পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V8S । ब्रदौन-सा5नांदी নিয়ম। জগতের মধ্যে কেবল হিন্দুসমাজ থামিয়া আছে। হিন্দুসমাজের শ্রেষ্ঠতার পক্ষে সেই একটি প্রধান যুক্তি, এ সমাজ সাধারণ জগতের নিয়মে চলে না, এই ঋষি-রচিত সমাজ বিশ্বামিত্ৰ-রচিত জগতের ন্যায় সৃষ্টিছাড়া। কিন্তু ইহারা এক মুখে দুই কথা বলিয়া থাকেন। একবার বলেন হিন্দুসমাজ নির্বিকার নিশ্চল, আবার সময়ান্তরে পতিত ভারতের জন্য বর্তমান অনাচারের জন্য কণ্ঠ ছাড়িয়া বিলাপ করিতে থাকেন। কিন্তু পতিত ভারত বলিতে কি প্রাচীন ভারতবর্ষের বিকার বুঝায় না? সেই হিন্দুধর্ম সেই হিন্দুসমাজ সবই যদি ঠিক থাকে তবে আমরা নূতনতর জীব কোথা হইতে আসিলাম? যুরোপীয় মহাদেশ” লেখাটি সন্তোষজনক নহে। কতকগুলা নোট এবং ইংরাজি, বাংলা, ফরাসি (ভুল বানানসমেত) একত্র মিশাইয়া সমস্ত ব্যাপারটা অত্যন্ত অপরিষ্কার এবং অসংলগ্ন হইয়াছে। বাংলা লেখার মধ্যে অনেকখানি করিয়া ইংরাজি এই পত্রে অন্যান্য প্ৰবন্ধেও দেখা যায় এবং সকল সময়ে তাহার অত্যাবশ্যকতা বুঝা যায় না। “বঙ্গবাসীর মৃত্যু” প্রবন্ধে লেখক বড়ো বেশি হাঁসফাঁস করিয়াছেন; লেখক যত সংযত ভাবে লিখিতেন লেখার বল তত বৃদ্ধি পাইত। হািদয়ের উত্তাপ অতিমাত্রায় রচনার মধ্যে প্রয়োগ করিলে অনেক সময়ে তাহা বাম্পের মতো লঘু হইয়া যায়। w সাহিত্য। অগ্রহায়ণ। বর্তমান-সংখ্যক সাহিত্যে আহার' সম্বন্ধে শ্ৰীযুক্ত চন্দ্ৰনাথ বসু মহাশয়ের যে প্রবন্ধ বাহির হইয়াছে তাহার বিস্তারিত সমালোচনা স্থানান্তরে প্রকাশিত হইল। ‘প্রাকৃতিক নির্বাচনে চন্দ্ৰশেখরবাবু ডারুয়িনের মতের কিয়দংশ সংক্ষেপে সরল ভাষায় ব্যক্ত করিয়াছেন। মুক্তি’ একটি ছোটাে গল্প। কতকটা রূপকের মতো। কিন্তু আমরা ইহার উপদেশ সম্যক গ্রহণ করিতে পারিলাম না। মুক্তি যে সংসারের বাহিরে হিমালয়ের শিখরের উপরে প্রাপ্তব্য তাহা সংগত বোধ হয় না। মুক্তি অর্থে আত্মার স্বাধীনতা, কিন্তু স্বাধীনতা অর্থে শূন্যতা নহে। অধিকার যত বিস্তৃত হয় আত্মার ক্ষেত্র ততই ব্যাপ্ত হয়। সেই অধিকার বিস্তারের উপায় প্রেম। প্রেমের বিষয়কে বিনাশ করিয়া মুক্তি নহে, প্রেমের বিষয়কে ব্যাপ্ত করিয়াই মুক্তি। বৈষয়িক স্বার্থপরতায় আমরা সমস্ত সুখ সম্পদ কেবল নিজের জন্য সঞ্চয় করিতে চেষ্টা করি।- কিন্তু সুখকে অনেকের মধ্যে বিভাগ করিয়া না দিলে সুখের প্রসারিত হয় না- এইজন্য কৃপণ প্রেমের বৃহত্তর সুখ হইতে বঞ্চিত হয়। আত্মসুখে বিশ্বসুখকে বাদ দিলে আত্মসুখ অতি ক্ষুদ্র হইয়া পড়ে। তেমনি আধ্যাত্মিক স্বার্থপরতায় আমরা আপনার আত্মটি কক্ষে লইয়া অনন্ত বিশ্বকে লঙ্ঘন করিয়া একাকী মুক্তিশিখরের উপরে চড়িয়া বসিতে চাহি। কিন্তু প্রেমের মুক্তি সেরাপ নহে- যে বিশ্বকে ঈশ্বর ত্যাগ করেন নাই, সে বিশ্বকে সেও ত্যাগ করে না। যে দিন নিখিলকে আপনার ও আপনাকে নিখিলের করিতে পরিবে সেই দিনই তােহর মুক্তি। কিন্তু তাহার পূর্বে অসংখ্য সোপান আছে তাহার কোনোটিকে অবহেলা করিবার নাহে। অধিকারের স্বাধীনতা এৰং অধিকারহীনতার স্বাধীনতায় আকাশপািতল প্রভেদ। -চীন পরিব্রাজক হিউএন্থ সম্ভের ভ্রমণবৃজন্ত অকলম্বন করিয়া রজনীকান্ত গুপ্ত মহাশয় ‘প্রাচীন ভারতবর্ষ নামে খৃঃ সপ্তম শতাবীর ভারতবর্ষের একটি চিত্ৰ প্ৰকাশ করিতেছেন। নাম লইয়া তারিখ লইয়া কেবল তর্কবতর্কের আবর্ত রচনা না করিয়া প্ৰাচীনকালের এক-একটি চিত্র অঙ্কিত করিলে পাঠকদিগের বাস্তবিক উপকার হয়। গুপ্ত মহাশয় যদি ভারতবর্থের ভিন্ন ভিন্ন সময়ের সামাজিক অবস্থা ও জীবনযাত্রার প্রণালী তৎসাময়িক সাহিত্য ও অন্যান্য প্রমাণ হইতে উদ্ধার করিয়া চিত্ৰবৎ পাঠকদের সম্মুখে ধরিতে পারেন। তবে সাহিত্যের একটি মহৎ অভাব দূর হয়। সাধনা (*R yŞetr ১. দ্র, “আহার সম্বন্ধে চন্দ্রনাথবাবুর মত', সমাজ পরিশিষ্ট, রবীন্দ্র-রচনাবলী ১২, পৃ. ৪৬২