভাবুক, এই নূতন বিদ্যালয়ের ছাত্র এই নূতন পরিচ্ছদ-পরিহিত নববিলাসী পরিহাস করেন, প্ৰহসন লেখেন এবং কেহ কেহ সীতা দময়ীকে স্মরণ করিয়া প্রকাশ্যে অশ্রু বিসর্জন করিয়া থাকেন। তাহারা আশা করেন সমাজের পুরুষাৰ্থ শিক্ষাকিরণে পাকিয়া রাঙা হইয়া উঠিবে এবং বাকি অর্ধেক সনাতন কচিভাব রক্ষা করিবে। এক যাত্রায় পৃথক ফল হয় না, এক ফলে পৃথক নিয়ম খাটে না। অতএব ভালোই বল আর মন্দই বল পুরুষের অনুগামিনী হওয়া স্ত্রীলোকের প্রাচীন ধর্ম- বর্তমান সহস্ৰ নূতনত্বের মধ্যে সেই প্রাচীন মনু-কথিত ধর্ম অব্যাহত থাকিবার চেষ্টা করিতেছে। লেখিকা বর্তমান আতিথ্য সম্বন্ধে যে দু-এক কথা লিখিয়াছেন তাহার মধ্যে অনেক ভাবিবার বিষয় VRtR