পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VVer * রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী সময়োপযোগী হইয়াছে। বর্তমান কালে মুদ্রাবিপাকের আলোচনা দেশে বিদেশে জাগিয়া উঠিয়াছে অথচ এ সম্বন্ধে মোটামুটি কথাও আমাদের দেশের অনেকের অগোচর। ভারতী ज्ञानि ७७०6 সাহিত্য-পরিষৎ পত্রিকা। ৫ম ভাগ, ৩য় সংখ্যা ১৩০৫) , বর্তমান সংখ্যাটি বিচিত্ৰ বিষয় বিন্যাসে বিশেষ ঔৎসুক্যজনক হইয়াছে। পত্রিকায় চণ্ডিদাসের যে নূতন পদাবলী প্রকাশিত হইতেছে তাহা বহু মূল্যবান। বিশেষত কয়েকটি পদের মধ্যে চণ্ডিদাসের জীবনবৃত্তান্তের যে আভাস পাওয়া যায় তাহা বিশেষ কৌতুকাবহ। সম্পাদক মহাশয় আদর্শ পুথির বানান সংশোধন করিয়া দেন নাই সেজন্য তিনি আমাদের ধন্যবাদভাজন। প্রাচীন-গ্ৰন্থসকলের যে-সমস্ত মুদ্রিত সংস্করণ আজকাল বাহির হয় তাহাতে বানান-সংশোধকগণ কালাপাহাড়ের বৃত্তি অবলম্বন করিয়াছেন। তাহারা সংস্কৃত বানানকে বাংলা বানানের আদর্শ কল্পনা করিয়া যথাৰ্থ বাংলা বানান নির্বিচারে নষ্ট করিয়াছেন। ইহাতে ভাষাতত্তজিজ্ঞাসুদিগের বিশেষ অসুবিধা ঘটিয়াছে। বর্তমান সাহিত্যের বাংলা বহুল পরিমাণে সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতদিগের উদভাবিত বলিয়া বাংলা বানান, এমন-কি, বাংলা পদবিন্যাস-প্ৰণালী তাহার স্বাভাবিক পথভ্ৰষ্ট হইয়া গিয়াছে, এখন তাহাকে স্বপথে ফিরাইয়া লইয়া যাওয়া সম্ভবপর নহে। কিন্তু আধুনিক বাংলার আদর্শে যাহারা প্রাচীন পুথি সংশোধন করিতে থাকেন তাহারা পরম অনিষ্ট করেন। “স্ত্রী কবি মাধবী” প্রবন্ধের প্রারম্ভে লেখক শ্ৰীযুক্ত অচ্যুতচরণ চৌধুরী লিখিয়াছেন- “এ পর্যন্ত প্রাচীন বঙ্গসাহিত্যে আমরা একজনমাত্র স্ত্রী-কবির কবিতাকুসুমের সৌরভ সুষমার সন্ধান প্ৰাপ্ত হইয়াছি, তিনিই মাধবী দেবী।” মাধবী উৎকলবাসিনী। প্ৰবন্ধে তাহার রচিত বাংলা পদাবলীর যে আদর্শ পাওয়া গিয়াছে তাহা বিস্ময়জনক। তাহার ভাষা পুরুষ বৈষ্ণব কবিদের অপেক্ষা কোনো অংশেই নূ্যন নহে। সেই প্রাচীনকালে উৎকল ভূমি বাংলা ভাষার উপর যে অধিকার লাভ করিয়াছিল এক্ষণে নব্যউৎকল তাহা স্বেচ্ছাপূর্বক পরিত্যাগ করিতেছে তাহা বাংলার পক্ষে দুঃখের কারণ এবং উৎকলের পক্ষেও দুর্ভাগ্যের বিষয়। ‘গৌড়াধিপ মহীপালদেবের তাম্রশাসন’ দিনাজপুরের ম্যাজিস্ট্রেট শ্ৰীযুক্ত নন্দকৃষ্ণ বসুর সহায়তায় বর্তমান পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হইয়াছে। ‘বিলাসপুর নামক জয়স্কন্ধাবার হইতে, বিষুবসংক্রাস্তিতে গঙ্গাস্নান করিয়া পরম সৌগত পরমভট্টারক মহারাজাধিরাজ মহীপালদেব ভট্টাপুত্ৰ হৃষীকেশের পৌত্র, মধুসূদনের পুত্র, পরাশর-গোত্রজ (শক্তি, বশিষ্ঠ ও পরাশর প্রবারভুক্ত) দান করেন।” যিনি দিয়াছেন এবং তাম্রশাসনোক্ত যে গ্রাম দান করা হইয়াছে পত্রিকায় তাহার আলোচনা হইয়াছে। কিন্তু যাঁহাকে দেওয়া হইয়াছে তাহার সম্বন্ধে কোনােরূপ আলোচনাই নাই। কুলজিগ্রন্থ হইতে তাঁহার বিবরণ উদ্ধার করিলে ঐতিহাসিক কাল নির্ণয়ের অনেক সহায়তা হয়। ‘ধোয়ী কবির পবনদূত প্ৰবন্ধটি বিশেষ মনোহর হইয়াছে। গীতগোবিন্দের শ্লোকে ধোয়ী কবির নামোল্লেখ অনেকে দেখিয়াছেন। অনেকে দিন অনুসন্ধানের পর সম্প্রতি তাহার রচিত পবনদূত কাব্য আবিষ্কৃত হইয়াছে। মহামহােপাধ্যায় পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাহার যে বিবরণ এবং মধ্যে মধ্যে অনুবাদ প্রকাশ করিয়াছেন তাহা অত্যন্ত সরস হইয়াছে। : ‘পাঁচালিকার ঠাকুরদাস’ প্ৰবন্ধে লেখক শ্ৰীযুক্ত ব্যোমকেশ মুস্তাফি বাংলা পাঁচালি-সাহিত্যইতিহাসের একাংশ উদঘাটন করিয়াছেন। ; প্ৰদীপ। আশ্বিন ও কার্তিক (১৩০৫] এই যুগল সংখ্যক প্ৰদীপ পাঠ করিয়া আমরা বিশেষ পরিতৃপ্ত হইয়াছি। ইহার প্রায় প্রত্যেক গদ্য