পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WeNeSR * झीक्ष-दूष्मांदकी পিপাসিতকে পানীয় জল দিয়া তাহার নিকট হইতে পয়সা লওয়া আসিয়ার (oriental) রাজাদিগের ধর্ম ও আচারবিরুদ্ধ। জয়পুর প্রভৃতি দেশীয় রাজ্যের রাজারা প্রজাসাধারণকে জল জোগাইয়া কর গ্রহণ করেন না।” ইংরাজের ব্যবস্থায় জলও যেমন কলে আসে, সঙ্গে সঙ্গে কারও তেমনি কলে আদায় হইয়া যায়। ইংরাজরাজ্যের সুশাসন ও সুব্যবস্থা যে আমাদের কাছে কলের মতো বোধ হয়, তাহা যে অনেক সময় আমাদের কল্পনা এবং হাদয় আকর্ষণ করিতে পারে না তাহার কারণ ইংরাজ-রাজকার্যে রাজ্যোচিত প্ৰত্যক্ষ ঔদার্য দেখিতে পাওয়া যায় না। রাজত্ব যেন একটা বৃহৎ দোকান : সওদাগরের "একচেটি রাজকাৰ্য-নামক মালগুলি প্ৰজাদিগকে অগত্যা কিনিতে হয়। এমন-কি, রাজদ্বারে বিচারপ্রার্থ হইলেও দীনতম প্ৰজাকেও ট্যাক হইতে পয়সা গণিয়া দিতে হয়। হইতে পারে, সে কালে বিচারক ঘুষ লইতে ছাড়িত না, কিন্তু তাহা রাজার দাবি নহে, তাহা কৰ্মচারীর চুরি। তখন রাজপথ, পান্থশালা, দীঘিকা রাজার দান বলিয়া প্ৰজারা কৃতজ্ঞচিত্তে গ্ৰহণ করিত। এখন পথ্যকর পাবলিক কর গণিয়া দিয়াও তাহার প্রত্যক্ষফল আল্প লোকে দেখিতে পায়। পূর্বে রাজার জন্মদিনে রাজাই দান বিতরণ করিয়া সাধারণকে বিস্মিত করিয়া দিতেন এক্ষণে রাজকীয় কোনো মঙ্গলউৎসবে প্ৰজাদিগকেই চান্দা জোগাইতে হয়। জেলায় ছোটােলািট প্রভৃতি রাজপ্রতিনিধির শুভাগমনকে আপনাদের নিকট স্মরণীয় করিবার জন্য প্রজাদের আপনাদিগকেই চেষ্টা করিতে হয় এবং তাঁহাদের সেই কৃতকীর্তিতে রাজা নিজের নাম অঙ্কিত করেন। কানুজংশনে যখন প্লেগ-সন্দিগ্ধদের বন্দীশালা দেখিতাম তখন বারংবার এ কথা মনে হইত যে, অশোকের ন্যায় আকবরের ন্যায় কোনো প্ৰাচ্য রাজা যদি সাধারণের হিতের জন্য এইপ্রকারের অবরোধ আবশ্যক বোধ করিতেন। তবে তাহার ব্যবস্থা কখনোই এমন দীনহীন ও একান্ত অপ্রবৃত্তিকর হইত না- অন্তত নিরপরাধ অবরুদ্ধদের পানাহার রাজব্যয়ে সম্পন্ন হইত; যথেষ্ট বেতনভুক ডাক্তার প্রভৃতিরা সমস্ত স্বাচ্ছন্দ্য ভোগ করিতেছেন। অথচ রাজ্যের হিত্যেদেশে উৎসৃষ্ট যে-সকল দুৰ্ভাগা তীহাদের সযত্নসেব্য অতিথিস্থানীয়, যাহারা পরদেশে বিনাদোষে নিরুপায় ভাবে বন্দীকৃত, হয়তো পাথেয়বান সঙ্গীগণ হইতে বিচ্ছিন্ন, তাহাদিগকে স্বচেষ্টায় নিজাব্যয়ে কষ্টে জীবনধারণ করিতে দেওয়া অন্তত প্ৰাচ্য প্রজাদের চক্ষে কোনোমতে রাজ্যোচিত বলিয়া বোধ হয় না। সাধারণের জন্য রাজার হিতচেষ্টা বিভীষিকাময় না হইয়া যথার্থ রমণীয় মূর্তি ধারণ করিত যদি এই সকল অবরোধশালা এবং মারী হাসপাতালের মধ্যে যত্ন ও ঔদার্য প্ৰকাশ পাইত। দৃষ্টিমাত্রেই যাহার বহিরাকারে দৈন্য এবং অবহেলা পরিস্ফুট হইয়া উঠে তাহার মধ্যে যে সাংঘাতিক অবস্থায় যথোপযুক্ত সেবা-শুশ্ৰষা মিলিবে ইহা কাহারও প্ৰতীতি হয় না; রাজপুরুষের নিকট সর্ববিষয়ে আমাদের মূল্য যে কতই অল্প তাহা প্রত্যক্ষ করিয়া সংকটের সময় আমাদের আতঙ্ক বাড়িয়া যায় এবং তখন ভীত সাধারণকে সান্তনাদান করা দুঃসাধ্য হইয়া উঠে। ঘোষণা দ্বারা আশ্বাসের দ্বারা যথেষ্ট ফল হয় না; যে-সকল প্রত্যক্ষ রাজচেষ্টা বরাভয় উদারমূর্তি যায় তাহাঁই ফলদায়ক। যাহা সংকল্পে শুভ এবং যাহা পরিণামে শুভ তাহকে আকারে প্রকারেও শুভসুন্দর করিয়া না তুলিলে তাহার হিতকরিত্ব সম্পূর্ণ হয় না, এমন-কি, অনেক সময় তাহ হিতে বিপরীত হয়। যাহা হউক, আলোচ্য প্রবন্ধের জন্য শাস্ত্রীমহাশয় আমাদের ধন্যবাদার্থ। শ্ৰীযুক্ত অক্ষয়কুমার বড়াল ইংরাজি কবি হুড়-রচিত “এ পোরেন্টাল ওড় টু মাই সন' নামক কবিতার মর্ম গ্রহণ করিয়া আদর’ নামক যে কবিতা রচনা করিয়াছেন তাহা সুন্দর হইয়াছেতাহাতে মূল কবিতার হাস্যমিশ্ৰিত মেহরাসটুকু আছে অথচ তাহাতে অনুবাদের সংকীর্ণতা দূর হইয়া কবির স্বকীয় ক্ষমতা প্ৰকাশ পাইয়াছে। ডাক্তার যোগেন্দ্রনাথ মিত্রের ‘প্লেগ বা মহামারী প্রকাশিত হইয়া গেছে- নব্যভারতে তাহার খণ্ডশ পুনঃপ্রকাশ বাহুল্যমাত্র। ,