পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V8o রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী । কীৰ্তিক। ১২৯৮] কাৰ্তিক মাসের সাহিত্যে “হিন্দুজাতির রসায়ন" একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য প্ৰবন্ধ। এই প্ৰবন্ধে অনেকগুলি প্রাচীন রাসায়নিক যন্ত্রের বর্ণনা প্ৰকাশিত হইয়াছে। এই সংখ্যায় বিদ্যাসাগর মহাশয়ের আত্মজীবনচরিতের কয়েক পৃষ্ঠা বাহির হইয়াছে। ইহাতে অলংকারাবাহুল্য বা আড়ম্বরের লেশমাত্ৰ নাই। পূজনীয় লেখক মহাশয় সমগ্র গ্রন্থটি শেষ করিয়া যাইতে পারেন নাই বলিয়া মনে একান্ত আক্ষেপ জন্মে। এই গ্রন্থ সম্পূর্ণ হইলে বাঙালিদের পক্ষে শিক্ষার স্থল হইত। প্রথমত, একটি অকৃত্ৰিম মহত্ত্বের আদর্শ বঙ্গসাহিত্যে চিরজীবন লাভ করিয়া বিরাজ করিত, দ্বিতীয়ত, আপনার কথা কেমন করিয়া লিখিতে হয় বাঙালি তাহ শিখিতে পারিত। সাধারণত বাঙালি লেখকেরা নিজের জবানী কোনো কথা লিখিতে গেলে অতিশয় সহৃদয়তা প্রকাশ করিবার প্রাণপণ চেষ্টা করিয়া থাকেন— হায় হায় মারি মারি শব্দে পদে পদে হৃদয়াবেগ ও অশ্রুজল উদবেলিত করিয়া তোলেন। “আত্মজীবনচরিত যতটুকু বাহির হইয়াছে তাহার মধ্যে একটি সংযত সহাদয়তা এবং নিরলংকার সত্য প্রতিভাত হইয়া উঠিয়াছে। শ্ৰীজাতির প্রতি লেখক মহাশয় যে ভক্তি প্ৰকাশ করিয়াছেন তাহা কেমন সরল সমূলক ও অকৃত্রিম। আজকাল যাহারা স্ত্রীজাতির প্রতি আধ্যাত্মিক দেবত্ব আরোপ করিয়া বাকচাতুরি প্রকাশ করিয়া থাকেন তাহাদের সহিত কী প্ৰভেদ! म<न्म Vooroot S 88br নব্যভারত। অগ্রহায়ণ। [১২৯৮] “হিন্দুধর্মের আন্দোলন ও সংস্কার” নামক প্রবন্ধে লেখক প্রথমে বাংলার শিক্ষিত সমাজে হিন্দুধর্মের অবস্থায় পুরাতন হিন্দুপ্ৰথা সম্পূর্ণভাবে পুনঃপ্রচলিত হওয়া অসম্ভব। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলেন ভিন্ন দেশজাত দ্রব্যমাত্রই হিন্দুদের ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। কিন্তু বিলাতি আলু, কপি, কাবুলি মেওয়া প্রভৃতিও এখন বিলক্ষণ প্রচলিত হইয়াছে।’ ‘সোডালিমনেড় বরফ প্রভৃতি প্ৰকাশ্যরূপে হিন্দুসমাজে প্রচলিত। এ-সমস্ত যে স্পষ্ট যবন ও সেচ্ছদের হাতের জল।” তিনি বলেন, শাস্ত্ৰে পলাণ্ডুভক্ষণ নিষেধ কিন্তু দাক্ষিণাত্যে ব্ৰাহ্মণ হইতে ইতর জাতি পর্যন্ত সকলেই পলাণ্ডু ভক্ষণ করিয়া থাকে। ‘যবনকে স্পর্শ করিলে স্নান করিতে হয়, কিন্তু বঙ্গদেশ ব্যতীত, ভারতবর্ষের অপর অংশের হিন্দুগণ মুসলমানদের সহিত একত্রে বসিয়া তাম্বুল ভক্ষণ করেন।” যজ্ঞ-উপবীত হইবার পর আমাদিগকে অনুন বারো বৎসর গুরুগৃহে বাস করিয়া ব্ৰহ্মচর্য অবলম্বন করত শাস্ত্ৰ আলোচনা এবং শুরুর নিকট হইতে উপদেশ গ্ৰহণ করিতে হয়। পরে গুরুর অনুমতি লইয়া গৃহে প্রত্যাবর্তন করিতে হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে এ পদ্ধতি অনুসারে কে কার্যকরিয়া থাকে?” ব্রাহ্মাণের ত্রিসন্ধ্যা করিতে হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে যাহারা চাকুরি করেন তাহারা কী প্রকারে মধ্যাহ্নসন্ধ্যা সমাধা করিতে পারেন?” লেখক বলেন, যাঁহারা অনাচারী হিন্দুদিগকে শাসন করিবার জন্য সমুৎসুক তাহাদিগকেই হিন্দুয়ানি লঙ্ঘন করিতে দেখা যায়। দৃষ্টান্তস্বরূপে দেখাইয়াছেন, বঙ্গবাসী কার্যালয় হইতে নানাপ্রকার শাস্ত্রীয় গ্রন্থ প্রকাশ হইতেছে; ইহাতে করিয়া শাস্ত্রীয় বাক্য বেদবাক্যসকল স্ত্রী, শূদ্ৰ, বলিতে কি, যবন ও স্নেচ্ছদের গোচর হইতেছে। অধিক কী, বৈদিক সন্ধ্যাও তাহদের কর্তৃক । পরিচালিত পত্রিকায় প্রকাশিত ও ব্যাখ্যাত হইতেছে। অতঃপর লেখক বহুতর শান্ত্রিবচন উদধূত করিয়া দেখাইয়াছেন প্রাচীনকালেই বা ব্ৰাহ্মণের কীরাপ লক্ষণ ছিল এবং বর্তমানকালে তাহার কত পরিবর্তন হইয়াছে। এই প্ৰবন্ধের মধ্যে অনেক শিক্ষা ও চিন্তার বিষয় আছে। কেবল একটা কথা আমাদের নূতন ঠেকিল। বঙ্কিমবাবু যে শ্ৰীকৃষ্ণপ্ৰসন্ন সেন ও শশধর তর্কচূড়ামণির ধুয়া ধরিয়া হিন্দুধর্মের পক্ষপাতী হইয়াছেন এ কথা মুহুর্তকালের জন্যও প্রণিধানযোগ্য নহে। “খাবি চিত্র।” একটি কবিতা। লেখক শ্ৰীযুক্ত মধুসূদন রাও। নাম শুনিয়া কবিকে মহারাষ্ট্ৰীয় বলিয়া বোধ