পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*。 সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা | less vባቘማ ቐ፧ উজ্জ্বল এবং মহৎভাবে দীপ্তি পাইয়াছে। এই কবিতার মধ্যে আমরা একটি নূতন রসাবাদন করিয়া । পরিতৃপ্ত হইয়াছি। প্রাচীন ভারত সম্বন্ধে বাংলার অধিকাংশ লেখক যাহা লেখেন অহার মধ্যে । প্রাচীনত্বের প্রকৃত আন্ধান্দ পাওয়া যায় না; কিন্তু ঋবিচিত্র কবিতার মধ্যে একটি প্রাচীন গভীর ধ্রুপদের সুর বাজিতেছে। নব্যভারতে শ্ৰীযুক্ত রমেশচন্দ্র দত্তের হিন্দু আৰ্যদিগের প্রাচীন ইতিবৃত্ত । খণ্ডশ বাহির হইতেছে। রমেশবাবু যে এতটা শ্ৰম স্বীকার করিয়াছেন দেখিয়া আশ্চর্য হইলাম, , কারণ, আমাদের দেশের বুদ্ধিমানগণ প্রাচীন হিন্দুসমাজ ঘরে বসিয়া গড়িয়া থাকেন। সে সমাজে কী ছিল কী নাছিল, কোনটা হিন্দু কোনটা অহিন্দু সেটা যেন বিধাতাপুরুষ সূতিকাগৃহে তাহদের করিয়া রমেশবাবু এই যে প্রাচীন সমাজচিত্র প্রকাশ করিতেছেন ইহার সহিত আমাদের বাংলার আজন্ম-পণ্ডিতগণের মস্তিষ্ক-লিখনের ঐক্য হইবে এরূপ আশা করা যায় না। নিজের শখ অনুসারে তাহারা প্রত্যেকেই দুটি-চারিটি মনের মতো শ্লোক সংগ্ৰহ করিয়া রাখিয়াছেন, ইতিহাস বিজ্ঞানকে তাহার কাছে ঘেঁসিতৃে দেন না। মনে করো তাহার কোনো একটি শ্লোকে ঋষি বলিতেছেন রাত্রি, আমরা দেখিতেছি দিন। বঙ্গপণ্ডিত তৎক্ষণাৎ তাহার মীমাংসা করিয়া দিবেন। আচ্ছা চােখ বুজিয়া দেখো দিন কি রাত্রি' অমনি বিংশতি সহস্ৰ চেলা চোখ বুজিবেন এবং মস্তক আন্দোলন করিয়া বলবেন অহাে কী আশ্চর্য ঋষিবাক্যের কী মহিমা! গুরুদেবের কী তত্ত্বজ্ঞান! দিবালোকের লেশমাত্ৰ দেখিতেছি না”। যে হতভাগ্য চোখ খুলিয়া থাকিবে, যদি তাহার চোখ বন্ধ করিতে অক্ষম হন তো ধোপাঁ নাপিত বন্ধ করবেন, এবং দুই-একজন মহাপ্ৰাঞ্জ সৃষ্টিছাড়া তত্ত্ব উদভাবন করিয়া মিথ্যা হীেক খুব যে উচ্চশ্রেণীর ভারতবর্ষ তাহা নহে। বাংলাদেশের একখানি গ্রামকে অনেকখানি “আধ্যাত্মিক” গঙ্গাজলের সহিত মিশাল করিয়া একটি বৃহৎ ভারতবর্ষ রচনা করা হয়; সেখানেও কয়েকজন নিস্তেজ নিবীয মানুষ অদৃষ্টের করা-ধূত নাসারাজু অনুসরণ করিয়া সাতিশয় কৃশ ও পবিত্রভাবে ধীরে ধীরে চলিতেছে; সমাজ অর্থেজাতি লইয়া দলাদলি, ধর্ম অর্থে সর্ববিষয়েই স্বাধীন করা কাল হাঁ-কে না করার ক্ষমতা। একটু ভাবিয়া দেখিলেই বুঝা যাইবে বঙ্গসমাজ প্রাচীন হিন্দুসমাজের ন্যায় উন্নত ও সজীব নহে, অতএব বাঙালির কল্পনার দ্বারা প্রাচীন ভারতের আর গতি নাই। একজন চাষা বলিয়াছিল, আমি যদি রানী রাসমণি হাইতাম তবে দক্ষিণে একটা চিনির হাঁড়ি রাখিতাম, বামে একটা চিনির হাঁড়ি রাখিতাম, একবার ডানদিক হইতে একমুষ্টি লইয়া রাসমণির এতাধিক সন্তোষ ছিল না। রমেশবাবুও প্রমাণ পাইয়াছেন প্রাচীন ভারতে ব্ৰহ্মণ্য ও সাত্তিকতারই সর্বগ্রাসী প্রাদুর্ভাব ছিল না; মৃত্যুর যেরূপ একটা ভয়ানক নিশ্চল ভাব আছে তখনকার সমাজনিয়মের মধ্যে সেরূপ একটা অবিচল শ্বাসরোধী চাপ ছিল না, তখন বৰ্ণভেদ প্রথার মধ্যেও সজীব স্বাধীনতা ছিল। কিন্তু টিনিকেই যে লোক সর্বোৎকৃষ্ট খাদ্য বলিয়া স্থির । করিয়াছে, তাহাকে রানী রাসমণির আহারের বৈচিত্ৰ্য কে বুঝাইতে পরিবে?- দুর্ভাগ্যক্রমে একটি মত বহুকাল হইতে প্রচারিত হইয়াছে যে, হিন্দুসমাজের পরিবর্তন হয় নাই। সেই কথা লইয়া । আমরা গর্ব করিয়া থাকি যে আমাদের সমাজ এমনি সম্পূর্ণতা লাভ করিয়াছিল যে সহস্ৰ বৎসরে তাহার এক তিল পরিবর্তন সাধন করিতে পারে নাই। জগতের কোথাও কিছুই থামিয়া নাই, হয় SA 8y নার মধ্যে প্রাচীন ভারতের একটি শিশির-স্নাত পবিত্র নবীন উষালোক অতি নিৰ্মল :