পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাময়িক-সাহিত্য সমালােচনা | ৬৫১ হইলেও হিন্দুধর্মের অবমাননা করিতেন না, তিনি ব্রাহ্মাণ ও শ্রমণ, উভয়কেই আদরসহকারে আহবান করিতেন, এবং বুদ্ধের প্র ও হিন্দু দেব-মূর্তি উভয়ের প্রতিই সম্মান দেখাইতেন। প্ৰথম দিন পবিত্র মন্দিরে বুদ্ধের প্র স্থাপিত হইত। এই দিনে সর্বাপেক্ষা বহুমূল্য দ্রব্য বিতরিত হইত, এবং সর্বাপেক্ষা সুখাদ্য দ্রব্য অতিথি-অভ্যাগতদিগকে দেওয়া যাইত। দ্বিতীয় দিনে বিষ্ণু ও তৃতীয় দিনে শিবের মূর্তি মন্দিরের শোভা বিকাশ করিত। প্রথম দিনের বিতরিত দ্রব্যের অর্ধাংশ এই এক-একদিনে বিতরণ করা হইত। চতুর্থ দিন হইতে সাধারণ দান-কাৰ্য আরম্ভ হইত। কুড়ি দিন ব্রাহ্মণ ও শ্রমণেরা, দশ দিন হিন্দু দেবতা-পূজকেরা, এবং দশ দিন উলঙ্গ সন্ন্যাসীরা দান গ্ৰহণ করিতেন। এতদব্যতীত ত্রিশ দিন পর্যন্ত দরিদ্র নিরাশ্রয়, মাতাপিতৃহীন ও আত্মীয়স্বজনশূন্য ব্যক্তিদিগকে ধন দান করা হইত। সমুদয়ে পচাত্তর দিন পর্যন্ত উৎসবের কার্য চলিত। শেষদিনে মহারাজ শিলাদিত্য আপনার বহুমূল্য পরিচ্ছদ, মণিমুক্তা-খচিত স্বৰ্ণাভরণ, অত্যুজ্জ্বল মুক্তাহার প্রভৃতিসমুদয় অলংকার পরিত্যাগপূর্বক চীরশোভী বৌদ্ধ ভিক্ষুর বেশ পরিগ্রহ করিতেন। এই মহামূল্য আভরণরাশিও দরিদ্রদিগকে দান করা হইত। চীর ধারণ করিয়া মহারাজ অবসান হইল। এই সম্ভোষক্ষেত্রে আজ আমি সমুদায় দান করিয়া নিশ্চিন্ত হইলাম। মানবের অভীষ্ট পুণ্য-সঞ্চায়ের মানসে ভবিষ্যতেও আমি এইরূপ দান করিবার জন্য আমার সমস্ত সম্পত্তি রাশীকৃত করিয়া রাখিব।” এইরূপে পবিত্র প্রয়াগে সন্তোষক্ষেত্রের উৎসব পরিসমাপ্ত হইত। মহারাজ মুক্তহস্তে প্ৰায় সমস্তই দান করিতেন। কেবল রাজ্য-রক্ষা ও বিদ্ৰোহ-দমন জন্য হস্তী, ঘোটক ও অস্ত্ৰাদি অবশিষ্ট থাকিত। •• Koffer y Ridd নব্যভারত। বৈশাখ ১২৯৯] 'পুরাতন ও নূতন’। লেখক মহাশয়ের বক্তব্য এই যে, নূতন আসে এবং পুরাতন যায়- কিন্তু হায়, বর্তমান প্ৰবন্ধে সেই বিশ্বব্যাপী নিয়মের কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না। পদের পর পদ আসিতেছে, কিন্তু পুরাতন কথাও ঘুচে না নূতন কথাও জুটে না। কোনো কোনো মনস্তত্ত্ববিৎ পণ্ডিত বলেন কথা ব্যতীত ভাবা অসম্ভব, সে কথা কত দূর সত্য বলিতে পারি না, কিন্তু দেখা যাইতেছে আমরা কিছুমাত্র না ভাবিয়াও অনর্গল কথা কহিয়া যাইতে পারি। অনেক স্থলে কথা কীটের মতো অতি দ্রুতবেগে আপনার বংশবৃদ্ধি করিয়া চলে, ভাবের জন্য অপেক্ষা করে না। যদি একবার দৈবাৎ কলমের মুখে বাহির হইল- নূতনের ধারে পুরাতন থাকে না” আমনি তাহার পর আরম্ভ হইল বৃক্ষে নূতন পত্রের উদগম হইলে পুরাতন পত্র খসিয়া পড়ে।” তস্য পুত্ৰ : “নুতন ফুল ফুটিতেছে দেখিলে পুরাতন ফুল ঝরিয়া পড়ে।” তস্য পুত্ৰ : “নবীন সূৰ্য উঠিতেছে দেখিলে চান্দ পালায়।” তস্য পুত্ৰ : “নব বসন্ত আসিতেছে দেখিলে শীত অন্তর্ধন হয়।” তস্য পুত্ৰ : “নুতন বন্ধুর উদয়ে পুরাতন বন্ধু লজ্জায় মুখ নত করিয়া চলিয়া যায়।’ (মানবের সীেভাগ্যক্রমে পুরাতন বন্ধুর এরূপ অকারণ অতিলজ্জাশীলতা সচরাচর দেখা যায় না।) তস্য পুত্ৰ : “নুতন বৎসর আসিতেছে দেখিয়া পুরাতন বৎসর থাকিবে কেন?” অবশেষে “৯৯ উদয়ে ওই দেখো ৯৮ সােল কালের গর্ভে ডুবিয়া গিয়াছে।” এতক্ষণে কারণটা পাওয়া গেল।-- নববর্ষ আসিয়াছে, অতএব সময়োচিত কতকগুলা বাক্যবিন্যাস অত্যাবশ্যক, অতএব প্রথা অনুসারে কালের গতি সম্বন্ধে উন্নতিজনক উপদেশ-হতভাগ্য পাঠককে নতশিরে সহা করিতে হইবে। তাই । হ্রাসবৃদ্ধি’ কাহাকে বলে সেই অতি নূতন ও দুরূহ তত্ত্বটি সম্পাদক মহাশয় দৃষ্টান্ত দ্বারা বুঝাইতে বসিয়াছেন, পাঠকেরাও অগত্যা কঁচিয়া শিশু সাজিয়া বুঝিতে চেষ্টা করিতেছেন- হ্রাসবৃদ্ধির