পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা WVG প্ৰদীপ। আষাঢ় ১৩০৫] . শ্ৰীযুক্ত চন্দ্রনাথ বসুর ‘বন্ধুবৎসল বঙ্কিমচন্দ্র” প্ৰবন্ধটি আন্তরিক সহৃদয়তা ও সরলতাগুণে সবিশেষ উপাদেয় হইয়াছে। সাধারণ লেখকের হস্তে পড়িলে সুলভ এবং শূন্য হৃদয়োচ্ছাসের আড়ম্বরে প্ৰবন্ধটি স্বকীত ফেনিল হইয়া উঠিত। সমরু' প্ৰবন্ধে শ্ৰীযুক্ত নিখিলনাথ রায় নবাবী আমলের সৈন্যরচনায় যুরোপীয় নায়কদিগের কর্তৃত্ব আলোচনা করিয়াছেন। “চৈতালি-সমালোচনা সম্বন্ধে বক্তব্য’ নামক প্ৰবন্ধ রচয়িতার প্রতি ভারতী-সম্পাদক যদি কৃতজ্ঞতা প্ৰকাশ করেন। তবে প্রার্থনা করি পাঠকগণ সেই অহমিকা ক্ষমা করিবেন। কোনো লেখকের কবিতা যে সকল পাঠকেরই ভালো লাগিবে এমন দুরাশা কেহ করিতে পারেন না, কিন্তু যিনি সরল শ্ৰদ্ধার সহিত তাহার মৰ্মগ্রহণে প্ৰবৃত্ত হন এবং উপভোগের আনন্দ মুক্তভাবে প্রকাশ করেন। তঁহার উৎসাহ লেখকের কাব্যাকাননে বসন্তের দক্ষিণ সমীরণের ন্যায় কাৰ্য করে। ‘ঋণ-পরিশোধ” গল্পে ভাষার সরসতা সত্ত্বেও ঘটনা বর্ণনা এবং চরিত্র রচনার মধ্যে একটা বানানো ভাব থাকাতে তাহা পাঠকের নিকট সত্যাবৎ প্রত্যয়জনক হইয়া উঠে নাই। প্রভাতকুমারের অধিকাংশ কবিতায় যে একটি প্রচ্ছন্ন ক্লিন্ধ । হাস্য থাকে ‘অনন্ত শয্যা’ কবিতাটির মধ্যেও তাহা পাওয়া যায়। অঞ্জলি। জ্যৈষ্ঠ (১৩০৫]। ২য় সংখ্যা। এখানি একটি শিক্ষা-বিষয়ক মাসিক পত্রিকা। শ্ৰীযুক্ত রাজেশ্বর গুপ্ত -কর্তৃক সম্পাদিত। আমরা এই পত্রিকার উন্নতি প্রার্থনা করি। শিক্ষাপ্রণালীর উৎকৰ্ষবিধান সম্বন্ধে যুরোপে উত্তরোত্তর আলোচনা বাড়িয়া চলিয়াছে। শিক্ষা কী উপায়ে সহজ, মনোরম স্থায়ী এবং যুক্তিসংগত হইতে পারে তৎসম্বন্ধে নানা প্রকার পদ্ধতি এবং পুস্তকের প্রচার হইতেছে। ইংরাজি ভাষায় শিক্ষা সাধন করিতে হয় বলিয়া বাঙালির শিক্ষাকার্য একটি গুরুতর ভারস্বরূপ হইয়া আমাদের শরীর মনকে জীর্ণ করিতেছে- অতএব শিক্ষার নবাবিষ্কৃত সহজ ও প্রকৃষ্ট পথগুলির সম্বন্ধে আলোচনা আমাদের দেশে বিশেষ ফলপ্ৰদ হইবার কথা কিন্তু আমাদের দেশের উদাসীন শিক্ষকগণ চিরপ্রচলিত দুঃখাবহ পথগুলি যে সহজে ছাড়িবেন এমন আশা রাখি না। যাহা হউক, আমাদের স্কুলে প্রচলিত বিশেষ বিশেষ শিক্ষণীয় বিষয়, যথা ইতিহাস, ভূগোল, পাটিগণিত, জ্যামিতি, সংস্কৃতভাষা, ইংরাজিভাষা, ব্যাকরণ, প্রকৃতিবিজ্ঞান প্রভৃতি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ বিস্তারিত আলোচনা এবং প্রতিবৎসর যে-সকল পাঠ্যপুস্তক নির্দিষ্ট ও পরীক্ষার প্রশ্ন দেওয়া হয় তাহার উপযুক্ত সমালোচনা আমরা অঞ্জলির নিকট হইতে আশা করি। ভারতী Ks Soos नाश्टिा। दभाथ [S७०१] - শ্ৰীযুক্ত রামেন্দ্রসুন্দর ত্ৰিবেদীর ‘প্রতীত্যসমূৎপাদ’ প্ৰবন্ধটি চিন্তাপূর্ণ। নামটি এবং বিষয়টি আমাদের অপরিচিত। লেখক বলিতেছেন, ভগবান শাক্যকুমার সিদ্ধার্থ ‘বোধিক্ৰমমূলে বুদ্ধত্বলাভের সময় জীবনব্যাধির কারণস্বরূপ দ্বাদশটি নিদানের আবিষ্কার করিয়াছিলেন। এই নিদানতত্ত্বের নাম প্রতীত্যসমূৎপাদ। দ্বাদশটি নিদানের নাম যথাক্রমে এই— অবিদ্যা, সংস্কার, বিজ্ঞান, নােমরূপ, ষড়ায়তন, স্পর্শ, বেদনা, তৃষ্ণা, উপাদান, ভব, জাতি, জরােমরণ।” এই নিদানতত্ত্বের ব্যাখ্যা লইয়া নানা মত আছে, ত্ৰিবেদী মহাশয় তাহাতে আর-একটি যোগ করিয়াছেন। কিন্তু তাহার ব্যাখ্যা কিয়দুর পর্যন্ত শক্ত মাটির উপর দিয়া আসিয়া চােরাবালির মধ্যে হারাইয়া গেছে; পরিণাম পৰ্যন্ত পৌঁছে নাই। ত্ৰিবেদী মহাশয়ের ব্যাখ্যার প্রথমাংশ যদি ইতিহাসসংগত হয়, অর্থাৎ স্বাধীন যুক্তিমূলক না হইয়া যদি নানা বৌদ্ধশাস্ত্র ও সাহিত্যদ্বারা পোষিত হয়, তবে ইহা সত্য যে, বীেদ্ধদৰ্শন আধুনিক পাশ্চাত্যবিজ্ঞানমূলক দর্শনের সহিত প্রধানত একমতাত্মক। কিন্তু প্রচুর