পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট ዓ8ፄ করিয়াই রাজ্যমধ্যে এই পাণ্ডুলিপি প্রচার করেন। কয়েকদিনের মধ্যেই পাণ্ডুলিপি পুরা আইনে • পরিণত হইয়া গিয়াছে। 4. ইহার- এই কাপড় ও সূতার শুষ্ক-আইনের এক অংশে পুরাতনের ও পরিবর্জিািতর পুনঃপ্রচার; অপর অংশ সম্পূর্ণ অভিনব, তাহা একটি স্বতন্ত্র ও সাংঘাতিক আইন। শেষোক্ত প্ৰথমেরই অবশ্যম্ভাবী ফােল; উভয়ের একটিও কিন্তু অযাচিত নয়, আকস্মিকও নয়। অনেক সময়ে আকাশ হইতে আইন আসিয়া অকস্মাৎ আমাদের মাথার উপর পড়ে। আইনের আবশ্যকতা লোকের ইষ্টানিক্টের প্রতি অপরিসীম উপেক্ষা করিয়া গবর্নমেন্ট দেশীয় সংবাদপত্র ও সভাসমিতির অজ্ঞাতে ও অনভিমতে নূতন নূতন আইন-কানুন করিয়া থাকেন। বলা অনাবশ্যক, ইহা অন্যায়, যথেচ্ছাচার, যারপরনাই দূষণীয়। কিন্তু উপস্থিত আইনের অনুষ্ঠান সম্বন্ধে গবর্নমেন্টকে এ দোষ দেওয়া যাইতে পারে না। যে কারণেই হােক, গবর্নমেন্ট আত্ম-ইচ্ছা-প্রণোদিত হইয়া অযাচিতভাবে ও অকস্মাৎ এ আইনের অবতারণা করেন নাই। প্ৰত্যুত এ দেশে যাহা ও র্যাহারা সাধারণ অভিমতের অধিনেতা বলিয়া অভিহিত ও আত্মপরিচয় দিয়া থাকেন, তাহার ও তাহাদের তুমুল আন্দোলনে ও অস্বাভাবিক আবেদনে গবর্নমেন্ট এই আইন উপস্থিত করিবার অবসর পাইয়াছেন, উপস্থিত করিতে অগত্যা বাধ্য হইয়াছেন। নহিলে এ আইন সম্ভবত হইত না; সহজে হইবার সুদূর সম্ভাবনা মাত্র ছিল না। গবর্নমেন্ট এ-দেশীয় লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিয়া যে এ আইন করিতেন না, তাহা নহে; এ-দেশীয় বস্ত্ৰশিল্প অচিরাৎ উৎসক্সে যাইবে বা কাপড়-সূতার কল শৈশবেই স্বৰ্গারোহণ করিবে বলিয়া যে গবর্নমেন্ট কিছুমাত্র শঙ্কিত হইতেন তাহাও নহে; পরস্তু এ-দেশীয়দিগের পরিধেয়ের জন্যও যে পরম উৎকণ্ঠিত হইয়া গবর্নমেন্ট এই আইন করিতেন না, এমনও বলি না। এ দেশের লোক অনাহার অর্ধহারে মরুক আর উলঙ্গ অবস্থায় থাকুক বা প্রদেশীয় শিল্প-বাণিজ্য পঞ্চভূতে বিলীন হউক, তাহাতে এই গুরুগম্ভীর গবর্নমেন্টের অবিচলিত ঔদাসীন্যের এক বিন্দুও উদবেগ উপস্থিত হইবার আন্দীে কারণভাব। কিন্তু, তথাচ এই আইন হইত না। হইত না সম্পূর্ণ অন্য কারণে। সে কারণ, সকলেই জানেন, মাঞ্চিস্টারের মহীয়সী শক্তি, লাঙ্কাশায়ারের বাণিজ্যস্বার্থ। কিন্তু, শুনিতে পাই, মাঞ্চিস্টার, লাঙ্কাশায়রা আমাদের শত্রু। স্বীকারই করি। উহারা আমাদের পরম শত্ৰু। শত্রুর স্বাৰ্থ সৰ্বথা হাননীয় শুক্রাদির নীতি অনুসারে ইহাও আসুন, স্বীকার করি। কিন্তু, এই শত্রুদিগের স্বার্থের অনুরোধে এ-দেশীয় গরিব-দুঃখীরা একটু সুলভ বস্ত্ৰ পরিধান করিতে পাইত; পরন্তু, সেই স্বার্থেরই অনুরোধে, এ দেশের আধুনিক অনুষ্ঠান কলের কাপড় সূতার উপর এত দিন কোনো শুস্ক সংস্থাপিত হয় নাই, ইহাও অগত্যা সকলেই স্বীকার করিতে বাধ্য। এক কথায়, শত্রুর স্বার্থে সাধারণত এ দেশেরই সুবিধা ছিল, সরল ও সত্য কথা বলিতে হইলে, অপেক্ষাকৃত সস্তা বস্ত্ৰে সুখও কিছু না হইয়াছিল এমন নয়। কিন্তু, তথাচ শত্ৰু শত্ৰু ভিন্ন মিত্র নহে। স্বদেশহিতৈষী সম্প্রদায়ের শক্রহনন-স্পহাসমূহ বলবতী; তবে সে শক্তির অত্যন্ত অভাব বটে। কিন্তু, এ সম্বন্ধে শত্ৰুহননের এক মহা শুভক্ষণ উপস্থিত হইয়াছিল। কী-জানি-কোনো এক অজ্ঞাত অভিসন্ধি-সূত্রে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান বণিকসম্প্রদায় মাঞ্চিস্টারের ডাকিয়াছিলেন। সাহেবি ডাক; সামান্য নয়, অসুমার সম্রামেরই কথা। ডাক পড়িবা মাত্র পেট্রিয়টেরা, পূর্বাপর না ভাবিয়া, অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করিয়া, স্বদেশের প্রকৃত, অতি প্ৰত্যক্ষ ও অব্যবহিত, অস্থিমজ্জাময় শরীরী স্বাৰ্থ আদীে উপেক্ষা করিয়া, তাহার একটা মরীচিকা-কঙ্কালের কল্পনায়, সাহেবদের পদ-প্রান্তে দলে দলে যাইয়া হাজির হন; বিদেশীয় ও বিলাতি আমদানি বািন্ত্র এবং সূত্রের উপর শুষ্ক সংস্থাপনের জন্য, সজোরে ও সমস্বরে হল্লা করিতে আরম্ভ করেন। বিসদৃশ রাজনৈতিক আওয়াজ উৎপন্ন ও উৎসারিত করে। তাঁহারই ফল আমাদের আদ্যকার আলোচ্য এই আইন। ইতর কথায়, ইহাকেই বলে আপন নাসিক কৰ্তন করিয়া পরের