পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূরবী বন্দী হতে চাই যে কোমল ওই বাহুবন্ধনে, তিন বছরের প্ৰিয়ার আমার নাই সে খেয়াল মনে । সোনার প্রভাত দিয়েছে ওর সর্বদেহ ছুয়ে শিউলি ফুলের তিন শরতের পরশ দিয়ে ধুয়ে । বুঝতে নারি আমার বেলায় কেন টানাটানি । ক্ষয় নাহি যার সেই সুধা নয় দিত একটুখানি । তবু ভাবি বিধি আমায় নিতান্ত নয় বাম, মাঝে মাঝে দেয় সে দেখা তারি কি কম দাম ? পরশ না পাই, হরফ পাব চোখের চাওয়া চেয়ে— রূপের ঝোরা বইবে আমার বুকের পাহাড় বেয়ে । কবি ব’লে লোকসমাজে আছে তো মোর ঠাই, তিন বছরের প্রিয়ার কাছে কবির আদর নাই । জানে না যে, ছন্দে আমার পাতি নাচের ফাদ, দোলার টানে বঁাধন মানে দূর আকাশের চাদ । পলাতকার দল যত-সব দখিন-হাওয়ার চেলা আপনি তারা বশ মেনে যায় আমার গানের বেলা । ছোট্টো ওরই হৃদয়খনি দেয় না। শুধু ধরা, ঝগড় বোকার বরণমালা গাথে স্বয়ম্বরা । যখন দেখি এমন বুদ্ধি, এমন তাহার রুচি, আমারে ওর পছন্দ নয় যায় সে লজা ঘুচি । এমন দিনও আসবে আমার, আছি সে পথ চেয়ে, তিন বছরের প্ৰিয়া হবেন বিশ বছরের মেয়ে । স্বৰ্গ-ভোলা পারিজাতের গান্ধখানি এসে খ্যাপা হাওয়ায় বুকের ভিতর ফিরবে ভেসে ভেসে । কথায় যারে যায় না। ধরা এমন আভাস যত মমরিবে বাদল-রাতের রিমিঝিমির মতো । সৃষ্টিছাড়া ব্যথা যত, নাই যাহাদের বাসা, ঘুরে ঘুরে গানের সুরে খুঁজবে আপন ভাষা । বুয়েনোস এয়ারিস 8 ডিসেম্বর ১৯২৪ দেখবে তখন ঝগড় বােকা কী করতে বা পারে, শেষকালে সেই আসতে হবেই এই কবিটির দ্বারে । Տ Գ Հ)