পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট । Գ83: কিন্তু গ্ৰন্থকার কিছু বাড়াবাড়ি করিতে গিয়া হাস্যাম্পদ হইয়া পড়িয়াছেন- তিনি আরও বলিতেছেন সুশীতল ছায়া তুমি, নিদাঘ সন্তাপে, রম্য বৃক্ষতলে। বরষার জলে ৷ এই কথাগুলি পড়িয়া বাউলদের একটি পুরানো গান আমাদের মনে পড়িল ‘গীের আমার নাকের নাথ, কণ্ঠের কণ্ঠমালা গীের আমার কানের দুল, হাতের বাজু বালা gों-ठे-द्ध ट्-लेि ! ষষ্ঠ- “বায়ুঃ- এই কবিতাটি একটি প্ৰহেলিকা স্বরূপ। ইহার শীর্ষে বায়ু শব্দটি না থাকিলে ইহা একটি সুন্দর হেঁয়ালি হইতে পারিত। বায়ু বলিতেছে ‘আমিই রাগিণী, আমি ছয় রাগ, কামিনীর মুখে আমিই সোহাগ, বালকের বাণী অমৃতের ভাগ, মম রূপান্তর।’ ‘কামিনী সোহাগ’ বা “বালকের বাণী” যে বায়ুরই রূপান্তর তাহা একজন কবি অপেক্ষা একজন বৈজ্ঞানিক বুঝাইয়া দিলে ভালো হইত। এইজনাই কলি ক্যাম্পবেল বলিয়াছেন যে “কঠোর বিজ্ঞানশাস্ত্ৰ আসিয়া প্রকৃতির মুখ হইতে মোহিনী অবগুণ্ঠন তুলিয়া লয় এবং সকল বস্তুকেই পাঞ্চভৌতিক নিয়মের অধীন করিতে চাহে।” -আমরা বিজ্ঞানের অবমাননা করিতে চাহি না- কিন্তু কবির কল্পনা হইতে বিজ্ঞানের তন্ন তন্ন দৃষ্টির স্বাতন্ত্রা রাখা উচিত। কিন্তু বায়ুর আরও বক্তব্য আছে- সে বলিতেছে মহীর ভিতর।’ এত কথা— আরও বিস্তুর-বিস্তর কথা পর্যায়ক্রমে না বলিয়া বায়ু তো এক কথা বলিতে পারিাত- ‘আমি সংসারের জীবন- সংসারে যাহা-কিছু আছে আমি না থাকিলে কিছুই থাকিত না।” বায়ু অতিশয় বাচাল, তাই আরও বলিতেছে “উড়াই খগে গগনে-” গ্রন্থকার মনে করিলেন যে বায়ুর এ কথা সহজে কেহ বিশ্বাস করিবে না, অথবা বুঝিতে পরিবে না— তিনি সেইজন্য পাঠকদের প্রতি অনুগ্রহ করিয়া নীচে টীকার ছলে বলিয়াছেনvide Reign of Law, by Duke of Argyll, -chap VII. Flight of Birds." RS গ্রন্থকার এ স্থলে টীকা না করিয়া বায়ু কেমন করিয়া “সাহিত্য বিজ্ঞান স্বামী’ হইল তাহা বুঝাইয়া দিলে আমরা প্রকৃতপক্ষে উপকৃত হইতাম। সপ্তম- ‘আকবর সাহেব খোষ রোজ” এ কবিতাটি কতক সুশ্রাব্য হইয়াছে- কিন্তু ইহাতে আবার কল্পনার যতদূর ব্যভিচার হইয়াছে এমন আর কুত্ৰাপি হয় নাই। একটি ক্ষত্র-কুলনারী আকবর শার খোষ রোজ দেখিতে আসিয়াছিলেন। তিনি “খোষরোজের’ অশ্লীল ব্যাপার দেখিয়া ঘূণায় ও ক্ৰোধে সে স্থল হইতে পলাইতে চেষ্টা করিলেন। কিন্তু পথ না দেখিতে পাওয়ায় যখন তিনি কাতর স্বরে রোদন করিতেছেন তখন আকবর শা। সেইখানে আসিয়া পড়িল এবং রমণীর রূপলাবণ্যে বিমোহিত হইয়া রমণীর ধর্মনাশ কামনায় সবলে তাঁহাকে ধরিয়া টানিতে লাগিলেনতখন রমণী নিরুপায় হইয়া রোদন করিতে লাগিলেন। ।