পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিশিষ্ট ዓ¢x9 কেহ রাখেন না? চিকণ চটকুদার কালপোড়ে পরিয়া তাহার উপর অস্ত্ৰ ইক্তিরির অতি সূক্ষ্ম উড়ানি উড়াইয়া তুমি যে দেশী বন্ত্রের বাহার দেখাও সূতা কিন্তু তাহার বিলাতি। বিলাতি সুতা ব্যতীত, তোমার দেশী বন্ত্রের বাবুগরি গলিয়া যায়; দেশী তাতির তাত শিকায় উঠে। বোম্বায়ের কলে জোর ২৪ নম্বরের সূত্র অবধি জন্মে, তাহার অধিক সূক্ষ্ম সূত্র জন্মে না; কিন্তু তোমার বাবুয়ানার উপকরণ ও লজ্জানিবারণের (!) জন্য বস্ত্রটা ৮০ নম্বরেরও অতিরিক্ত সূক্ষ্ম সূত্রে প্রস্তুত হইলে ভালো হয়; কিন্তু, সে-সব সূত্র বিলাত হইতেই আসিয়া থাকে। দেশী ভঁতি বিলাতি সূত্রের দ্বারাই বস্ত্ৰ বোনে। অতএব বিলাতি সূত্রে শুষ্ক বসিয়া দেশীয় বস্ত্রের শিল্পোন্নতি কোন ঐন্দ্রজালিক মন্ত্রবলে হইবে তাহা আমরা আন্দীে বুঝিতে অক্ষম। ট্যারিফ শুঙ্কে বিলাতি বস্ত্রের মূল্যাধিক্যের অনুপাতে দেশী বন্ত্রের মূল্যও দারুণ বৃদ্ধি হইবে; কেননা বিলাতি সূত্রে দেশী বস্ত্ৰ নির্মিত; সূত্রের মূল্য বৃদ্ধি হইলেই বন্ত্রের মূল্য বৃদ্ধি হয়। অতএব এরূপ স্থলে লোকে বিলাতি কাপড় (তাহার মূল্য আমদানি শুঙ্কে এখনকার অপেক্ষা বাড়িলেও) ছাড়িয়া তদপেক্ষা চতুগুণ অধিক মূল্যের দেশী বস্ত্ৰ কিনিতে চাহিবে কেন? আর পেট্রিয়টিজমের অনুরোধে তাহা চাহিলেও তত পয়সা পাইবে কোথায়? পেট্রিয়টিক স্পিরিট তো আর উলঙ্গ হইয়া থাকা চলে না। বলিবে, “বোম্বাই কলের কাপড় পরিবে। বঙ্গদেশেও কাপড়ের কল হইতেছে।” বঙ্গীয় কলের বস্ত্র আজও বাহির হয় নাই; হইলেও তাহা এবং বোম্বাই কলের বািন্ত্র, বিলাতি বস্ত্রের অপেক্ষা এক কাক্রিও সন্তা হইবে না; বরং এক আনা বেশিই হইবে। কারণ আকাঙিক্ষত আমদানি-কারের অনুকম্পায় সে কাপড়ের সূতার উপরেও এক্সাইস শুষ্ক বসিয়াছে। এক্সাইস শুষ্ক না বসিলেও সম্ভবত তাহা বিলাতি কাপড়ের সহিত প্রতিযোগিতা করিতে সমর্থ হইত না। পরন্তু দেশী কলে কাপড় অপেক্ষাকৃত অতি অল্পই জন্মে, আর সে কাপড় এত অধিক মোটা যে এই গ্ৰীষ্মপ্ৰধান দেশে তাহা সর্বদা ব্যবহারেরও যোগ্য নহে। আমরা প্রত্যক্ষ ঘটনা ও সংসারের প্রতিদৈনিক সম্ভাবনাকেই সম্মুখে রাখিয়া এই কথাগুলি বলিতেছি। উদ্ভট “অঘটনপটিয়স” পেট্রিয়টিজমের কথা অবশ্য স্বতন্ত্র বটে। সে কথায় বড়ো বড়ো বক্তৃতা ও লম্বা-চওড়া প্ৰবন্ধ প্রস্তুতই হইতে পারে; সংসারের আর কোনো কাৰ্যই তদারা হয় না; বিশেষত উদরের অন্ন ও অঙ্গের আবরণের সহিত তাহার আকাশ-পাতল অপেক্ষাও সুদূর সম্বন্ধ। তবেই এখন দেখা যাইতেছে যে, আমদানিকারীদের অনর্থক আবদারে বস্ত্ৰাদির উপর আমদানি-কর বসিয়া আমাদের ইতঃস্ৰষ্টস্ততে নষ্ট হইয়াছে। বিলাতি বস্ত্ৰ মহার্ঘ হইল, বোম্বাই কলের কাপড়ের মূল্য বাড়িল; পরন্তু দেশী কাপড়ও অগ্নিমূল্য হইল। অতএব এই আমদানি শুল্কে দেশটা রাতারাতি উন্নতির উদ্ধৰ্ব্বমার্গে দশ যোজন ঠেলিয়া উঠিয়াছে, পাপমুখে এ কথা কীরূপে বলিব ? বলিবে আর যত কিছু না হউক মাঞ্চিস্টার বস্ত্রাবণিকের তো অনিষ্ট হইল। তা বটে! কিন্তু প্রথম জিজ্ঞাস্য মাঞ্চিস্টারের অনিষ্ট চেষ্টা করা পুরাতন নীতিশাস্ত্রানুসারে অন্যায়; কিন্তু ইষ্ট না বা হইবে কেন? তাহার দশ জোড়া কাপড় যেখানে বিক্রয় হইত, সেখানে না-হয় এখন ছয় জোড়া বিক্রয় হইবে; ইহার অধিক তো আর কিছু নয়! কিন্তু তাহার অবশিষ্ট ও অবিকৃত সেই চারি জোড়া কাপড় যাহারা কিনিয়া এত দিন পরিতে পারিত, তাহারা অতঃপর যে একেবারেই কাপড় পরিতে পরিবে না; এই মাঘের শীতে জানু ভানু কৃষাণু ব্যতীত অনন্যেপায় হইবে, সে অনিষ্ট কাহার ? মাঞ্চিস্টারের অথবা তুমি যে দেশের ভক্ত বলিয়া ভড়ং দেখাইয়া থাক, সেই দেশেরই? তৃতীয় প্রশ্ন, প্রকৃত প্রস্তাবে মাঞ্চিস্টারের অপরাধই বা কী যে, তাহার পশ্চাতে লাগিয়াছিলে? স্বদেশের প্রাচীন সভ্যতা আমাদের স্বতঃশিরোধাৰ্য, কিন্তু, তাহার অযথাৰ্থত মহিমা কীর্তন করাকে আমরা তাহার প্রকৃত মর্যাদাটিকে মাটি করাই মনে করি। তুমি বড়ায়ের বোকামি করিয়া আৰ্যমির যতই অতিরিক্ত আম্পর্ধ করা-না কেন, ইহা সকলেই জানে যে, সে কালের চরকার আমলে দেশের আদরিদ্রদের মধ্যেও অতি অল্প লোকে দুইখানা বস্ত্ৰ একত্রে ব্যবহার S 8tr