পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

offs ዒ¢¢ বক্সের আমদানি-কার এবং মাঞ্চিস্টারের মন রাখিবার জন্য এ দেশে এ আইস কর বসাইয়াছেনফল হইয়াছে উভয় পক্ষেরই অসন্তোষ। পরন্তু বাস্ত্ৰক্রেতা দরিদ্র প্রজা-সাধারণেরও তিনি সন্তোষভাজন হইতে পারেন নাই। কারণ কাপড়ের কর তাহাদিগেরই দিতে হইবে। - এ স্থলে কথা উঠিতে পারে যে, গবর্নমেন্টের অর্থের অনটন। বজোট আয় অপেক্ষা ব্যয়ের অঙ্ক বিষম বেশি। ব্যয়ের অঙ্কের সহিত আয়ের অঙ্ক যে রাপেই হউক সমান করিতে হইত। ছাড়িতেন না। অতএব ট্যারিফট্যাক্স হইয়া বরং ঠেকাইয়াছে। নহিলে নিশ্চয়ই আর-একটা নেহাত সাংঘাতিক শুষ্ক সংস্থাপিত হইয়া দেশমধ্যে মহা অনর্থ ঘটাইত। * আমরা এরূপ যুক্তি আপাদমস্তক অনুমোদন করিতে পারি না। বাজেটের দুইদিকে একই অঙ্ক সন্নিবেশের জন্য গবর্নমেন্ট গহিত উপায়ে আয়ের অঙ্ক না বাড়াইয়া উচিত উপায়ে ব্যয়ের অঙ্ক কমাইয়া আয়ের অঙ্কের অনুপাতে আনিতে পারিতেন। তজন্য আন্দোলন হইতেছিল। সেই আন্দোলন অধিকতর ব্যাপ্ত ও বলশালী করা উচিত ছিল। ন্যাশনাল কংগ্রেস গবর্নমেন্টের অন্যায্য ও অতিরিক্ত ব্যয় কমাইবার জন্য বহুকাল আন্দোলন করিতেছেন। সে আন্দোলন একেবারেই যে নিৰ্ম্মফল হইয়াছে ও হইবে এমনও নয়! এ সম্বন্ধে অন্তত একটা কমিশনেরও আদেশ হইয়াছে। সে কমিশনের কার্য আরম্ভ ও শেষ না হওয়া পৰ্যন্ত গবর্নমেন্টকে এই উৎকট কর বসাইবার অবসর দেওয়া ও অনুরোধ করা প্ৰজানীতির উচিত হয় নাই। গবর্নমেন্ট স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া বস্ত্ৰ ব্যতীত অন্যান্য দ্রব্যের উপর আমদানি ট্যাক্স বসাইয়াছিলেন। তাহারই প্ৰাণপণ প্রতিবাদ হওয়া আবশ্যক ছিল; গবর্নমেন্ট যে দ্রব্যের উপর ট্যাক্স বসাইতে উৎসুক ছিলেন না, অস্বাভাবিক আন্দোলন দ্বারা তাহাতে তাহাকে প্রবৃত্ত করা প্রকৃত প্ৰজানীতির অনুরূপ কার্য হয় নাই। পরন্তু, এই কাপড়ের কর আর কোনো একটা কুৎসিত কর সংস্থাপন করিলে এবং প্ৰজাপক্ষ হইতে অধ্যবসায়ের সহিত তাহাতে আপত্তি হইলে, সে কর নিশ্চয়ই চিরকাল টিকিত না। ফলত আবদার করিয়া একটা এত বড়ো করিভার গ্রহণ করা নেহাত নির্বোধের কাজনিজের নাসিক ছেদনের মতোই হইয়াছে। কর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষই হউক কর ভিন্ন আর কিছুই নহে। পরোক্ষ হওয়াতে করের প্রচণ্ডতা কিছুই কমে না; তাহাতে করিয়া কেবল তাহার কপটতা ও প্রবঞ্চনাই সূচিত হয়। এ দেশে ইংরাজের আমলে বস্ত্রকর বহুকালই ছিল না। খৃ. ১৮৫৯ সালে এই কর প্রবর্তিত হয়। আমদানি কাপড় ও সূতার উপর শতকরা পাঁচ টাকা হারে শুষ্ক বসে। এবং সেই হিসাবে ওই শুষ্ক পাঁচ বৎসর পর্যন্ত চলে। ১৮৬৪ সালের ২৩ আইনে উহা পাঁচ টাকা হইতে শতকরা সাড়ে সাত টাকায় উঠে। ১০/১১ বৎসর পরে ১৮৭৫ সালের ১৬ আইনে উহা পুনঃ পাঁচ টাকায় পরিণত হয়। ১৮৮২ সালে এই শুষ্ক একেবারেই উঠিয়া যায়। ১৮৮২ সালের ১১ আইনে ট্যারিফ ট্যাক্স সম্পূর্ণরূপে রহিত হইয়াছিল এবং অনেকানেক রপ্তানি দ্রব্যের মাশুলও উঠিয়া झिछिछन । আজ আবার বারো বৎসর পরে পুনঃ বস্ত্রকর আসিয়া উপস্থিত। বস্তু যখন নিষ্কর ছিল তখনই সব লোকে বন্ত্রের ব্যয় কুলইয়া উঠিতে পারিত না। দেশ এতই দরিদ্র যে, মার্কিস্টারের মহা সুলভ বস্ত্ৰও সকলে কিনিতে পারে নাই। এই প্রবন্ধের লেখক দেশমধ্যে এমন অনেক পল্পী ও পরগনা দেখিয়াছে যেখানে বারো আনা রকম লোক নির্বািন্ত্র। কৃষাণ ও মজুর শ্রেণীর পরিধেয় কেবল অর্ধহস্ত পরিমিত একটি লঙ্গটি মাত্র। শতগ্রহি বস্ত্ৰ' প্রবাদবাক্য; কিন্তু সহস্রাধিক গ্রস্থিযুক্ত জীর্ণ বন্ত্রে ললনা-অঙ্গের লজ্জা আবৃত বা অনাবৃত হইতেও অনেক স্থলে দেখিয়াছি। বন্ত্রের নিষ্কর সময়েও অনেক স্থলে অবস্থা এই; অতএব বিস্ত্রের উপর কর বসিয়া তাহার মূল্য কিঞ্চিৎমাত্র বাড়িলেও ওই অবস্থা কীরাপ হইবে তাহা কেবল অনুভবনীয়। অন্ন এবং বস্ত্ৰ এই দুইটি দ্রব্য মনুষ্যজীবনে এবং মনুষ্যসমাজে একান্ত অপরিহার্য আবশ্যকীয়; এই দুই সামগ্ৰী যত সুলভ ও