পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা VS ইহার কোনো সংখ্যাই অবহেলাপূর্বক হরাইতে দেওয়া যায় না- ইহার প্রতি সংখ্যাই বঙ্গ সাহিত্যের একটি মূল্যবান ভাণ্ডার নির্মাণ করিয়া তুলিতেছে। সম্পাদক মহাশয় তাহার গুরুতর কর্তব্য যথারাপে নিৰ্ণয় করিতে পারিয়াছেন এবং তাহা পালন করিবার শক্তিও তাহার আছে। প্ৰদীপ। ভাদ্র (১৩০৫] ‘বেনামী চিঠি’ কৌতুকরসপূর্ণ ক্ষুদ্র সুলিখিত গল্প। গত বৎসর সূর্যের পূর্ণগ্ৰাস পরিদর্শন উপলক্ষে দেশবিদেশ হইতে পণ্ডিতগণ ভারতবর্ষের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে সমবেত হইয়াছিলেন। কাপ্তেন হিলস কেমব্রিজের নিউয়ল সাহেব পুলগাঁও স্টেশনে গ্ৰহণ পর্যবেক্ষণের জন্য শিবির স্থাপন করিয়াছিলেন। ভারত গবর্মেন্ট ইহাদের সহায়তার জন্য দেরাদুন হইতে কর্মচারী প্রেরণ করিয়াছিলেন। পুলগাঁওয়ে সূর্যগ্ৰহণ’ প্ৰবন্ধের লেখক। তঁহাদের মধ্যে একজন। কীরূপ বহুচেষ্টাকৃত অভ্যাস ও সতর্কতার সহিত কিরূপ যন্ত্রসাধ্যাবৎ শৃঙ্খলা সহকারে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সূৰ্যগ্রাসের বৈজ্ঞানিক পরিদর্শনকাৰ্য সমাধা হয় এই প্রবন্ধে তাহার বর্ণনা পাঠ করিয়া আনন্দলাভ করিলাম। "ছেলেকে বিলাতে পাঠাইব কি?” প্রবন্ধে লেখক শ্ৰীযুক্ত নগেন্দ্রনাথ গুপ্ত র্তাহার স্বাভাবিক সরস ভাষায় সময়োপযোগী আলোচনার অবতারণা করিয়াছেন। এ সম্বন্ধে আমাদের বিশ্বাস এই যে, বিলাতফেরতার দল যত সংখ্যায় বাড়িবে ততই তঁহাদের বাহা বেশভূষার অভিমান ও উদ্ধত স্বাতন্ত্র্য কমিয়া যাইবে। প্ৰথম চটকে যে বাড়াবাড়ি হয় তাহার একটা সংশোধনের সময় আসে। হিন্দুসমাজও ক্রমে আপন অসংগত ও কৃত্রিম কঠোরতা শিথিল করিয়া আনিতেছে, তাহারাও যেন তাঁহাদের পুরাতন পৈতৃক সমাজের প্রতি অপেক্ষাকৃত বিনীতভাবে ধারণ করিতেছেন। তাহা ছাড়া বোধ করি কনগ্রেস উপলক্ষে বোম্বাই প্রভৃতি প্রদেশের সবল ও সরল জাতীয় ভাবের আদর্শ আমাদের পক্ষে সুদৃষ্টাস্তের কাজ করিতেছে। এই সংখ্যায় ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকারের সুরচিত জীবনী শেষ হইয়া পরলোকগত দীনবন্ধু মিত্রের সচিত্র বাহির হইয়াছে। স্বদেশের মহৎজীবনী প্রচারের দ্বারা প্ৰদীপ উত্তরোত্তর জ্যোতি লাভ উৎসাহ। জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় ১৩০৫] বিশ্বরচনা’ প্ৰবন্ধটি সুগভীর। জগৎশেঠ নিখিলবাবুর রচিত ঐতিহাসিক প্ৰবন্ধ। এই প্ৰবন্ধগুলিতে বাংলার ইতিহাস উত্তরোত্তর সঞ্চিত হইয়া উঠিতেছে দেখিয়া আমরা আশান্বিত হইতেছি। “রাজা রামানন্দ রায়” স্বনামখ্যাত বৈষ্ণব মহাত্মার জীবনচরিত; উৎসাহের ক্ষুদ্রায়তনবশত ক্ষুদ্রখণ্ডে প্রকাশিত হইতেছেইহাই এ প্রবন্ধের একমাত্র দোষ। ভূগর্ভে বৈজ্ঞানিক প্ৰবন্ধ যত্নপূর্বক পাঠ্য। আষাঢ় মাসের উৎসাহে ‘হেস্টিংসের শিক্ষানবিশী’ প্ৰবন্ধে সংক্ষেপে অনেক গুরুতর কথার সন্নিবেশ আছে। হেস্টিংস যখন ইংরাজের নবরাজ্যক্ষেত্ৰে সবেমাত্র অফুরিত হইয়া উঠিতেছেন তখনি বর্ধিতপ্ৰতাপ নন্দকুমারের ছায়া তাঁহাকে অভিভূত করিয়া দাঁড়াইয়াছিল। তাহার পর যখন হেস্টিংসের দিন আসিল তখন কি তিনি সে কথা একেবারে ভুলিয়াছিলেন? অজলি। শ্রাবণ ১৩০৫] আমরা আশা করি, অঞ্জলিতে শিক্ষাপ্রণালী সম্বন্ধে অপেক্ষাকৃত বিস্তারিত প্ৰবন্ধ বাহির হইবে; নতুবা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রবন্ধে শিক্ষকেরা বিশেষ সাহায্য লাভ করিতে পরিবেন না। আজকাল শিক্ষাপদ্ধতি লইয়া ইংরাজিতে এত পুস্তক এবং পত্রিকা বাহির হইতেছে যে শিক্ষাসুগমের নূতন নূতন উপায় সম্বন্ধে লেখা শেষ করা যায় না। উচ্চারণ দোষ সংশোধন’, ‘ভৌগোলিক নাম লিখন ও পঠন’, ‘পুনরালোচনা” প্রভৃতি প্ৰবন্ধগুলি যথেষ্ট বিত্তীর্ণ হয় নাই- অনেকটা সাধারণ কথার উপর দিয়াই গিয়াছে। এবারকার অঞ্জলিতে ‘সোনারুপার বিবাদ’ প্ৰবন্ধটি প্রাঞ্জল এবং