পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Գo3 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী সভার এই বিশেষত্বটুকু আমাদের কাছে সব চেয়ে ভালো লাগিতেছে। তাহার বিশেষ কারণও আছে। অনুচিত আইন এবং অন্যায় শাসন যদি কোনো মন্ত্রবলে ভারতবর্ষ হইতে একেবারে উঠিয়া যায়- আইনকৰ্তারা যদি সম্পূর্ণ অপক্ষপাত এবং অপরিসীম বিচক্ষণ ব্যক্তি হন, ও শাসনকর্তারা সকলেই অভ্রান্ত ন্যায়পর ও অন্তর্যামী হইয়া উঠেন। তবে দেশের অনেক দুঃখ দূর ও সুখ বৃদ্ধি হয় সন্দেহ নাই, কিন্তু তাহাতে আমাদের জাতিগত আভ্যন্তরিক অবস্থার অধিক কিছু পরিবর্তন হয় না। কেবল সুঅইন এবং সুশাসনে একটা জাত বঁধিয়া দিতে পারে না; তাহাতে রাজভক্তি এবং রাজনির্ভর বাড়াইয়া দিতে পারে, কিন্তু স্বজাতিভক্তি এবং আত্মনির্ভর তাহাতে বাড়ে না। অথচ সেই স্বজাতিবন্ধনই দেশের সমস্ত স্থায়ী মঙ্গলের মূল ভিত্তি। গবর্নমেন্টকে কোনাে প্রকার শিক্ষা দিবার পূর্বে স্বজাতি এবং স্বজাতির কর্তব্য কাহাকে বলে এই শিক্ষা দেশের লোককে দেওয়া বিশেষ আবশ্যক। এ শিক্ষা কেবল বই পড়াইয়া বা বক্তৃতা দিয়া হইতে পারে না, এ শিক্ষা কেবল প্রত্যক্ষ উদাহরণের দ্বারা হইয়া থাকে। । যখন একজন সামান্য চাষা দেখিতে পাইবে তাহাকে বিজাতি-কৃত অন্যায় হইতে রক্ষা করিবার জন্য নিঃস্বাৰ্থ স্বদেশীয় দল অগ্রসর হইতেছে, এমন-কি, পরের বিপদ দূর করিতে গিয়া অনাবশ্যক নিজের বিপদ আহবান করিয়া লইতেছে তখন সে অন্তরের সহিত অনুভব করিতে স্বজাতি কাহাকে বলে; তখন সে ক্রমে ক্ৰমে বুঝিতে পরিবে কেবল ভাই বন্ধু তাহার আপনি নহে, সমস্ত স্বজাতি তাহার। আপন। অনেক অন্যায় কেবল অবহেলাবশত ঘটিয়া থাকে। যখন জানা থাকে যে, দুর্বল ব্যক্তির অন্যায় প্রতিকারের কোনো ক্ষমতা নাই এবং অন্যায়কে সে আপন অদৃষ্টের লিখন জ্ঞান করিয়া তেমন সুতীব্রভাবে অনুভব করে না, তখন তাহার প্রতি সূক্ষ্মভাবে ন্যায়াচরণ করিতে তেমন একান্ত সতর্কতা জন্মে না। তখন তাহার হীনতা উপলব্ধি করিয়া তাহার সুখদুঃখের প্রতি কথঞ্চিৎ অবজ্ঞা জন্মিয়াই থাকে। কিন্তু যখন প্ৰত্যেক লোক তাহার স্বজাতির বলে বলী, তখন সে নিজেই অন্যায়ের প্রতি অসহিষ্ণু হইয়া উঠে এবং অন্যেও তাহার প্রতি নির্বিচারে অন্যায় করিতে সাহসী হয় না। কাদাকাটি করিয়া পরকে ন্যায়পর করিয়া তুলিবার চেষ্টা করা অপেক্ষা একত্র হইয়া নিজেকে বলশালী করিবার চেষ্টা করাই সংগত । রিলিফ সোসাইটি যখন ব্যক্তিবিশেষ অথবা সম্প্রদায় বিশেষকে অন্যায় হইতে রক্ষা করিতে অগ্রসর হইবে তখন স্বজাতির নিকটে স্বজাতির মূল্য অনেক বাড়াইয়া দিবে। ইহা অপেক্ষা মহৎ উদ্দেশ্য আর কী হইতে পারে? যে অন্যায় নিবারণের জন্য তঁাহারা চেষ্টা করিবেন। সে অন্যায় নিবারণে তাহারা সক্ষম না হইতে পারেন। কিন্তু সেই নিম্মল চেষ্টাতেও তাহারা যে ফল লাভ করিবেন, তাহা, কোনো বিশেষ অন্যায় প্ৰতিকারের অপেক্ষা অনেক গুরুতর। অন্যায় আইন রহিত করিয়া ভালো আইন প্ৰচলিত করা এবং ভারতবাসীদের স্বত্বাধিকার বিস্তার করার জন্য কনগ্রেস যে চেষ্টা করিতেছেন সে চেষ্টা পরম হিতকর সন্দেহ নাই; কিন্তু তাহার মুখ্য ফলের অপেক্ষা গীেণ ফল আমাদের নিকট অনেক বেশি মূল্যবান বলিয়া বোধ হয়। ভারতবষীয় ভিন্ন জাতির একত্র সম্মিলন এবং পরস্পর হৃদয় বিনিময়- ইহাই আমাদের পরম লাভ-ইংরাজের রাজসভায় আসন লাভ করার অপেক্ষা ইহা অনেক সহস্ৰগুণে শ্রেষ্ঠ। এবং এই নিকট সর্বাপেক্ষা আদরণীয় বলিয়া বোধ হয়। অবস্থাবিশেষে পরের অনুগ্রহ প্রার্থনা করিতে হয়,