পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳSO 8. , ‘পারিবারিক দাসত্ব’ প্ৰবন্ধটি সম্পর্কে প্রথম দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়া সজনীকান্ত দাস লিখিয়াছিলেন, “য়ুরোপ যাত্রী কোন বঙ্গীর যুবকের পত্র’ ধারাবাহিক ভাবে “ভারতী’তে বাহির হয়। শেষের দিকে কোনও কোনও উগ্ৰ মতামতের দরুন সম্পাদক দ্বিজেন্দ্রনাথ লেখক রবীন্দ্রনাথকে পাদটীকায় কঠিন সমালোচনা করেন। এই প্ৰবন্ধটি সম্ভবত জ্যেষ্ঠেকনিষ্ঠে মতান্তরের ফল। সদ্য বিলাতফেরত রবীন্দ্রনাথ এদেশীয় সমাজ-ব্যবস্থাকে আক্রমণ করিতে চাহিয়াছেন। দ্বিজেন্দ্ৰনাথ এই প্ৰবন্ধের পরেও সম্পাদকীয় প্রতিবাদ-মন্তব্য যোগ করেন।” ইংলন্ড হইতে লেখা একটি পত্রে ভারতী, পৌষ ১২৮৬, পৃ. ৩৯৪-৪১১, যুরোপপ্রবাসীর পত্র (৯)] রবীন্দ্রনাথ জ্যেষ্ঠ-কনিষ্ঠ ও প্রভু-ভৃত্য সম্পর্ক সম্বন্ধে তাহার তৎকালীন ধারণা ব্যক্ত করিতে গিয়া লিখিয়াছিলেন, “আমরা পারিবারিক দাসত্বকে দাসত্ব নাম দিই নে” এবং পত্রটির উপরে দীর্ঘ সম্পাদকীয় টীকা মুদ্রিত হয়- কিন্তু রবীন্দ্রনাথের প্রত্যুত্তর প্রকাশিত হয় নাই। বর্তমান প্ৰবন্ধটিই সেই প্ৰত্যুত্তর। ইহার উত্তরে দ্বিজেন্দ্রনাথ যে মন্তব্য করেন, তাহা নিম্নে উদধূত হইলপূর্বকালে চিকিৎসকেরা পুথির বচন অভ্রান্ত মনে করিয়া রোগ কেবল নয় রোগের আধার পর্যন্ত— রোগী পর্যন্ত বিনাশ করিতে ক্রটি করিতেন না, লোকের যখন চক্ষু ফুটিতে লাগিল তখন হাতুড়িয়ার । দল ক্রমে ক্রমে পসার করিতে আরম্ভ করিল, অব্যৰ্থ ঔষধির বিজ্ঞাপন সংবাদপত্রের আপাদমস্তক । জুড়িয়া আশ্বাস বাক্যের ঘটায় রোগীর অর্ধেক রোগ নিবারণ করিতে লাগিল, উহারা ইহাদিগকে । রোগ উড়াইয়া দেওয়া তেমন সহজ ব্যাপার নহে। সমাজ-সংক্রান্ত রোগেরও ওইরূপ দুই দল চিকিৎসক দেখিতে পাওয়া যায়, এক দল চিকিৎসক পুরাতন রীতিনীতিকে অব্যৰ্থ ঔষধি মনে করেন আর-এক দল আপনাদের নব নব সিদ্ধান্তকে অব্যৰ্থ মহীেষধি মনে করেন। ফরাসিস বিদ্রোহে দুই দলেরই বিশিষ্টরূপে বল পরীক্ষা হইয়া গিয়াছে কিন্তু এখনও তাহার জের চলিতেছেতাহার সাক্ষী- সম্প্রতি হাতুড়িয়ার হাতে পড়িয়া রুশিয়াকে পতিহীন হইতে হইয়াছে। দুই দলকেই লক্ষ্য করিয়া বলা যাইতে পারে সর্বমত্যন্ত গহিতং। বর্তমান প্রস্তাব উপলক্ষে আমরা তাহাঁই বলিতে বাধ্য হইতেছি। পারিবারিক দাসত্ব কথাটাই আমাদের কেমন কেমন ঠেকে- তাহাকে ঠেলিয়া ফেলিয়া পারিবারিক বন্ধন কথাটাই আমাদের মনের সমক্ষে বলপূর্বক দণ্ডায়মান হয়- কিন্তু তাহা বলিয়া বলকে প্রশ্রয় দেওয়া আমাদের অভিপ্রায় নহে। দুই কথাকেই যুক্তির তুলাদণ্ডে তীেল করিয়া যাহা দাঁড়াইবে । তাহাঁই আমরা শিরোধাৰ্য করিতে প্ৰস্তুত। দাসত্ব শব্দের ভাবটা কিছু গোলমেলে; ও কথা সম্বন্ধে নানারূপ প্রশ্ন উঠিতে পারে; ভূতপূর্ব আমেরিকার প্রভুদের নিকট কাকীদের আজ্ঞাধীনতাকে যেরূপ দাসত্ব বলিতে পারা যায়, সেনাপতির নিকট সৈন্যদিগের আজ্ঞাধীনতাকে সেরূপ দাসত্ব বলিতে পারা যায় কি না? প্রভুর নিকট একজন কিঙ্করের আজ্ঞাকারিতাকে যেমন দাসত্ব বলিতে পারা যায়- পিতামাতার নিকট পুত্রের আজ্ঞাকারিতাকে সেরাপ দাসত্ব বলিতে পারা যায় কি না ? দাসত্ব কথাটা শুনিলেই মনে হয় যে, তাহার সহিত কাপুরুষত্ব জড়ানো আছে, কিন্তু ছোটাে ভাই যদি দাদা যাহা বলে তাহা শুনে তাহা হইলে তাহাকে কি কাপুরুষ বলিয়া মনে হয়- কিংবা সৈন্য যদি সেনাপতির কথা শুনে তাহাকে কি কাপুরুষ বলিয়া মনে হয়, তাহা দূরে থাকুক রাম অপেক্ষা লক্ষ্মণকে আরও বেশি বীরপুরুষ বলিয়া মনে হয়। লেখকের লেখার ধরন দেখিলে হঠাৎ লোকের যাহা মনে হইতে পারে তাহা লক্ষ করিয়া আমরা উপরি-উক্ত কথাগুলি বলিলাম- কিন্তু লেখক বোধ হয় রামের নিকট লক্ষ্মণের আজ্ঞাধীনতাকে দাসত্ব বলিয়া দোষ দিতে কখনোই প্ৰবৃত্ত হইবেন। না। কৈকেয়ীর মতন গুরুজনের নিকট রামের দাসত্বকেই লেখক দাসত্ব বলিয়া দোষারোপ করেন, কিন্তু তাহ হইলেও দাসত্ব শব্দটা শুনিবা মাত্র কাপুরুষত্ত্বের ভাব সহসা যাহা আমাদের মনে উদয় হয়, সে ভাব দূরে থাকুক তাহার ঠিক বিপরীত ভােবই আমাদের মনকে ভক্তি ও বিস্ময় -রািস