পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী ܠܐbܛ সেই শুধু সুখী, ভালোবাসে যার প্রাণ। ইহার মর্ম কথাটা এই যে, ভালোবাসায় হাদয় মন যে একটা গতি প্রাপ্ত হয় তাহতেই এমন একটা গভীর এবং উদার পরিতৃপ্তি আছে যে, প্রবল বেগে সুখ-দুঃখের মধ্যে আন্দোলিত হইয়াও মোটের উপর সুখের ভাবই থাকিয়া যায়, এমন-কি, এই আন্দোলনে সুখ বল প্রাপ্ত হয়।” এই সুখের সহিত দুইটি মানসিক কারণ লিপ্ত আছে। প্রথমত, দুঃখ যে পর্যন্ত একটা বিশেষ সীমা না লঙ্ঘন করে সে পর্যন্ত সুখের পশ্চাতে থাকিয়া সুখকে প্রস্ফুটিত করিয়া তোলে। এই দুঃখ মিশ্ৰিত গভীর সুখের জন্য অধিকতর সচেষ্ট। দ্বিতীয়ত, দুঃখেরই একটা বিশেষ আকর্ষণ আছে। কারণ, দুঃখের দ্বারা হৃদয়ের মধ্যে যে একটা প্রবল বেগ, সমস্ত প্রকৃতির একটা একাগ্র পরিচালনা উপস্থিত হয় তাহাতেই একটা বিশেষ পরিতৃপ্তি আছে। ক্ষমতার চালনামাত্রই নিতান্ত অপরিমিত না হইলে একটা আনন্দ দান করে। বিখ্যাত দার্শনিক ওগুস্তু কোৎ তাহার প্রণয়িনীর মৃত্যুর পরে এই বলিয়া শোক প্রকাশ করিয়াছিলেন, “আমি মরিবার পূর্বে মনুষ্যপ্রকৃতির সর্বোচ্চ মনোভাব যে অনুভব করিতে পারিয়াছি সে কেবল তোমারই প্ৰসাদে। এই মনোভাবের সঙ্গে সঙ্গে যত কিছু কঠিনতম যন্ত্রণা ভোগ করিয়াছি সেইসঙ্গে এ কথা সর্বদাই মনে উদয় হইয়াছে যে, হৃদয়কে পরিপূর্ণ করাই সুখের একমাত্র উপায়, তা সে যদি দুঃখ দিয়া তীব্রতম যন্ত্রণা দিয়া হয় সেও স্বীকার।’- আমরা যদি দুঃখ হইতে সম্পূর্ণ অব্যাহতি পাইতে চাই। তবে কিছুতেই ভালোবাসিতে পারি না। কিন্তু ভালোবাসাঁই যদি সর্বোচ্চ সুখ হয় তবে দুঃখের ভয়ে কে তাহাকে ত্যাগ করিবে! কর্মানুষ্ঠানের প্রবলতা ও জীবনের পরিপূর্ণতার সঙ্গে সঙ্গে বিস্তর ব্যয়, মুহুর্মুহু ঘাত-প্রতিঘাত এবং অবিশ্রাম আন্দোলন আছেই। কিন্তু জীবনের সর্বোচ্চ সম্পদগুলি বিনামূল্যে কে প্রত্যাশা করে! মনস্তত্ত্ববিৎ পণ্ডিতের কথা উপরে প্রকাশিত হইল এখন কবি চণ্ডিদাসের দুটি কথা উদ্ধৃত করিয়া শেষ করি। রাধিক যখন অসহ্য বেদনায় বলিতেছেন “বিধি যদি শুনিত, মরণ হইত, ঘুচিত সকল দুখ’ চণ্ডীদাস কয় “এমতি হইলে পিরীতির কিবা সুখ!” দুঃখই যদি গেল। তবে সুখ কিসের! IRR ቕ፡ Čb >&aby বিলাতি খবরের কাগজে দেখা যায় যুরোপে সোশ্যালিস্ট সম্প্রদায়ের উপদ্রব প্রতিদিন গুরুতর হইয়া উঠিতেছে। ইহাদের দ্বারা সেখানে আজ হউক বা দুই দিন পরে হউক, একটা প্রচণ্ড সামাজিক বিপ্লব ঘটা অসম্ভব নহে। অতএব সোশ্যালিজম মতটা কী তাহা আলোচনা করিয়া দেখিতে কৌতুহল জন্মে। ১. বলা আবশ্যক, এ-সকল কথা বলিষ্ঠ এবং মহৎ হৃদয় লোকদের কথা। যাহারা দুর্বল এবং ক্ষুদ্র তাহারা এত দুখ এবং এত সুখ সহিতে পারে না, সুতরাং তাহদের পক্ষে দুঃখের পরিণামই অধিক হইয়া পড়ে। এইজন্য তাহারা বলিয়া থাকে, আমার সুখে কাজ নাই দুঃখেও কাজ নাই আমি স্বস্তি পাইলেই বঁটি।