পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূরবী যা হােক তবু যা পারি। তাই জুড়িব কথা ছন্দেতে, কবিত্ব-ভূত আবার এসে চাপুক আমার স্কন্ধেতে । শিলঙগিরির বর্ণনা চাও ? আচ্ছা না হয় তাই হবে, উচ্চাদরের কাব্যকলা না। যদি হয় নাই হবেমিল বঁাচাব, মেনে যাব মাত্রা দেবার বিধান তো ; তার বেশি আর করলে আশা ঠকবে এবার নিতান্ত । গমি যখন ছুটিল না। আর পাখার হাওয়ায় শরবতে, ঠাণ্ডা হতে দৌড়ে এলুম। শিলঙ-নামক পর্বতে । মেঘ-বিছানো শৈলমালা গহন-ছায়া অরণ্যে । ক্লান্ত জনে ডাক দিয়ে কয়, “ কোলে আমার শরণ নে ৷” বুকের মাঝে কয় কথা যে সোহাগ-ঝরা সংগীতে । বাতাস কেবল ঘুরে বেড়ায় পাইন বনের পল্লবে, নিশ্বাসে তার বিষ নাশে আর অবল মানুষ বল লভে । পাথর-কাটা পথ চলেছে বঁাকে বঁাকে পাক দিয়ে, নতুন নতুন শোভার চমক দেয় দেখা তার ফাক দিয়ে । দাৰ্জিলিঙের তুলনাতে ঠাণ্ড হেথায় কম হবে, । একটা খন্দর চাদর হলেই শীত-ভাঙানো সম্ভবে । চেরাপুঞ্জি কাছেই বটে, নামজাদা তার বৃষ্টিপাত ; এখানে খুব লাগিল ভালো গাছের ফাকে চন্দ্ৰোদয়, আর ভালো এই হাওয়ায় যখন পাইন-পাতার গন্ধ ব্যয় । বেশ আছি— এই বনে বনে যখন—তখন ফুল তুলি ; নাম-না-জানা পাখি নাচে, শিস দিয়ে যায় বুলবুলি । ভালো লাগে দুপুর বেলায় মন্দমধুর ঠাণ্ডাটি, ভোলায় রে মন দেবদারু-বন গিরি দেবের পাণ্ডাটি । ভালো লাগে আলোছায়ার নানারকম আঁকি কাটা, দিব্যি দেখায় শৈলবুকে শস্য-খেতের থাক কাটা । ভালো লাগে রৌদ্র যখন পড়ে মেঘের ফন্দিতে, রবির সাথে ইন্দ্ৰ মেলেন নীল-সোনালির সন্ধিতে । নয় ভালো এই গুখাদলের কুচকাওয়াজের কাণ্ডটা, তা ছাড়া ওই ব্যাঘ্ৰপাইপ নামক বাদ্যভাণ্ডটা । ঘন ঘন বাজায় শিঙা— আকাশ করে সরগরম, গুলিগোলার ধড়ধড়ানি, বুকের মধ্যে থারথারম। আর ভালো নয় মোটরগাড়ির ঘোর বেসুরো ইহাক দেওয়া, নিরপরাধ পদাতিকের সর্বদেহে পাক দেওয়া । তা ছাড়া সব পিসু মাছি কাশি হাচি ইত্যাদি, কখনো বা খাওয়ার দোষে রুখে দাড়ায় পিত্তাদি, এমনতরো ছোটোখাটো একটা কিংবা অধটা যৎসামান্য উপদ্রবের নাই বা দিলাম ফর্দিটা । S ON)